Advertisement
E-Paper

রাজাপুর খালে দূষণ অব্যাহত, অভিযোগ

রাজাপুর খালপাড়ের বাসিন্দাদের অভিযোগ, জলে দূষণের প্রভাব জীবন-জীবিকার উপরে পড়ছে। ডানকুনি শিল্পাঞ্চলের কিছু কারখানার রাসায়নিক মিশ্রিত বর্জ্য জল খালে মিশে সর্বনাশ করছে।

রাজাপুর খাল।

রাজাপুর খাল। ছবি: সুব্রত জানা।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:৩৮
Share
Save

দূষণের জেরে দুই জেলার (হাওড়া ও হুগলি) মধ্যে বিস্তৃত রাজাপুর সেচখালের অবস্থা দিন দিন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে আবেদন-নিবেদনে কাজ হয়নি। উপায়ান্তর না দেখে দিল্লিতে জাতীয় পরিবেশ আদালতে চিঠি পাঠিয়েছিলেন এক গ্রামবাসী। সেই চিঠির প্রেক্ষিতে ওই আদালত কলকাতায় তাদের পূর্বাঞ্চলীয় শাখাকে মামলা করার নির্দেশ দিয়েছে। সেই অনুযায়ী হাওড়ার রাজাপুর খাল নিয়ে এই শাখায় মামলা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি শুনানি হয়েছে। পরের শুনানি আগামী ৪ জানুয়ারি।

হুগলির চণ্ডীতলা-১ ব্লকের কানাইডাঙা থেকে রাজাপুর সেচখাল হাওড়ার ডোমজুড়, জগৎবল্লভপুর, পাঁচলা, উলুবেড়িয়া হয়ে হুগলি নদীতে মিশেছে। কানা দামোদর পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের কাছ থেকে শুরু হয়ে হুগলির উপর দিয়ে জগৎবল্লভপুর, পাঁচলা, উলুবেড়িয়া-২ নম্বর ব্লকের মাগুরখালী গ্রামে রাজাপুর খালে মিশেছে। এগুলির সঙ্গে আরও অনেক খালের যোগ রয়েছে।

রাজাপুর খালপাড়ের বাসিন্দাদের অভিযোগ, জলে দূষণের প্রভাব জীবন-জীবিকার উপরে পড়ছে। ডানকুনি শিল্পাঞ্চলের কিছু কারখানার রাসায়নিক মিশ্রিত বর্জ্য জল খালে মিশে সর্বনাশ করছে। বহু মানুষ খালে মাছ ধরে সংসার চালাতেন। বিস্তীর্ণ এলাকার চাষ এই জলেই হত। কিন্তু জলে অত্যধিক দূষণের ফলে মাছ মিলছে না। মৎস্যজীবীরা কাজ হারিয়েছেন। ফলন কমেছে খেতে। কালো জলে স্নান করলে চর্মরোগ হয়। পাঁচলার লোহা কারখানার দূষিত জলও ওই খালে মিশছে বলে অভিযোগ।

‘রাজাপুর খাল ও কানা দামোদর নদী বাঁচাও কমিটি’র আহ্বায়ক মুজিবর রহমান জানান, গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, সরকারি দফতরে চিঠি দেওয়া, রাস্তা অবরোধ— সবই হয়েছে। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আধিকারিক স্বচক্ষে দূষণের হাল দেখে গিয়েছেন। কিন্তু দূষণ থামেনি। পরিবেশ আদালতের আঞ্চলিক দফতরে চিঠি পাঠিয়েও ফল মেলেনি। তখনই মুজিবর গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে দিল্লিতে চিঠি পাঠান।

গত ২২ নভেম্বর শুনানিতে আদালতের নির্দেশ, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে দু’সপ্তাহের মধ্যে খালের পরিস্থিতি নিয়ে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। রাজ্যের সেচ দফতর, ডানকুনি পুরসভাকে মামলায় যুক্ত করতে হবে। আদালতে হাওড়ার জেলাশাসকের তরফে জমা দেওয়া হলফনামায় জানানো হয়, খালে দূষণের জন্য হুগলির চণ্ডীতলার কলাছড়া এলাকার ৪টি কারখানাকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই চারটি সংস্থাকেও মামলায় যুক্ত করতে বলেছে আদালত।

মুজিবর বলেন, ‘‘জল দূষিত হওয়ায় খালপাড়ের দু’হাজার মৎস্যজীবী কাজ হারিয়েছেন। পাঁচ হাজার হেক্টর কৃষিজমির চাষ মার খেয়েছে। হাওড়া ও হুগলি জেলা মিলিয়ে প্রায় ২৫ লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। জলজ বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হচ্ছে। বর্জ্য জল শোধন করে ফেলা হবে না কেন?’’ হাওড়া সেচ দফতরের আধিকারিক সন্দীপ গুপ্তের বক্তব্য, নদী বা খালে দূষণের বিষয় দেখার জন্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ আছে। সেচ দফতরের কাজ বন্যা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ, বাঁধ মেরামত, নদীর উপর বিভিন্ন নির্মাণ ইত্যাদি।

চন্দননগরের আইন সহায়তা কেন্দ্র মামলায় গ্রামবাসীদের পাশে রয়েছে। সংস্থার কর্ণধার পরিবেশকর্মী বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কোনও শিল্প দূষণ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ছাড়া চলতে পারে না। দিল্লির পরিবেশ আদালত যে ভাবে গ্রামবাসীর চিঠিকে মান্যতা দিয়ে মামলার নির্দেশ দিয়েছেন, সাধুবাদ জানাই।’’ তাঁর দাবি, যত দিন দূষণ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বসিয়ে বর্জ্য জল শোধন করে ফেলার ব্যবস্থা না করা হচ্ছে, তত দিন দূষণ ছড়ানো সংস্থা বন্ধ রাখা হোক। এত দিনের অন্যায়ের জন্য দূষণ-মূল্য আদায় করে, সেই অর্থ খালপাড়ের দরিদ্র মৎস্যজীবী ও চাষিদের দেওয়া হোক।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

dankuni

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}