Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Fraud

ফেসবুকের আলাপে ‘স্মার্ট’ রাকেশের জালে বহু যুবতী

বছর চৌত্রিশের এক যুবকের সঙ্গে প্রায় চারশো মহিলার যোগাযোগ! তার ‘শিকারের’ তালিকায় কলকাতা পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ অফিসারের নিকটাত্মীয়াও!

ধৃত রাকেশ। নিজস্ব চিত্র।

ধৃত রাকেশ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিঙ্গুর শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০২১ ০৬:৫৬
Share: Save:

থ হয়ে যাচ্ছেন পুলিশ অফিসাররা।

বছর চৌত্রিশের এক যুবকের সঙ্গে প্রায় চারশো মহিলার যোগাযোগ! তার ‘শিকারের’ তালিকায় কলকাতা পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ অফিসারের নিকটাত্মীয়াও!

এক মহিলাকে প্রতারণা এবং ধর্ষণের অভিযোগে দিন কয়েক আগে কলকাতার রাজারহাটের একটি বিলাসবহুল হোটেল থেকে রাকেশ রায়চৌধুরী নামে ওই যুবককে গ্রেফতার করেন সিঙ্গুর থানার অফিসার অমল সাউ। পঞ্জাবি বান্ধবীর সঙ্গে সাত দিন ভুটান বেড়িয়ে এসে তখন অন্য এক মহিলার সঙ্গে ওই হোটেলে রাকেশ আয়েশে দিন কাটাচ্ছিল বলে পুলিশের দাবি। রাকেশ এখন শ্রীঘরে।

তদন্তে নেমে রাকেশের কাণ্ড-কারখানা দেখে হতবাক হয়ে গিয়েছেন হুগলি জেলা পুলিশের অফিসাররা। তাঁরা জানতে পেরেছেন, বাবার পর্যটন ব্যবসার আড়ালে প্রচুর মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ ছিল রাকেশের। সেই সুবাদেই মহিলাদের সঙ্গে ফেসবুকে আলাপ জমিয়ে প্রতারণায় হাত পাকায় প্রায় ছ’ফুট লম্বা, উজ্বল শ্যামবর্ণের সুঠাম চেহারার ওই যুবক। তার ‘জাল’ অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত। বহু মহিলার সঙ্গে সে প্রতারণা করেছে বলে অভিযোগ।

রাকেশের বাবা-মা বাগডোগরায় থাকেন। তদন্তকারীরা জেনেছেন, একমাত্র সন্তানের কাজকর্মে তাঁরা বীতশ্রদ্ধ। রাকেশ তাঁদের সঙ্গে থাকত না। এক সময় সে বেলঘরিয়ায় থাকত। তবে, বেশ কিছু দিন ধরে তার স্থায়ী ঠিকানা ছিল না। তাই তার নাগাল পাওয়া পুলিশের পক্ষে সহজ হচ্ছিল না। কলকাতায় বহু জায়গা ঘুরে ইদানীং সে সিঙ্গুরে থাকছিল।

হুগলি (গ্রামীণ) জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘রাকেশের মোবাইলের কললিস্ট ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ৪০০ মহিলার সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। ২৭৭ জন মহিলাকে সে ‘ব্লক’ করেছে। প্রতারিত মহিলার সংখ্যা ৮০ জনেরও বেশি।’’ ওই পুলিশকর্তার সংযোজন, ‘‘ওই যুবকের সঙ্গে পরিচয় ছিল এমন দুই মহিলাকে পাওয়া যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে রাকেশ নারী পাচার চক্রেও যুক্ত। রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশও ধৃতের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে।’’

কিন্তু এত মহিলা রাকেশের ‘বশ’ হলেন কী করে?

পুলিশ মনে করছে, এ ক্ষেত্রে রাকেশকে সাহায্য করেছে তার চেহারা এবং কথা বলার মার্জিত ধরণ। আলাপের পরে মহিলাদের সঙ্গে দেখা করা থেকে বেড়াতে যাওয়া, হোটেলে খাওয়া-থাকা এবং শেষে বিয়েও করত রাকেশ। সঙ্গে সে সব সময় শাঁখা-সিঁদুর রাখত। তবে রাকেশ মোট কত বিয়ে করেছে, সেই হিসেব কষতে গিয়ে পুলিশ অফিসারেরা খেই হারিয়ে ফেলছেন। ইতিমধ্যে কয়েক জন মহিলা আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন। প্রতিদিনই সিঙ্গুর থানায় আরও মহিলা আসছেন একই আর্জি জানিয়ে। অভিযোগ, মাধ্যমিক ফেল হলেও রাকেশ নিজেকে স্নাতক, আইন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বলে দাবি করত।

পুলিশ সূত্রের খবর, রাকেশ সম্প্রতি এক মহিলাকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে সিঙ্গুরের একটি ভাড়াবাড়িতে তাঁর সঙ্গে ‘ট্যুর অ্যান্ড ট্র্যাভেল’ ব্যবসা খোলে। মহিলাকে ব্যবসার ম্যানেজিং ডিরেক্টর করে। এর মাঝেই অন্য এক মহিলার সঙ্গে ভুটান বেড়াতে যায়। তদন্তকারীরা জানান, অল্পবয়সি স্বামীহারা যুবতী, ডির্ভোস হয়েছে বা ডিভোর্সের মামলা চলছে এমন মহিলারাই মূলত রাকেশের ‘টার্গেট’। তবে, অবিবাহিত মহিলাও তালিকায় রয়েছেন।

সম্প্রতি ডিভোর্সের মামলা চলা এক মহিলার সঙ্গে রাকেশ ভাব জমায়। দেখা হতেই তাঁর বাচ্চা মেয়েকে কোলে তুলে নেয়। মহিলার বাড়ির প্রত্যেককে করোনা পরীক্ষা করাতে নিয়ে যায়। তার ‘দায়িত্বশীল ভূমিকা’য় মহিলা অভিভূত হয়ে পড়েন। বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে ওই মহিলার সঙ্গেও রাকেশ প্রতারণা করে বলে অভিযোগ। টিটাগড়, নারায়ণপুর, সিঙ্গুর-সহ বেশ কয়েকটি থানায় তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা রয়েছে। সিঙ্গুরের বহু লোকের কাছ থেকে টাকা, মহিলাদের গয়না হাতানোর অভিযোগও রয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Fraud
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy