সাঁতরাগাছি ঝিল। —ফাইল চিত্র।
এক দিকে অবাধে পরিবেশ দূষণ এবং ঝিলকে ঘিরে তৈরি হওয়া অজস্র বহুতল। অন্য দিকে সবুজ পানায় ভরে থাকা বিশালাকার ঝিল। সব মিলিয়ে ডেরা বাঁধার উপযুক্ত পরিবেশ না পেয়ে এ বছর শীতের মরশুমে সাঁতরাগাছি ঝিল থেকে মুখ ফিরিয়েছে পরিযায়ী পাখিরা। ফলে সাঁতরাগাছি ঝিলে এ বার পরিযায়ী অতিথিদের দেখা মেলাই ভার।
এলাকার পক্ষীপ্রেমীরা জানাচ্ছেন, প্রতি বছর রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতর ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে দুর্গাপুজোর পরেই ঝিলের পানা পরিষ্কার করা হয়। পাখিদের এসে বসার জন্য পানা দিয়েই ঝিলে ছোট ছোট দ্বীপ বানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ, এ বছর সে সব কিছুই হয়নি। ফলে নভেম্বর থেকে যে সব পরিযায়ীরা সাঁতরাগাছি ঝিলে অতিথি হয়ে আসত, এ বার তাদের দেখাই মিলছে না।
দিনের পর দিন সাঁতরাগাছি ঝিলে দূষণ বৃদ্ধির জেরে পরিযায়ী পাখিদের আসার জন্য প্রয়োজনীয় যত্ন কমে গিয়েছিল। ২০ বছরে আগেও ৫৩ বিঘার সাঁতরাগাছি ঝিলে ১৫ থেকে ২০ হাজার প্রজাতির পাখি আসত। শীতের মরশুমে সেই পাখিদের দেখতে ঝিলের পাশে ভিড় জমাতেন পক্ষীপ্রেমীরা। কিন্তু সেসব এখন অতীত। ঝিলের পাশেই একটি ক্লাবের সদস্য তথা স্থানীয় বাসিন্দা স্বরূপ দাস জানান, গত কয়েক বছরে দেখা গিয়েছে, ডিসেম্বরের শেষ বা জানুয়ারির শুরুতে সরাল প্রজাতির পাখিই বেশি আসে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঝিলে থেকে ডিম পাড়ে। এর পরে বাচ্চাদের বড় করে নিয়ে উড়ে যায়। তিনি বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকে দেখেছি, শীতের আগে থেকেই পরিযায়ী পাখিতে ঝিল ভরে যেত। পাখিদের কলকাকলিতে মুখর হয়ে থাকত পুরো ঝিল এলাকা। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে দেখছি, সেই পাখিদের সংখ্যা ক্রমশ কমছে। এ বছর তো প্রায় আসেইনি।’’ পক্ষী বিশারদেরা জানাচ্ছেন, কয়েক বছর আগেও পিন্টেল, গ্ল্যাডওয়াল, করমোরেন্ট, পন্ড হেরন, ইন্ডিয়ান মুর হেন, কটন টিল, ফেরুজিনিয়াস ডাক, লেজার হুইসলিং টিলের মতো পরিযায়ী পাখিদের শীতকালীন আস্তানা ছিল এই সাঁতরাগাছি ঝিল। কিন্তু বর্তমানে তাদেরও দেখা নেই।
কিন্তু কেন সাঁতরাগাছি ঝিলের থেকে মুখ ফেরাচ্ছে পরিযায়ীরা? স্থানীয় বাসিন্দা, পক্ষীপ্রেমী গৌতম পাত্রের কথায়, ‘‘এখানে পরিযায়ীরা না আসার অন্যতম প্রধান কারণ পরিবেশ দূষণ। ঝিলের ধারে গড়ে ওঠা বহুতলগুলির বর্জ্য নিষ্কাষণের কোনও উপযুক্ত নালা নেই। ফলে বহুতলের বর্জ্য গিয়ে পড়ছে ঝিলে! ঝিলের জল দূষিত হয়ে গিয়েছে।’’
প্রসঙ্গত, ১৯৮৭ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের রেল দফতর সাঁতরাগাছি ঝিলে দ্বীপ তৈরি করে পাখিরালয় তৈরির পরিকল্পনা করে। পরবর্তীতে এই ঝিল পাখিরালয় তৈরিও হয়। আগে রাজ্য সরকারের বন দফতর এই ঝিল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল। হাওড়া পুরসভাও কয়েকবার পানা পরিষ্কারের কাজ করে দিয়েছে। এ বিষয়ে পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পানা পরিষ্কারের কাজ পুরসভা করে না। আমরা ঝিলের আশপাশ যাতে পরিষ্কার থাকে তা লক্ষ্য রাখি।’’ স্থানীয় সূত্রের খবর, বর্তমানে এই ঝিল দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। শীতের আগে কচুরিপানা সরিয়ে ঝিলকে পরিযায়ী পাখিদের জন্য প্রস্তুত করা ও উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্বও এই সংস্থারই। কিন্তু এ বছর দেখা নেই তাদেরও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy