Advertisement
২৮ ডিসেম্বর ২০২৪
Howrah District Administration

অবৈধ টোটোকে রেয়াত নয়, নতুন নীতির পথে হাওড়া জেলা প্রশাসন

অবৈধ টোটো রুখতে বছর তিনেক আগে নথিভুক্তিকরণ চালু করেছিল হাওড়া জেলা প্রশাসন। কিন্তু এক ব্যক্তি ব্যাটারির পেটেন্ট নিয়ে মামলা করায় মাঝপথে সেই কাজ থমকে যায়।

হাওড়া ময়দানে টোটোর দখলে রাস্তার সিংহভাগ অংশ।

হাওড়া ময়দানে টোটোর দখলে রাস্তার সিংহভাগ অংশ। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

দেবাশিস দাশ
শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৩ ০৭:৫৮
Share: Save:

হাওড়া শহরে বেআইনি টোটোর দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ করতে নতুন নীতি নির্ধারণ করতে চলেছে জেলা প্রশাসন। তার প্রথম ধাপ হিসাবে গত তিন বছর ধরে থমকে থাকা সমস্ত টোটোর নথিভুক্তিকরণ (রেজিস্ট্রেশন) ফের চালু করছে আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর। সিদ্ধান্ত হয়েছে, শুধুমাত্র মোটর ভেহিক্‌লস দফতর থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত টোটোই রাস্তায় চলতে পারবে। নম্বরহীন টোটো দেখলেই বাজেয়াপ্ত করবে পুলিশ। সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে হাওড়ার নগরপাল ও আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন জেলাশাসক। সেখানেই ওই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জেলাশাসক মুক্তা আর্য বলেন, ‘‘আমরা নির্দিষ্ট নীতি অনুযায়ী নতুন টোটোর রেজিস্ট্রেশন চালু করছি। এ নিয়ে কাজ চলছে। বেআইনি টোটো নিয়ন্ত্রণে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

অবৈধ টোটো রুখতে বছর তিনেক আগে নথিভুক্তিকরণ চালু করেছিল হাওড়া জেলা প্রশাসন। কিন্তু এক ব্যক্তি ব্যাটারির পেটেন্ট নিয়ে মামলা করায় মাঝপথে সেই কাজ থমকে যায়। আঞ্চলিক পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই সময়ে ২২০০ টোটোর মধ্যে ১৭০০ টোটো নথিভুক্ত করে নম্বর দিয়ে দেওয়া হয়। পরিবহণ দফতরের নির্দেশ অনুযায়ী, নথিভুক্তিকরণের আবেদন করার পরে টোটোমালিকদের পুরনো গাড়ি ‘স্ক্র্যাপ’ করে অর্থাৎ ভেঙে দিয়ে, নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে নথিভুক্ত করার প্রথা চালু করা হয়েছিল। কিন্তু মামলা হতে আদালতের নির্দেশে গোটা প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।

হাওড়া সিটি পুলিশ এবং টোটোচালক ও মালিকদের সংগঠন ‘ইলেক্ট্রিক রিকশা ট্রেডার্স অ্যান্ড ড্রাইভার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর বক্তব্য, এই সুযোগকে কাজে লাগিয়েই গত তিন বছরে শহর জুড়ে রাস্তায় নেমে পড়ে কয়েক হাজার টোটো। যত্রতত্র গজিয়ে ওঠে টোটো তৈরির কারখানা। পুলিশ জানিয়েছে, বর্তমানে হাওড়ায় বেআইনি টোটোর সংখ্যা ৫০ হাজারেরও বেশি! পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, শহরের গতি দিন দিন মন্থর থেকে মন্থরতর হচ্ছে। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রতিবাদ করলে টোটোচালকেরা একত্রিত হয়ে পথচারীদের হেনস্থা, এমনকি মারধর পর্যন্ত করছেন। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বহু দুষ্কৃতী টোটোচালকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। ট্র্যাফিক আইন মানা তো দূর, উল্টে পুলিশ আটকালে ওই দুষ্কৃতীরা তাঁদেরই শাসানি দিচ্ছে।

টোটোর যথেচ্ছাচার কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে সম্প্রতি বটানিক্যাল গার্ডেন থানা এলাকায় টোটোচালকদের আক্রমণে এক পুরোহিতের মৃত্যুর ঘটনায়। সব চেয়ে বড় কথা, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে বেআইনি টোটো নিয়ন্ত্রণে পুলিশও ব্যর্থ। তাদের বক্তব্য, অবৈধ টোটোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই আসরে নেমে পড়েন রাজনৈতিক নেতারা। সেই কারণে কিছু করা যাচ্ছে না। হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘বেআইনি টোটো নিয়ে আমরাও নাস্তানাবুদ। অবিলম্বে ব্যবস্থা না নেওয়া হলে হাওড়া শহরে বেকার যুবকদের ‘পেট চালানোর’ এই ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষ বিপদে পড়বেন।

‘ইলেক্ট্রিক রিকশা ট্রেডার্স অ্যান্ড ড্রাইভার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক সুপ্রিয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বেআইনি টোটোর দাপটের জন্য কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকারও। যাঁরা বিভিন্ন সংস্থার ডিলারশিপ নিয়েছিলেন, তাঁরা বসে গিয়েছেন। অন্য দিকে, টোটো তৈরির কয়েকশো কারখানা গজিয়ে ওঠায় কম দামি টোটো বাজারে ছেয়ে যাচ্ছে। এই বেআইনি কারবার অবিলম্বে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Howrah District Administration Illegal Toto
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy