উদয়নারায়ণপুরে জলমগ্ন মণ্ডপ। নিজস্ব চিত্র।
জোড়া ধাক্কাটা সামাল দেওয়া যাচ্ছে না কিছুতেই।
মাস দু’য়েক আগে বন্যার পরও উদ্যোক্তারা মাঠে নেমেছিলেন সাড়ম্বরে পুজোর আয়োজনে। কিন্তু সপ্তাহ দু’য়েক আগের বন্যা ভাসিয়েছে ঘর। ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে দেবী আরাধনার ইচ্ছাও। উদয়নারায়ণপুরের ১১টির মধ্যে ৯টি পঞ্চায়েতের বেশিরভাগ এলাকায় তাই পুজোর বোধনের আগেই বিসর্জনের সুর। ধীরে ধীরে জল নামতে থাকায় পুজো কোথাও বন্ধ হবে না বলে জানিয়েছেন পুজো উদ্যোক্তারা। তবে থাকবে না কোনও আড়ম্বর।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবানীপুরের ‘আমরা সবাই’ ক্লাবের পুজো উদয়নারায়ণের অন্যতম সেরা বলে পরিচিত। ‘সমুদ্র মন্থন’ ছিল এ বারের পুজোর থিম। পুজো কমিটির সম্পাদক তথা শিল্পী অরুণ পোল্যের তত্ত্বাবধানে প্রায় দু’মাস ধরে গ্রামের বিভিন্ন আঁকার স্কুলের শিক্ষার্থীরা হোগলা, পাট, প্যাঁকাটি আর খড় দিয়ে থিম তৈরি করছিলেন। এখন সেই থিম এক কোমর জলের তলায়। অরুণবাবু বলেন, ‘‘গত বছর করোনার জন্য কিছুই করতে পারিনি। দু’মাস আগে বন্যার পর জল নামতেই থিম তৈরির কাজ শুরু করি। দ্বিতীয় বারের বন্যায় সব শেষ হয়ে গেল।’’
পাঁচারুলও এ বার জলভাসি হয়েছে। এই গ্রামের ‘ঐক্য সম্মিলনী’-র পুজোও সাড়ম্বরে করার পরিকল্পনা করেছিলেন উদ্যোক্তারা। কোনও থিম না হলেও মণ্ডপ তৈরি চলছিল জোর কদমে। এখন সেই মণ্ডপও জলে ডুবে।
তবে জল ধীরে ধীরে নামতে থাকায় আড়ম্বর না হলেও পুজোটা করবেন বলে উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন। অরুণবাবু বলেন, ‘‘আমাদের এলাকা কৃষিপ্রধান। চাষের সর্বনাশ হয়ে গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্যবসাও। এই পরিস্থিতিতে কে চাঁদা দেবেন? তা ছাড়া মণ্ডপের অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করবই বা কী ভাবে?’’ ‘ঐক্য সম্মিলনী’র অন্যতম উদ্যোক্তা দীনবন্ধু বেরা বলেন, ‘‘আড়ম্বরের কোনও জায়গাই নেই। শুধু পুজোটাই করব।’’
উদয়নারায়ণপুরে পুজোর সংখ্যা ৭৫টি। সিংহভাগ পুজো কমিটির পৃষ্ঠপোষক হিসাবে আছেন এলাকার বিধায়ক সমীর পাঁজা। তিনি বলেন, ‘‘দুর্গাপুজোর মধ্যেই বাঙালি জীবনের আনন্দ খুঁজে নেয়। কিন্তু জোড়া বন্যার ধাক্কায় এ বার উদয়নারায়ণপুর বিপর্যস্ত। প্রকৃতির বিরুদ্ধে কতটা লড়াই-ই বা সম্ভব? নমো নমো করেই পুজো হবে। কোনও পুজোই বন্ধ
হবে না।’’
শুধু সর্বজনীন পুজোই নয়। বন্যার জন্য বিপাকে পড়েছেন পারিবারিক পুজোর উদ্যোক্তারাও। তাঁদের ক্ষেত্রে অবশ্য সমস্যাটা অর্থের নয়, লোকবলের। বন্যায় এলাকা ডুবে যাওয়ায় পুজোর সংগঠনে যত মানুষের যোগদান প্রয়োজন, সেটাই মিলছে না। ভবানীপুর চন্দ্র পরিবারের পুজো এ বার ১৭১ বছরে পড়ল। এই পরিবারের সদস্য সুখেন্দু চন্দ্র বলেন, ‘‘আমাদের স্থায়ী দুর্গা দালানে জল ওঠেনি। প্রতিমাও প্রায় তৈরি। কিন্তু চারদিক তো ডুবে। যাঁরা কাজে সাহায্য করেন, তাঁরা তো সবাই জীবন ও জীবিকা বাঁচাতে ব্যস্ত। পুজো হবে। কিন্তু ওই মানুষগুলো ছাড়া সেই প্রাণের ছোঁয়া মিলবে কি?’’
একই সুরে শিবপুরের গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারের সদস্য অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের পুজো চারশো বছরের পুরনো। দুর্গা দালানের জল নেমেছে। পুজো হবে। প্রতি বার গ্রামের মানুষের যোগদানে আমাদের পুজো সর্বজনীন হয়ে ওঠে। এ বার গ্রামের মানুষরা বিপদের মধ্যে আছেন। তাঁরা আসবেন কী ভাবে? তাঁদের ছাড়া তো পুজো ম্লানই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy