মহার্ঘ গ্যাস, ভরসা কাঠকুটো। উলুবেড়িয়ার আমতায় জ্বালানির জন্য শুকনো ডালপালা সংগ্রহ প্রান্তিক মানুষদের। ছবি: সুব্রত জানা
‘বাদশার চা’-এর বিরাট নামডাক রয়েছে গোঘাটের কামারপুকুর চটিতে। আগে প্রতিদিন ৫০০ কাপ চা বিক্রি হতো। করোনা পর্বে কমে ২০০-২৫০ কাপে নেমেছে। এখন গ্যাসের দামবৃদ্ধিতে কী আরও লোকসানের মুখে পড়তে হবে?
দুশ্চিন্তায় দিনকতক ঘুম হচ্ছিল না দোকানি শেখ মির বাদশার। শেষমেশ নিজের সততার সঙ্গেই তিনি যে আপস করেছেন, তা মুক্তকণ্ঠেই স্বীকার করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘চায়ের দাম বাড়ালে বিক্রিতে টান পড়বে। চা পাতার ফ্লেভারটা ঠিকই রেখেছি। কেবল দুধে একটু বাড়তি জল মেশাচ্ছি। নিজের সততা বজায় রাখাতে পারছি না। কষ্ট হচ্ছে। বদনামও হচ্ছে। চেনা খদ্দেররা মুখঝামটা দিচ্ছেন। সব সইছি। সংসারটা তো টানতে হবে। গ্যাসের দাম যে ভাবে বাড়ছে, মনে হচ্ছে ব্যবসা রাখতে আগের উনুন আর গুল কয়লার আঁচেই ফিরতে হবে।’’
দাম বেড়েছে বাণিজ্যিক গ্যাসের ক্ষেত্রেও। মাসপাঁচেক আগেও যে গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ছিল ১৫৮০ টাকা, এখন তা হয়েছে ১৭৭৬ টাকা। ফলে, ছোট ব্যবসায়ীদের সঙ্কট আরও বেড়েছে। বাড়ির রান্নার গ্যাসের দামবৃদ্ধিতে বহু দরিদ্র এবং প্রান্তিক মানুষ কাঠকুটো জ্বেলে রান্নার পুরনো অভ্যাসে ফিরে গিয়েছেন। সে পথে হাঁটা শুরু করেছেন বহু ছোট ব্যবসায়ীও।
পুরশুড়ার শ্রীরামপুর বাজারের চপ বিক্রেতা মিনা সামুই সিলিন্ডার সরিয়ে উনুনে কাজ করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘পনেরো বছর ধরে চপের দোকান চালাচ্ছি। এখন কাঠের জ্বালানিতে চপ ভাজছি। অনেক সাশ্রয় হচ্ছে। দিনে ২০০-২৫০ টাকার চপ বিক্রি হয়। গ্রামে কাঠের অভাব নেই।’’ রান্নার গ্যাস আর ভোজ্য তেলের দাম বাড়ায় পেরে উঠছেন না গুপ্তিপাড়ার তেলেভাজা বিক্রেতা সোমনাথ নাগ। লাভের গুড় খেয়ে যাচ্ছে পিঁপড়ে। উপায় না দেখে তেলেভাজার ‘সাইজ’ ছোট করে দিয়েছেন তিনি। ফিরেছেন কাঠের জ্বালানিতে।
একই হাল আরামবাগের তিরোল বাস স্ট্যান্ডের মিষ্টি বিক্রেতা সমীর দে-র। তিনি বলেন, ‘‘গ্যাস আর চিনির দাম আকাশ ছুঁয়েছে। কিন্তু গ্রামে দাম বাড়ানো যায়নি। তিন টাকা পিস রসগোল্লাই বিক্রি করতে হচ্ছে।’’
হাওড়ার বাগনান-আমতা মোড়ে একটি ছোট হোটেল চালান জয়দেব দাস ও তাঁর স্ত্রী কাকলি। তাঁরাও উনুনে গুলকয়লা দিয়ে রান্না করছেন। জয়দেব বলেন, ‘‘গুলের দামও বেড়েছে। তবে রান্নার গ্যাসের তুলনায় কিছু নয়।’’
বৈদ্যবাটী ১১ নম্বর রেলগেট পূর্ব পাড়ের রাস্তার ধারে গুমটিতে চপ বিক্রি করেন প্রভাত অধিকারী। তাঁর খেদ, ‘‘করোনায় বিক্রিবাটা কমেছে। গ্যাসের যা দাম, তাতে এই ব্যবসায় সংসার চালানো দুষ্কর। আবার যে কাঠের উনুন ব্যবহার করব, উপায় নেই। পাশের অন্য ব্যবসায়ীরা
আপত্তি করছেন।’’
পান্ডুয়া, খন্যান, মগরা, বলাগড়-সহ কিছু এলাকায় চায়ের দোকানে আবার গ্যাসের পরিবর্তে এসেছে ইন্ডাকশন কুকার। খন্যানের চা বিক্রেতা বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ কোভিড পরিস্থিতির জন্য দোকানে কম খদ্দের আসছে। তার উপর যে ভাবে গ্যাসের দাম বেড়েছে, তাতে গ্যাস জ্বালিয়ে চা তৈরির খরচ উঠছে না। তাই ইন্ডাকশন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy