করোনা-বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সোমবার, ষষ্ঠীর সকাল থেকেই লাগামছাড়া ভিড়ে ভাসল দুই জেলার পুজো মণ্ডপগুলি। মণ্ডপে যাঁরা ভিড় জমালেন, তাঁদের অধিকাংশেরই মাস্কের বালাই নেই। দূরত্ব-বিধি উড়িয়ে চলল দেদার প্রতিমা দর্শন। এমনকী নিয়ম রক্ষায় হেলদোল নেই অধিকাংশ পুজোর উদ্যোক্তারও। করোনা পরিস্থিতিতে উৎসব উদযাপনে এমন নিয়ম ভাঙা নিয়ে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকমহলও।
করোনা মোকাবিলায় ১৩৯ কোটির এই দেশকে ‘বর্মহীন’ হিসেবে উল্লেখ করছেন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাইরোলজিস্ট ডব্লিউ ইয়ান লিপকিন। উৎসবের আবহে প্রয়োজনীয় করোনা-বিধি মেনে চলার উপরও জোর দিয়েছেন তিনি। কিন্তু সেই পরামর্শের তোয়াক্কা করছেন কই আমোদপ্রিয় বাঙালি! হুগলির ভদ্রকালীর নিউ কলোনি, সখের বাজার বলাকা, অ্যাথেলেটিক ক্লাব, প্রগতি সঙ্ঘ, মাখলা বিবেকানন্দ ক্লাব, বন্ধু মহল সব জায়গাতেই ষষ্ঠীর সকাল থেকে মানুষের ভিড় চোখে পড়েছে। দর্শনার্থীদের অধিকাংশই মাস্কের ধার ধারেননি। বিশেষত তরুণ সম্প্রদায়ের মধ্যে লাগামছাড়া ভাব স্পষ্ট।
ছয় বন্ধুর সঙ্গে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছিল অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া শ্রীতমা বন্দ্যোপাধ্যায়। কেউ মাস্ক পরেনি। তার কথায়, ‘‘পুজোয় বৃষ্টি হতে পারে। তাই ষষ্ঠীর সকাল থেকেই ঠাকুর দেখতে শুরু করেছি। মাস্ক সঙ্গে আছে। তবে এত ভাল জামার সঙ্গে ওটা যাচ্ছে না। মণ্ডপে ঢোকার আগে মাস্ক পরে নিচ্ছি।’’ কোতরঙের একটি মণ্ডপে আট বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলেন কলেজ পড়ুয়া স্বাগত জোয়ারদার। মাস্ক পরেননি তাঁরা। স্বাগতর জবাব, ‘‘জোড়া টিকা নেওয়া হয়ে গিয়েছে। পুজোয় যদি মাস্কই পরতে হবে, তা হলে আর টিকা নিলাম কেন?’’
পুজো উদ্যোক্তাদের মধ্যেও ছিল গা-ছাড়া ভাব। করোনা-বিধি নিয়ে তাঁদের অনেকের সাফাই, ‘‘দিনের বেলায় আর ভিড় কই? রাতে সতর্ক হব।’’ কিন্তু দিনের আলো ফুরোতেই রাস্তায় ভিড় বাড়তে শুরু করে। করোনা-বিধি কে মানল, তা দেখার আর সুযোগ মেলেনি।
শ্রীরামপুরে সন্ধ্যা থেকেই বিভিন্ন মণ্ডপে ভিড় জমতে শুরু করে। শ্রীরামপুর স্টেশন সংলগ্ন মার্কেটেও দিনভর ভালই ভিড় ছিল। ভিড়ের বড় অংশই করোনা স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে উদাসীন।
একই ছবি আরামবাগেও। সোমবার তৃণমূল নেতাদের পুজো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানগুলোতে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা তো দূর, মাস্কেরও দেখা মিলল না। এসডিপিও (আরামবাগ) অভিষেক মণ্ডল বলেন, “পুজোর মরসুমে করোনা-সচেতনতায় জোর দেওয়া হয়েছে। কোভিড বিধি না মানলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সতর্ক করা হচ্ছে। পুজো কমিটিগুলোকে বিধি মেনে দর্শক নিয়ন্ত্রণ করতে, মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার রাখতে বলা হয়েছে।’’ সচেতনতা প্রচার চললেও এখনও পর্যন্ত বিধিভঙ্গ নিয়ে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে মহকুমার চারটি থানা এবং মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
হাওড়ার উলুবেড়িয়া, বাগনানের পুজো মণ্ডপগুলিতেও সন্ধ্যা থেকে ভিড় জমাতে থাকেন দর্শনার্থীরা। অধিকাংশের মাস্ক ছিল না। অনেক মণ্ডপে আবার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। তা দেখতে হয়েছিল জনসমাগমও। উদ্যোক্তারা অবশ্য জানিয়েছেন তাঁরা বিধি ভাঙেনি।
তবে উৎসবের এমন ভিড় কপালে ভাঁজ ফেলছে চিকিৎসকদের। উলুবেড়িয়ার বিশিষ্ট চিকিৎসক সুশান্ত মাইতি বলেন, ‘‘পুজোয় আনন্দ করতে হবে করোনা বিধি মেনে। মাস্ক পড়তে হবে, দূরত্ব বিধি মানতে হবে। এটা না করলে ভয়ঙ্কর পরিণতি অপেক্ষা করছে।’’ হুগলির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রমা ভুঁইয়া বলেন, ‘‘করোনা ভাইরাস ভিড় খোঁজে। মানুষ এতটা অসচেতন হলে পুজোর পরে কী হবে, সেটাই প্রশ্ন।’’
এ বারের পুজোয় শিশুদের বাড়িতে রাখারই পরামর্শ দিচ্ছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অনিরুদ্ধ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘এই ভাইরাস সংক্রমণে সবথেকে বেশি কাবু হচ্ছে পাঁচ বছরের কম বয়সিরা। বড়দের জোড়া টিকা তাদের কোনও ভাবে অন্য ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারবে না। ছোটদের সুরক্ষিত রাখতে বড়দের সাবধানে থাকাটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।’’
(তথ্য সহায়তা: গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়, পীযূষ নন্দী, নুরুল আবসার ও প্রকাশ পাল)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy