Advertisement
০৬ অক্টোবর ২০২৪
Consumer Protection court

ব্যাঙ্কে ‘ভুল’ বুঝিয়ে ঋণ, গ্রাহকের সুরাহা আদালতে

অভিযোগকারী মোবাইল ফোন বিক্রি ও মেরামত করেন। তিনি জানান, ২০১৮ সালে তাঁর মোবাইলে ওই এসএমএস আসে।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

প্রকাশ পাল
তারকেশ্বর শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪ ০৯:১৮
Share: Save:

ঋণ সংক্রান্ত এসএমএস-এর বিষয়ে জানতে ব্যাঙ্কে গিয়েছিলেন গ্রাহক। সেখানে তাঁর মোবাইল নিয়ে অনুমতি ছাড়াই তৎক্ষণাৎ ঋণের জন্য আবেদন করে দেওয়া হয়। অ্যাকাউন্টে কয়েক লক্ষ টাকা ঋণ আসায় ওই গ্রাহক ফ্যাসাদে পড়েন। ছ’বছর আগে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের তারকেশ্বর শাখার ঘটনা। ব্যাঙ্কের দুই আধিকারিককে জরিমানার নির্দেশ দিয়েছে হুগলির ক্রেতা সুরক্ষা আদালত। বিষয়টি নিয়ে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ মন্তব্য করেননি।

অভিযোগকারী মোবাইল ফোন বিক্রি ও মেরামত করেন। তিনি জানান, ২০১৮ সালে তাঁর মোবাইলে ওই এসএমএস আসে। ব্যাঙ্কে গেলে ম্যানেজার জানান, ‘প্রি অ্যাপ্রুভড্‌’ ঋণ অনুমোদন হয়েছে। ‘ওটিপি’ দিলেই টাকা অ্যাকাউন্টে ঢুকবে। ব্যাঙ্ক ম্যানেজার ‘ভুল বুঝিয়ে’ তাঁকে এক জনের (লোন এজেন্ট) সঙ্গে কথা বলতে বলেন। তাঁকে বিষয়টি জানালে তিনি তাঁর মোবাইল ফোনটি নিয়ে নেন। কিছুক্ষণ পরে ফেরত দেন। এর পরেই বারো লক্ষেরও বেশি টাকা ঋণ বাবদ অ্যাকাউন্টে তাঁর ঢোকে। তার মধ্যে ২ লক্ষ টাকা বিমা করে দেওয়া হয়। ভয় পেয়ে ওই গ্রাহক ফের ম্যানেজারের কাছে যান। কিন্তু সুরাহা মেলেনি। সংশ্লিষ্ট এজেন্ট আশ্বাস দেন, সমস্যা হবে না। যদিও প্রতি মাসে ৩৫ হাজারের বেশি টাকা ঋণ শোধের কিস্তি বাবদ কাটা হতে থাকে।

ওই গ্রাহক একজন ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ‘‘বার বার ব্যাঙ্কে ঋণের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে বলেছি। ব্যাঙ্কের কলকাতা অফিসে গিয়েও হাতে-পায়ে ধরেছি। কিছুই হয়নি। ১৭ শতাংশ সুদ-সহ টাকা কেটেছে। আমি ঋণের টাকায় হাতও দিইনি।’’

ব্যবসায়ীর দাবি, ওই অ্যাকাউন্টের টাকা ফুরিয়ে গেলে তাঁর অন্য অ্যাকাউন্ট থেকে বিনা অনুমতিতে টাকা কাটা হয়। তার টাকাও শেষ হলে বাড়িতে লোক পাঠানো হয়। তিনি মানসিক যন্ত্রণার শিকার হন। সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয়। ব্যবসার প্রচুর ক্ষতি হয়। ২০২১ সালে তিনি ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করেন।

শুনানির পরে গত ৩ মে আদালতের সভাপতি দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সদস্য ববিতা চৌধুরী রায় ঘোষণা করেন। ব্যাঙ্কের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ও সার্কল নোডাল অফিসারকে আদালতের আদেশ, ওই গ্রাহকের ঋণ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে হবে। তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে কেটে নেওয়া অতিরিক্ত অর্থ ফেরত দিতে হবে। ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, মামলা চালানোর খরচ বাবদ ১০ হাজার টাকা দিতে হবে। রায় দানের তারিখ থেকে দু’মাসের মধ্যে নির্দেশ কার্যকর করতে বলা হয়। সেই মেয়াদ পেরিয়ে গিয়েছে।

মামলাকারীকে আইনি সাহায্য করে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আইন সহায়তা কেন্দ্র। তাঁর আইনজীবী ছিলেন শেখ রাজু, শুভ্রকান্তি সামন্ত এবং বৈশাখী হালদার। আইন সহায়তা কেন্দ্রের কর্ণধার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মোবাইল বা ই-মেলের বার্তা অনেকে বুঝতে পারেন না। ব্যাঙ্ক যদি ভুল বোঝায় বা মোবাইল নিয়ে অ্যাকাউন্টে ঋণ ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, মানুষ যাবেন কোথায়! আদালত উপযুক্ত রায় দিয়েছে।’’

ব্যাঙ্কের বর্তমান ম্যানেজার সায়ন্তন মণ্ডল বলেন, ‘‘এই মুহূর্তে ওই ভাবে আমাদের কোনও বক্তব্য নেই। ফোনে কিছু বলতে পারব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tarakeshwar Consumer protection
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE