নৌকা না থাকায় কলার ভেলাতেই যাতায়াত। খানাকুলের শঙ্করপুর এলাকায়। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
টানা তিন দিন চরম বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়েছে দামোদর। বুধবার সকাল থেকে তা বিপদসীমায় ঠেকেছে। মুণ্ডেশ্বরীতে জলের উচ্চতা প্রাথমিক বিপদসীমার থেকেও নেমে গিয়েছে। দ্বারকেশ্বর নদ গত সোমবার থেকেই অনেকটা শান্ত। কিন্তু আরামবাগ মহকুমায় বন্যা পরিস্থিতির বিশেষ উন্নতি হয়নি। রূপনারায়ণ এখনও ভরা। সেখানে জল নামছে না। তার উপরে বুধবারের প্রবল বৃষ্টি চিন্তা বাড়িয়েছে।
সেচ দফতরের আধিকারিকরা জানান, রূপনারায়ণ বাদে মহকুমার বাকি তিন নদনদীর আগ্রাসী রূপ নেই। দামোদর এবং মুণ্ডেশ্বরীতে ডিভিসি-র ছাড়া ৬০ হাজার কিউসেক জল বইছে।
বুধবার সকালে খানাকুলের কাকনান কালীতলায় রূপনারায়ণ নদ থেকে বছর পঁয়তাল্লিশের এক ব্যক্তির দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, দেহটি স্রোতে ভেসে ওই জায়গায় আসে। তাঁর পরিচয় জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য আরামবাগ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
মহকুমার বৃষ্টি এবং তিনটি নদনদীর জল রূপনারায়ণে পড়ে সমুদ্রে মেশে। রূপনারায়ণ ভরা থাকায় খানাকুল-১ ও ২ ব্লক যেমন জলমগ্ন ছিল, তেমনই আছে। আরামবাগ, পুরশুড়া এবং গোঘাট-১ ব্লক এলাকা থেকে ধীর গতিতে জল নামতে শুরু করলেও বুধবারের প্রবল বৃষ্টির পরে এবং বর্ধমানের বিভিন্ন খাল থেকে জল গড়িয়ে আসা শুরু হয়েছে। ফলে, জমা জল বাড়ছে।
খানাকুল-২ ব্লকের ১১টি পঞ্চায়েতের ৬৮টি গ্রামের সবগুলিই জলমগ্ন। যাতায়াত চলছে নৌকায়। খানাকুল-১ ব্লকে ১৩টি পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকায় কিছু পরিবার গ্রামের বিভিন্ন উঁচু জায়গায় গবাদি পশু-সহ আশ্রয় নিয়েছেন। পুরশুড়ায় দামোদরের পশ্চিম বাঁধ বরাবর প্রায় ১৫০ মানুষ ত্রিপল টাঙিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আরামবাগ মহকুমায় বন্যাপীড়িত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৬৫ হাজার। ৬৩৩২ জন দুর্গত মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরানো
হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৫৩১০ জন আশ্রয় নিয়েছেন ৭৪টি ত্রাণ শিবিরে। এখন পর্যন্ত ৩০টি বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙেছে। ৮৭৯টি বাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে।
এ দিন বিকেলে খানাকুলের রাজহাটিতে ত্রাণ বিলি করতে গেলে গত বিধানসভা নির্বাচনে সেখানকার আইএসএফ প্রার্থী ফয়সল খান-সহ তাঁর সঙ্গীদের মারধর এবং ত্রাণসামগ্রী লুটের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ফয়সালের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা আমাদের কিল, চড়, লাঠি দিয়ে মারে। আমার চশমা খুলে ফেলে দেয়। থানায় অভিযোগ জানিয়েছি।’’ পুলিশ জানায়, তদন্ত শুরু হয়েছে। জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘এমন ঘটনায় যারা যুক্ত, দল না দেখে পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।’’ মঙ্গলবার খানাকুলেরই হরিশচকে ত্রাণ বিলি করতে গেলে স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক সুশান্ত ঘোষের উপরেও তৃণমূলের লোকেরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ।
দামোদর কিছুটা শান্ত হওয়ায় তারকেশ্বর এবং জাঙ্গিপাড়ার বানভাসি বিভিন্ন অংশের জলও ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত উদয়নারায়ণপুর-জাঙ্গিপাড়া রোড দিয়ে জল বইছিল। এ দিন ওই রাস্তায় জল ছিল না। তবে, দুই ব্লকেই ত্রাণ শিবির থেকে কেউ বাড়ি ফেরেননি। দু’টি ব্লক মিলিয়ে প্রায় ৬ হাজার মানুষ বিভিন্ন স্কুলে বা ফ্লাড শেল্টারে রয়েছেন।
খেতে জল জমায় চাষে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। জাঙ্গিপাড়ার সিংটি গ্রামের বাসিন্দা শুভজিৎ পাত্র পটল চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘একে সার থেকে শুরু করে সব কিছুর দাম বেশি। তার উপরে প্লাবনে সর্বনাশ হয়ে গেল। ফসল জলের তলায়। যা হল, তাতে পুরো টাকা জলে গেল।’’
তথ্য সহায়তা: দীপঙ্কর দে
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy