ভদ্রেশ্বরের শ্যামনগর জুটমিলে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিতে এসে নোটিস দেখছেন। ছবি: তাপস ঘোষ
তিন সপ্তাহের মধ্যে দু’বার বন্ধ হল হুগলির ভদ্রেশ্বরের শ্যামনগর নর্থ জুটমিল। শ্রমিক অসন্তোষের কারণ দেখিয়ে মঙ্গলবার সকালে মিল বন্ধের নোটিস ঝোলান কর্তৃপক্ষ। এই সিদ্ধান্তে প্রায় সাড়ে চার হাজার শ্রমিক বেকায়দায় পড়লেন। বছর শেষে আঁধার নামল শ্রমিক মহল্লায়।
শ্রমিকদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি স্পিনিং বিভাগে আধুনিক মেশিন চালিয়ে সংশ্লিষ্ট কাজে শ্রমিকের সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছেন। দু’জন শ্রমিকের পরিবর্তে এক জনকে কাজ করতে হচ্ছে। তাতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে শ্রমিকদের তরফে আপত্তি জানানো হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাতে কান দেননি। এই পরিস্থিতিতে সোমবার মিলের সব বিভাগের শ্রমিক কাজ বন্ধ করে দেন। উৎপাদনে তার প্রভাব পড়ে। এর পরেই মিল বন্ধের সিদ্ধান্ত।
এ দিন সকালে কাজে যোগ দিতে এসে মিল বন্ধের নোটিস দেখে শ্রমিকরা বিক্ষোভ দেখান। গোলমালের আশঙ্কায় ভদ্রেশ্বর থানার বিশাল বাহিনী মিলের বাইরে মোতায়েন ছিল। তারা পরিস্থিতি সামলায়। স্পিনিং বিভাগে নতুন যন্ত্র এনে নির্দিষ্ট কাজে শ্রমিক কমিয়ে দেওয়ায় এবং উদ্বৃত্ত শ্রমিকদের অন্য বিভাগে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। শ্রমিকদের একাংশের আশঙ্কা, অন্যান্য বিভাগেও এ ভাবে কাজ করা হবে। সে ক্ষেত্রে অনেক শ্রমিককে বসিয়ে দেওয়া হতে পারে। এক শ্রমিকের কথায়, ‘‘এ আসলে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের মতলব।’’
মিলের এক আধিকারিকের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘কম সময়ে বেশি উৎপাদনের জন্য আধুনিক যন্ত্র আমদানি করা হয়েছে। তাতে শ্রমিকদের আপত্তি থাকলে কী করে চলবে! যন্ত্র আনায় কাউকে তো বসানো হয়নি। অন্য বিভাগে পাঠানো মানে কাজ চলে যাওয়া? ওঁরা কাজ না করায় উৎপাদনে প্রভাব পড়ে। মিল বন্ধ করা ছাড়া আমাদের অন্য রাস্তা ছিল না।’’ চন্দননগরের উপ শ্রম কমিশনার মনীষা ভট্টাচার্য্য জানান, শ্রমিক সংগঠন এবং মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে মিল চালুর চেষ্টা করা হবে।
মিল সূত্রের খবর, কিছু দিন আগে স্পিনিং বিভাগে নতুন যন্ত্র আনা হয়। ওই যন্ত্র চালাতে অপেক্ষাকৃত কম লোকবল লাগবে জানিয়ে কিছু শ্রমিককে অন্য বিভাগে স্থানান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে কাজ হারানোর আশঙ্কায় শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করেন। গত ৪ ডিসেম্বর তাঁরা কাজ বন্ধ করে দেন। পরের দিন মিল বন্ধ করে দেন কর্তৃপক্ষ। এর পরে শ্রম দফতরে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে সমস্যা মেটে। তিন দিন পরে মিল খোলে। কিন্তু ফের একই পরিস্থিতি তৈরি হল।
শ্রমিকদের অভিযোগ, মিল চালু হতেই নতুন যন্ত্র চালু করে দেওয়া হয়। মতিলাল রাও নামে এক শ্রমিকের ক্ষোভ, ‘‘মালিকপক্ষের খামখেয়ালিপনায় উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে। নিজেদের দোষ ঢাকতে শ্রমিকদের উপরে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মিল বন্ধ করে দেওয়া হল। কাজের পরিবেশ নষ্ট করে, এমন কোনও কাজ শ্রমিকরা করেন না। মালিকপক্ষের নানা ছলচাতুরিতে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy