ভোগান্তি: বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিন জমা জলের জেরে স্তব্ধ হাওড়ার শিল্পাঞ্চল। বন্ধ রয়েছে অধিকাংশ কারখানা। হাওড়ার নোনাপাড়ায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
এক দিকে নিম্নচাপের জেরে গত তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে ভাসছে শিল্পনগরী হাওড়া। অন্য দিকে, লোহার বাজারে তীব্র মন্দার জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে একের পর এক কারখানা। সেই সঙ্গে রয়েছে আর জি কর-কাণ্ডের মতো মর্মান্তিক ঘটনা। তার জেরে মানুষ কতটা উৎসবে ফিরতে পারবেন, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। ফলে এই ত্র্যহস্পর্শের জেরে এ বার বিশ্বকর্মা পুজো নিয়ে অন্য বারের মতো উদ্যম চোখে পড়ছে না হাওড়ার বহু কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে। বলাযায়, নেহাৎ নিয়মরক্ষার কারণেই খানিকটা নমো নমো করে এ বারের বিশ্বকর্মা পুজোটা সারতে চাইছেন তাঁরা।
হাওড়ার বেনারস রোড, বালিটিকুরি, দাশনগর, কামারডাঙা, কদমতলা, বেলিলিয়াস রোড, টিকিয়াপাড়া-সহ হাওড়ার অলিগলিতে থাকা ছোট-বড় লোহার কারখানা নিয়েই ছিল হাওড়ার মূল শিল্পাঞ্চল। এক সময়ে এই শিল্পাঞ্চলে কারখানার সংখ্যা ছিল ১২-১৪ হাজার। ধীরে ধীরে লোহার বাজারে দাম ওঠা-পড়া নিয়ে মন্দার জেরে ক্রমে বন্ধ হয়ে যায় একাধিক কারখানা। অথচ এই সমস্ত কারখানার লেদ মেশিন থেকে তৈরি করা যন্ত্রাংশের একদা বিশ্বজোড়া খ্যাতি ছিল। খ্যাতি ছিল ঢালাই শিল্পেরও। সেই সময়ে ওই কারখানাগুলিতে বিশ্বকর্মা পুজোর জাঁকজমক আসন্ন দুর্গাপুজোর বার্তাই বয়ে আনত। ওই দিন থেকে শুরু হত পুজোর কেনাকাটা, খাওয়াদাওয়া। শ্রমিকদের জন্য এলাহি খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা হত। কিন্তু গত দু’দশক ধরে ধীরে ধীরে রুগ্ন হয়ে পড়ে অধিকাংশ কারখানা। কয়েক হাজার কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে কমে আসে বিশ্বকর্মা পুজোর আয়োজনের জাঁকজমক।
তবু এত দিন প্রতি বছর পুজোর আগের দিন কারখানা পরিষ্কার করা থেকেই উৎসবের আমেজ শুরু হয়ে যেত। কিন্তু এ বছর যেন সেই আমেজটাই হারিয়ে গিয়েছে। কারণ এ বার খলনায়ক হিসাবে হাজির হয়েছে নিম্নচাপ। টানা তিন দিনের বৃষ্টিতে জল জমেছে হাওড়া শহরের শিল্পাঞ্চল বলে পরিচিত বেনারস রোড থেকে শুরু করে বেলিলিয়াস লেন, বেলিলিয়াস রোড-সহ টিকিয়াপাড়া, নোনাপাড়া এলাকায়। কয়েক জায়গায় কারখানার ভিতরে জমে রয়েছে কয়েক ফুট জল। ফলে সোমবার, বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিনও জমা জলের জেরে কারখানাগুলি দরজাই খুলতে পারেনি।
এমনই একটি কারখানার মালিক গৌতম কোলে বলেন, ‘‘এ বার পুজো হবে কী করে? জলে ডুবে আছে কারখানাগুলি। সেই সঙ্গে লোহার বাজার একেবারে তলানিতে। কাজ করলেও টাকা মেলে না। তা ছাড়া, আর জি করের ঘটনার পরে উৎসবের আমেজটাই যেন তৈরি হচ্ছে না।’’ আর একটি কারখানার মালিক দীপঙ্কর পোদ্দার বলেন, ‘‘আগে বিশ্বকর্মা পুজোর আগের দিন থেকে উৎসবের মেজাজ থাকত। এ বছর তা একেবারেই নেই। এমনিতেই জলে ডুবে আছে বহু কারখানা তার উপরে আয় একেবারে কমে গিয়েছে। পুজো তাই হচ্ছে নিয়মরক্ষার জন্য।’’
এ দিকে শিল্পাঞ্চলগুলিতে জমা জল নামাতে বিভিন্ন জায়গায় বেশি সংখ্যায় উচ্চক্ষমতার পাম্প বসানো হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে। এক পদস্থ পুর কর্তা বলেন, ‘‘আর বৃষ্টি না হলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় সব জায়গা থেকেই জল নেমে যাবে। পুরসভার ৬৭টি পাম্প চলছে। তাই বিশ্বকর্মা পুজোর দিন কোনও সমস্যা হবে না বলেই মনে হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy