মৌমিতা বসু। —নিজস্ব চিত্র।
মৃত্যুর কাছে হার মেনেছিলেন বটে। তবে মৃত্যুর প্রায় সাত মাস পরে ‘জয়ী’ হয়েছে প্রতিবাদী কণ্ঠ! ভিন্ রাজ্যে গিয়ে কৃষক আন্দোলনে শামিল হওয়া বছর ছাব্বিশের মৌমিতা বসুর লড়াই বৃথা যায়নি। শুক্রবার সকালে তিন বিতর্কিত কৃষি আইন প্রত্যাহারের কথা ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই ‘জয়ে’ আন্দোলনকারী অগণিত কৃষকের সঙ্গে শামিল হয়েছেন মৌমিতার বাবা উৎপল বসুও। তাঁর মতে, এ ‘জয়’ তাঁর মেয়েরও। তাই মেয়ের ‘জয়ে’ আজ তিনি গর্বিত। উৎপল বলছেন, তাঁর মেয়ে কৃষক আন্দোলনের শহিদ!
চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল চলে গিয়েছেন হুগলির বৈদ্যবাটির এই তরতাজা যুবতী। ১১ এপ্রিল কৃষক আন্দোলনের শামিল হতে টিকরি সীমানার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা সমিতি (এপিডিআর)-র এই কর্মী। তবে বেশি দিন সহযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়াতে পারেননি। ১৯ এপ্রিল আন্দোলনের মাঝপথেই কোভিডে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন মৌমিতা। তার কিছু দিনের মধ্যেই অকালেই ঝরে যায় তরতাজা প্রাণ। তবে উৎপলের মতে, মেয়ের মৃত্যু বৃথা যায়নি। তাঁর কথায়, ‘‘আমার মেয়ে কৃষক আন্দোলনের শহিদ। এটা আমার গর্ব। মেয়ের মৃত্যু আমাদের উদ্বেলিত করেছিল।’’
মৌমিতার জন্ম ১৯৯৫ সালে আসানসোলে। সেখানেই দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা। বাবার কাজের সুবাদে সেখানেই থাকতেন তাঁরা। পরে বৈদ্যবাটিতেও পড়াশোনা করেছেন। কম বয়স থেকেই বার বার প্রতিবাদীর ভূমিকায় দেখা গিয়েছে বৈদ্যবাটির এনসি ব্যানার্জি রোডের বাসিন্দা মৌমিতাকে। বাবা উৎপল বসুও মানবাধিকার সংগঠনের কর্মী। মাধ্যমিক পরীক্ষায় পর থেকেই বাবার সঙ্গেই নানা আন্দোলনের কর্মসূচিতে থাকতেন মেয়ে। এপিডিআর শ্রীরামপুর শাখার সক্রিয় কর্মী হিসাবে নাগরিক অধিকারের দাবিতে বিভিন্ন মঞ্চে আওয়াজ তুলেছেন।
আন্দোলনে শামিল হতে গিয়ে ভিন্ রাজ্যেও পা বাড়িয়েছিলেন মৌমিতা। এপিডিআর সূত্রে খবর, ‘গঙ্গা বাঁচাও’ আন্দোলনের সময়ে মৌমিতা চলে গিয়েছিলেন হৃষিকেশে। চলতি বছরেও দিল্লি থেকে টিকরি সীমানার দিকে রওনা হয়েছিলেন আন্দোলনকারী কৃষকদের সঙ্গে কৃষি আইন প্রত্যাহারের দাবিতে আওয়াজ তুলতে। তবে সে আন্দোলনের ‘জয়’ দেখে যেতে পারলেন না মৌমিতা। সন্তান হারানোর কষ্ট থাকলেও তা মেনে নিয়েছেন উৎপল। কারণ, তাঁর মেয়ে ‘যুদ্ধের ময়দানে’ জীবন দিয়েছেন। উৎপল বলেন, ‘‘সন্তান হারানোর কষ্ট রয়েছে। কিন্তু মেয়ের জন্য আমি গর্বিত। কারণ, আমার মেয়ে মানুষের জন্য লড়াই করতে গিয়ে জীবন দিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy