ফাইল চিত্র
দুর্গাপুজো দোরগোড়ায়। ভদ্রেশ্বরের শুভাশিস মুখোপাধ্যায় জানেন, ছেলেমেয়ে জামাকাপড় কিনতে চাইবে না।
এটা নিশ্চিন্তি না কি হতাশা?
‘‘ওরা জানে, ওদের বাবার কাজ নেই। বাবা বন্ধ জুটমিলের অসহায় শ্রমিক।’’— অসহায়তা শুভাশিসের গলায়।
রিষড়ার ওয়েলিংটন জুটমিল ছ’মাস ধরে বন্ধ। সেই মিলেরই শ্রমিক শুভাশিসের মেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী, ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়া। শুভাশিসের মতোই কাজ খোয়ানো মিলের অনেক শ্রমিকের প্রশ্ন, কবে খুলবে মিলের দরজা?
উত্তর অমিল। তবে, শ্রমমন্ত্রী বেচারাম মান্নার আশ্বাস, ‘‘আমরা মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলছি। পুজোর আগেই যাতে মিল খোলে, সেই চেষ্টা করা হচ্ছে।’’
আজ, মঙ্গলবার মিলের মনিটরিং কমিটির বৈঠক ডেকেছেন কর্তৃপক্ষ। কমিটিতে কর্তৃপক্ষ এবং শ্রমিক সংগঠনের (সিটু, আইএনটিইউসি এবং এআইটিইউসি) প্রতিনিধিরা রয়েছেন। শ্রমিক সংগঠনগুলি মিলিত ভাবে জানিয়েছে, তারা বৈঠকে যাবে না। এআইটিইউসি নেতা প্রাণেশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘উৎপাদন চালুর কথা না বলে মনিটরিং কমিটির বৈঠক ডেকে কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের বিভ্রান্ত করছেন।’’ সিটু নেতা সুমঙ্গল সিংহ বলেন, ‘‘উৎপাদন চালু করে আলোচনা করা হোক। তা না করে কর্তৃপক্ষ ইচ্ছাকৃত ভাবে জটিলতা সৃষ্টি করছেন।’’
কর্তৃপক্ষ যথারীতি পরিস্থিতির দায় শ্রমিকদের উপরে চাপিয়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, নানা ব্যাপারে বাধা সৃষ্টি করে শ্রমিক-নেতারা পরিস্থিতি বিগড়ে দিচ্ছেন। মিলের সিইও শান্তনু খেলোয়াড় বলেন, ‘‘উৎপাদন চালু করতে গেলে তো দু’পক্ষকে আলোচনা করে সমস্যা মেটাতে হবে। শ্রমিক-নেতারা সেটা করছেন না। প্রতি পদে বাধা দিচ্ছেন। জমে থাকা সামগ্রী ওঁরা বের করতে দেননি। মিল চালানোর সদিচ্ছা আছে বলেই উৎপাদন বন্ধ থাকা অবস্থাতেও সম্প্রতি প্রায় ৩ কোটি টাকা ইএসআই এবং প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা
দিয়েছি আমরা।’’
আর্থিক সঙ্কট-সহ একাধিক কারণ দেখিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে মিল বন্ধ করেন কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকরা আন্দোলনে নামেন। গত ৯ জুলাই শ্রমমন্ত্রীর মধ্যস্থতায় উৎপাদন চালু নিয়ে
চুক্তি হয়। তার পরেও নানা জট তৈরি হয় শ্রমিক ও মালিকপক্ষের মধ্যে। ওই মাসের শেষে কয়েক দফায় প্রায় ১০০ শ্রমিক নিয়ে কাজ চালু হয়। কিন্তু পুরোদমে উৎপাদন চালুর আগেই শ্রমিক সংগঠনগুলির অসহযোগিতার কারণ দেখিয়ে ৩ অগস্ট ফের ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। এর পরে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হলেও লাভ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে প্রাক্-উৎসবের আলো শ্রমিক মহল্লায় প্রবেশ করছে না। শুভাশিস গত আড়াই দশক এই জুটমিলে কাজ করছেন। তিনি জানান, গত দু’মাসে হাতেগোনা তিন দিন অন্য জুটমিলে কাজ পেয়েছেন ৩৭০ টাকা রোজে। সংসার চালাতে গিয়ে সঞ্চয় প্রায় শেষ। বাধ্য হয়ে স্ত্রী গত শনিবার থেকে একটি বহুজাতিক সংস্থায় ছোটখাটো কাজে ঢুকেছেন। শুভাশিসের কথায়, ‘‘আত্মীয়েরা সাহায্য করেন। কিন্তু সেই আশায় পুরুষ মানুষ বসে থাকতে পারে! এ যন্ত্রণা বলে বোঝানোর নয়। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায়।’’
জয়দেব ঘোষ নামে অপর এক শ্রমিকের তিন ছেলেমেয়ে। প্রত্যেকেই স্কুলপড়ুয়া। জয়দেব বদলি শ্রমিক হিসেবে কাজের আশায় অন্য মিলে ছুটে যান। কোনও দিন কাজ মেলে। কোনও দিন মেলে না। তাঁর কথায়, ‘‘পুজো যত এগিয়ে আসছে, দুশ্চিন্তা বাড়ছে। ছেলেমেয়েকে একটা করে নতুন জামাও কিনে দিতে পারব না! কবে যে মিলটা খুলবে?’’
ছেলেমেয়েরাও জানে, বাবার মিল বন্ধ। নতুন জামার আব্দার করতে নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy