Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
প্রশাসনিক তৎপরতা বাড়ল, তবু সংশয়
sand smuggling

sand smuggling: রাতের আঁধারে চলছে বালির অবৈধ কারবার

বালি-খাদের সংখ্যা বাড়ানো নিয়ে জেলাশাসক জানান, সেচ, ভূমি, পরিবেশ দফতরকে নিয়ে যৌথ পরিদর্শন চলছে।

দ্বারকেশ্বর নদের বাঁধে বালি তুলে রাখা হয়েছে। গোঘাটের ভাদুর এলাকায়।

দ্বারকেশ্বর নদের বাঁধে বালি তুলে রাখা হয়েছে। গোঘাটের ভাদুর এলাকায়। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ।

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:৫৩
Share: Save:

বালির অবৈধ কারবার রুখতে ফের জেলা প্রশাসনের কাছে কড়া বার্তা পাঠিয়েছে নবান্ন। কিন্তু তাতেও কাজ কতটা হবে তা নিয়ে সংশয় রয়ে গিয়েছে আরামবাগ মহকুমার বিস্তীর্ণ অংশের সাধারণ মানুষের। তাঁরা মনে করছেন, প্রশাসনিক তৎপরতা এর আগেও দেখা গিয়েছিল। পুলিশ প্রশাসন ধারাবাহিক অভিযানও চালায়। কিন্তু তারপরেও এখানে বিভিন্ন নদনদী থেকে বালি চুরি বন্ধ হয়নি। চুরি রুখতে প্রশাসন যেমন নতুন নতুন পরিকল্পনা করছে, চোরেরাও তেমনই চুরির সময় এবং কৌশল বদলাচ্ছে।

বুধবারই গোঘাটের ভাদুর এলাকায় দ্বারকেশ্বর নদ থেকে বেআইনি ভাবে বালি তুলে পাচারের সময় পুলিশ সাতটি মোষের গাড়ি এবং চালকদের গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানায়, চালকদের কাছে কোনও বৈধ কাগজপত্র ছিল না।

এসডিপিও (আরামবাগ) অভিষেক মণ্ডলের দাবি, ‘‘ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে বালি চুরির অনেকটাই রুখেছি আমরা। কোনও ভাবেই বালি চুরি করতে দেওয়া যাবে না, এই পরিকল্পনাতেই ধারাবাহিক অভিযান চলছে। আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।” জেলাশাসক দীপাপ্রিয়া পি বলেন, “বালি চুরি এবং ওভারলোডিং আটকাতে আমরা বদ্ধপরিকর। তা নিয়ে জেলা এবং মহকুমা স্তরে টাস্ক ফোর্স আগে থেকেই সক্রিয় আছে। প্রতিদিন নিয়ম করে অভিযান চলছে। সমস্ত বিষয়টা খতিয়ে দেখতে আগামী শুক্রবার আরামবাগে পরিদর্শনেও যাচ্ছি।”

গোঘাটের কুমারগঞ্জ, আরামবাগের বাইশ মাইল, পারআদ্রা এবং ভাবাপুরে দ্বারকেশ্বর নদ থেকে, পুরশুড়া বিধানসভা এলাকায় দামোদর এবং মুণ্ডেশ্বরী নদীর মারকুন্ডা, খুশিগঞ্জ, অরুণবেড়া ইত্যাদি মৌজা থেকে বালি লুট অব্যাহত আছে বলে এলাকাবাসীর দাবি। ট্রাক-ট্রাক্টর বা গরু-মোষের গাড়িতে তা পাচার হয়।

পুলিশ ও ভূমি দফতরের তথ্য বলছে, অগস্ট মাসে পুরশুড়া, আরামবাগ এবং গোঘাটে ট্রাক এবং ট্রাক্টর মিলিয়ে বালির সাতটি গাড়ি আটক করে মামলা রুজু হয়েছে। কিন্তু ধরপাকড় জারি থাকলেও বালি পাচারের ক্ষেত্রে প্রশাসনের চোখে ধুলো দেওয়ায় সমানতালে চলছে বলে গ্রামবাসীদের দাবি।

কেমন সেই কৌশল?

বালি পাচারের অভিযোগে একাধিকবার পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন আরামবাগের বাইশ মাইল এলাকার এক ট্রাক্টর-চালক। তিনি বলেন, “বৈধ খাদানের একটা চালানে একবার মাল তুলে সারাদিন ধরে পাশাপাশি অবৈধ খাদানের বালি বওয়াটা বেশ চলছিল। সম্প্রতি নিজেদের মধ্যে ঝগড়াতে সেটা ফাঁস হয়ে যায়। এখন খালি দিনের সময় পাল্টে রাত ১২টা থেকে ভোর চারটের মধ্যে কাজ সারতে হচ্ছে।”

আবার বৈধ বালিখাদ মালিকদের বিরুদ্ধেও বেআইনি বালি তোলার অভিযোগ কম নেই। তাঁদের কৌশল কেমন? নিজেদের চিহ্নিত এলাকা থেকে বেরিয়ে কাছেই বালি তোলা। আর বিভিন্ন ট্রাক-ট্রাক্টরে নির্দিষ্ট পরিমাণের বেশি বালি বোঝাই করে পাচার চলে বলে গ্রামবাসীদের দাবি।

গোঘাটের কুমারগঞ্জ, ভাদুর, আরামবাগের বাইশ মাইল, চাঁদুর ইত্যাদি এলাকার খাদ-মালিকদের বিরুদ্ধে নিজেদের এলাকার বাইরে বালি তুলে পাচারের অভিযোগ তুলে একাধিকবার বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সাধারণ মানুষ। মাস দুয়েক আগে মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও গণস্বাক্ষর সংবলিত অভিযোগ হয়েছে। তা নিয়ে দফতর থেকে জরিমানা আদায় সহ সতর্কও করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট খাদ-মালিকদের।

জেলা ভূমি দফতর থেকে জানা গিয়েছে, হুগলিতে মোট বৈধ বালিখাদ রয়েছে ১৪টি। সব ক’টিই আরামবাগ মহকুমায়। নিয়মমতো বর্ষায় প্রায় তিন মাস বৈধ বালিখাদগুলি থাকছে। আগামী ২৫ অক্টোবর খাদগুলি চালু হওয়ার কথা। এর মধ্যে বৈধ খাদ-মালিকরা তাঁদের নদীপাড়ে তুলে রাখা বালিই কেবল বিক্রি করতে পারবেন। ওভারলোডিং বন্ধে খাদের লিজ়-হোল্ডাররাও যাতে সতর্ক থাকেন সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সর্বোপরি, যে সব জায়গায় বালি চুরি হচ্ছে, আগামী দিনে সেই সব জায়গা যাতে লিজ় দেওয়া যায়, সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।

বালি-খাদের সংখ্যা বাড়ানো নিয়ে জেলাশাসক জানান, সেচ, ভূমি, পরিবেশ দফতরকে নিয়ে যৌথ পরিদর্শন চলছে। ইতিমধ্যে পুরশুড়া এবং আরামবাগে ৪-৫টি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

sand smuggling
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy