শুভজিৎ মান্না। —নিজস্ব চিত্র।
স্কুল খোলার আনন্দে এক দিনও আগেও মশগুল ছিল দশম শ্রেণির ছাত্রটি। তবে তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তা নিরানন্দে বদলে গেল। শিক্ষকের চড় খেয়ে কানের ব্যথায় ঘরবন্দি হতে হল ওই ছাত্রকে। এমনকি, শিক্ষকের চড়ে তার কানের অস্ত্রোপচারও করতে হতে পারে। অভিযোগ, ক্লাসে বেঞ্চ বাজিয়ে হইহুল্লোড় করার ‘অপরাধে’ই তার কানে চড় মারেন শিক্ষক। তার জেরে কানে গুরুতর আঘাত লেগেছে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে শুক্রবার থানায় নালিশ করেছেন ছাত্রের মা। যদিও শিক্ষকের দাবি, শৃঙ্খলাপরায়ণ না হওয়ায় ছাত্রটিকে মেরেছিলেন বটে। তবে তাতে যে ছাত্রটির কানে লেগে যেতে পারে, সে ধারণা ছিল না তাঁর।
গত বুধবার হুগলির উত্তরপাড়া অমরেন্দ্র বিদ্যাপীঠ (বালক) হাইস্কুলে ঘটনার সূত্রপাত। টিফিনের পরে দশম শ্রেণির ছাত্ররা বেঞ্চ বাজিয়ে গান করছিল। সে সময় ক্লাসের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন জীবন বিজ্ঞানের শিক্ষক গৌতম রুইদাস। অভিযোগ, ক্লাসের দু’জনকে মারধরের পর শুভজিৎ মান্না নামে ওই ছাত্রকেও চড় মারেন তিনি। ক্লাসের পর প্রধান শিক্ষককে তা নিয়ে অভিযোগ জানায় শুভজিৎ। প্রধান শিক্ষকের ঘরে থেকে বেরোনোর সময় তাকে ফের কানের পাশে চড় মারেন গৌতম। বাড়ি এসে মা’র কাছেও গোটা ঘটনাটি বলেছিল শুভজিৎ। তার কথায়, ‘‘বুধবার ক্লাসের সকলে বেঞ্চ বাজাচ্ছিল। বেশ চেঁচামেচিও হচ্ছিল। সে সময় ক্লাসের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন স্যর। চেঁচামেচি শুনে আমাদের ক্লাস থেকে বেরোতে বলে দু’টি ছেলেকে মারধর করেন। আমার কানেও খুব জোরে মারেন। ক্লাসের পর হেডস্যরের কাছে কানের যন্ত্রণার কথা বলি। সে সময় তিনি কানে জল দিতে বলেন। আমি বলেছিলাম, ‘কানের ব্যবস্থা করছি।’ গৌতম স্যর ভেবেছেন, ওঁর বিরুদ্ধে বলেছি। এর পর আমাকে ডেকে চুলের মুঠি ধরে তিনটি চড় মারেন। এখন বাঁ-দিকে কানে কম শুনছি। কানে এবং দু’ঘাড়েও ব্যথা রয়েছে।’’
শুভজিতের মা রীতু মান্না জানিয়েছেন, শুক্রবার সকালে ছেলেকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে জানা যায়, শুভজিতের বাঁ-কানে চোট লেগেছে। ছয় থেকে আট সপ্তাহ পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। এমনকি অস্ত্রোপ্রচার করতে হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। এর পরেই ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে উত্তরপাড়া থানায় অভিযোগ জানান রীতু। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেকে স্কুলে পাঠিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’’
অভিযুক্ত শিক্ষকের দাবি, তাঁকে হুমকি দিয়েছে শুভজিৎ। তাঁর কথায়, ‘‘বুধবার ওই ছাত্রটিকে প্রধান শিক্ষকের ঘরে ডাকা হয়েছিল। স্টাফরুম থেকে বেরোনোর সময় ছাত্রটি আমাকে হুমকি দেয়, ‘ঠিক আছে স্যর, দেখে নেব আপনাকে।’ ছাত্রকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর মা আমার বাড়িতেও এসেছিলেন। সেখানেও ছাত্রটি বলে গিয়েছে, ‘দেখে নেব।’ আমার কারও প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশ নেই। আমি শৃঙ্খলাপরায়ণ। ছেলেটিকে ডাকতে গিয়ে হয়তো কানে লেগেছে, সে ধারণা ছিল না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy