জল-সঙ্কট: এ ভাবেই দিনের পর দিন জল কিনে খেতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। হাওড়ার ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের পেয়ারাবাগান এলাকায়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে বসে হাওড়া পুরসভার নামে বিল দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে জলের পাইপলাইনের সংযোগ বাবদ পরিবারপিছু পাঁচ থেকে ছ’হাজার টাকা করে নিয়েছিলেন পুরসভার এক ঠিকাদার। অভিযোগ এমনটাই। কিন্তু তার পরেও গত ছ’বছরে পরিস্রুত পানীয় জল পাননি হাওড়া পুরসভার সংযুক্ত এলাকা ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বড় অংশের বাসিন্দারা। এই প্রবল গরমে গোটা এলাকা জুড়ে দেখা দিয়েছে তীব্র জলসঙ্কট। আর এই সুযোগে বেআইনি ভাবে নলকূপ খুঁড়ে শুরু হয়েছে জল তোলা ও সেই জলের অবৈধ ব্যবসা। ভোটের আগে তাই জল না পেয়ে ক্ষোভে ফুঁসছে হাওড়ার ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ অংশ, যার মধ্যে অন্যতম পেয়ারাবাগান এলাকা।
হাওড়ার বেনারস রোডের তেঁতুলতলা মোড় থেকে শুরু হয়েছে ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের পেয়ারাবাগান এলাকা। আশপাশের এলাকার তুলনায় নিচু জমি বলে বহু বছর ধরে নিকাশির ভয়াবহ সমস্যাতেও ভুগছে এই ওয়ার্ড। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সামান্য বৃষ্টিতেই জল জমে যায় সেখানে। সেই জল পুরোপুরি নামতে কখনও কখনও কয়েক মাস কেটে যায়। তবে, সব থেকে গুরুতর সমস্যা পানীয় জলের সঙ্কট।
এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, পদ্মপুকুর জল প্রকল্পের জল কেএমডিএ-র বসানো পাইপলাইনের মাধ্যমে এলাকার প্রতিটি বাড়িতে সরবরাহের জন্য ২০১৮ সালে হাওড়া পুরসভা উদ্যোগী হয়। পুরসভার তরফে জানানো হয়, এর জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের টাকা জমা দিতে হবে। কিন্তু অভিযোগ, পুর দফতরের পরিবর্তে তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়ে ডেকে পাঠিয়ে প্রত্যেক বাসিন্দার কাছ থেকে পাইপলাইনের খরচ বাবদ ২৩২৭ টাকা এবং বসানোর পারিশ্রমিক (লেবার চার্জ) বাবদ ২৫০০ টাকা করে নেওয়া হয়। কারও কারও থেকে তিন হাজার টাকাও নেওয়া হয়। যদিও তার পরেও গত ছ’বছরে পরিস্রুত পানীয় জলের সমস্যা মেটেনি।
সোনালি ঘোষ নামে এলাকার এক বাসিন্দা, ঠিকাদারের সই করা পুরসভার একটি বিল দেখিয়ে বলেন, ‘‘আমরা বাধ্য হয়ে তৃণমূলের পার্টি অফিসে গিয়ে ওই টাকা জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু প্রশ্ন হল, এক জন ঠিকাদার কী করে পুরসভার বিলে সই করে টাকা তোলেন? টাকা নিলেও এত বছরেও কেন জল পেলাম না?’’ আর এক বাসিন্দা চঞ্চল মৈত্র বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগে পুরসভার পক্ষ থেকে এলাকায় একটি অগভীর নলকূপ তৈরি করে জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়। সেই জলের সরবরাহ পর্যাপ্ত ছিল না। জলের মানও ছিল অত্যন্ত খারাপ। সেই নলকূপের পাম্পও গত চার মাস ধরে খারাপ হয়ে পড়ে আছে।’’ স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, ভোটের আগে শাসকদলের প্রার্থীর ছবি দেওয়া পোস্টার, ফেস্টুনে এলাকা ভরে গিয়েছে। ভোট চাইতে এসে ওই ওয়ার্ডে ঘুরে গিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক মনোজ তিওয়ারি এবং তৃণমূল প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কেউই এলাকার জলসঙ্কট নিয়ে একটি কথাও বলেননি।
এ বিষয়ে ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন তৃণমূল পুরপ্রতিনিধি ও এলাকার তৃণমূল নেতা ত্রিলোকেশ মণ্ডল বললেন, ‘‘ওই এলাকার জলসঙ্কট মেটাতে পুরসভার পদ্মপুকুর জল প্রকল্পের পাইপলাইনের সঙ্গে কেএমডিএ-র বসানো পাইপলাইন যুক্ত করার কাজ চলছিল। কিন্তু ভোটের মধ্যে কেউ নির্বাচন কমিশনে এ নিয়ে অভিযোগ করায় কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছে। ভোট মিটলেই কাজ শুরু হবে। সমস্যা মিটে যাবে।’’
পেয়ারাবাগান-সহ ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের জলসঙ্কট নিয়ে হাওড়া পুরসভার চেয়ারপার্সন সুজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা ওই এলাকায় আরও একটি অগভীর নলকূপ বসাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু এলাকার লোকজন জায়গা না দেওয়ায় বসানো যায়নি। তাই পদ্মপুকুরের পাইপলাইন যুক্ত করার চেষ্টা চলছে। সামান্য কাজ বাকি। ভোটের পরেই হয়ে যাবে।’’ চেয়ারপার্সন জানান, বাসিন্দাদের থেকে বাড়ি বাড়ি পাইপলাইন সংযোগের জন্য টাকা নেওয়া হয়েছিল ঠিকই, তবে সেই টাকা পুরসভাতেই জমা পড়েছে। যদিও এক জন ঠিকাদার কী করে পুরসভার বিলে সই করে টাকা নিলেন, তা জানা যায়নি। সুজয় জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy