Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
flood

flood: বন্যার বলি দুই, বিচ্ছিন্ন আরামবাগ

ডিভিসি-র জল দামোদর বাহিত হয়ে তারকেশ্বর, ধনেখালি, জাঙ্গিপাড়ার বিস্তীর্ণ এলাকাও ডুবিয়েছে। কয়েক হাজার মানুষ জলবন্দি।

আরামবাগের সালেপুর পঞ্চায়েতের ডহরকুণ্ডু এলাকা। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ।

আরামবাগের সালেপুর পঞ্চায়েতের ডহরকুণ্ডু এলাকা। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ।

পীযূষ নন্দী ও দীপঙ্কর দে
আরামবাগ ও জাঙ্গিপাড়া শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২১ ০৭:৩৪
Share: Save:

দু’মাস আগের চেয়েও পরিস্থিতি খারাপ হল। অতিবৃষ্টি এবং ডিভিসি-র ছাড়া জলের সাঁড়াশি আক্রমণে চারটি নদনদী দিয়ে ঘেরা আরামবাগ মহকুমার ৬টি ব্লকের মোট ৬৩টি পঞ্চায়েতের প্রত্যেকটিই জলের তলায় চলে গেল। বন্যার বলি হয়েছেন দু’জন। সড়কপথে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে আরামবাগ শহর। পরিস্থিতি দেখতে আজ, শনিবার হেলিকপ্টারে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরামবাগে আসতে পারেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।

দ্বারকেশ্বর নদের পাড় ভেঙে প্লাবিত হয়েছে গোঘাট-১ ব্লকের বালি পঞ্চায়েত এলাকা। শুক্রবার সকালে এখানকার লক্ষ্মীপুরে দামোদরপুর-আরামবাগ রোডে জল দেখতে গিয়ে স্রোতে ভেসে যায় শিবু দাস (১৭) নামে এক তরুণ। স্রোত থেকে বাঁচতে তাঁর এক বন্ধু বিদ্যুতের খুঁটি আঁকড়ে ধরে। স্থানীয়েরা তাকে উদ্ধার করেন। বিকেলে স্থানীয় ধানজমি থেকে শিবুর দেহ উদ্ধার হয়। বৃহস্পতিবার রাতে এই পঞ্চায়েতেরই দিঘরা গ্রামে মাটির বাড়ির দেওয়াল ভেঙে কমলা দাস (৯৭) নামে এক বৃদ্ধা মারা যান। প্রশাসন সূত্রের দাবি, বিকেল পর্যন্ত মহকুমায় ৫২ হাজারেরও বেশি লোককে উদ্ধার করা হয়েছে। ১৩০টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে।

শুক্রবার সকাল থেকে দ্বারকেশ্বরের চেহারা আগের দিনের চেয়েও ভয়াল হতে শুরু করে। জেলা সেচ দফতরের খবর, ৭ জায়গায় দ্বারকেশ্বরের বাঁধ ভেঙেছে। অতিবৃষ্টিতে দ্বারকেশ্বরের এমন বিধ্বংসী চেহারা ১৯২২ সালের পরে এই প্রথম। বাঁধ ভেঙে আরামবাগ শহরের ১৫টি ওয়ার্ড জলমগ্ন হয়। সেচ, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর-সহ বিভিন্ন সরকারি কার্যালয় ডোবে। তবে, বিকেল থেকে নদে জল কমতে থাকে। অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকায় কয়েকটি বাঁধ ভাঙায় শহরের জল দ্রুত নামতে থাকে।

অন্যত্র অবশ্য পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। ডিভিসি-র জলে দামোদর এবং মুণ্ডেশ্বরী নদী ক্রমশ ফুলেছে। জেলা সেচ দফতরের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার তপন পাল জানান, বিকেলেই দু’টি নদনদী চরম বিপদসীমার চেয়ে ১.২ মিটার বেশি উচ্চতায় বইছে। আজ, শনিবার পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।

n জাঙ্গিপাড়ার আখনা গ্রামে নৌকাতে চলছে যাতায়াত। ছবি: দীপঙ্কর দে।

n জাঙ্গিপাড়ার আখনা গ্রামে নৌকাতে চলছে যাতায়াত। ছবি: দীপঙ্কর দে।

মহকুমার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতিতে প্রশাসন উদ্বিগ্ন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় এ দিনও আরামবাগে প্রশাসনিক বৈঠক করেন জেলাশাসক দীপপ্রিয়া পি। তিনি জানান, দুর্গতদের উদ্ধারের কাজ চলছে। পরিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জীবনহানি রুখতে নজরদারি এবং প্রচার চলছে।

এ দিন গোঘাট-সহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বন্যার্তদের সঙ্গে কথা বলেন শ্রমমন্ত্রী বেচারাম মান্না। তৃণমূল সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রী হুগলির দলীয় নেতাদের দুর্গতদের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। সেইমতো সদ্যপ্রাক্তন জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব সকাল থেকেই আরামবাগে সেই কাজে নামেন। আজ, শনিবার সেখানে যাওয়ার কথা সপ্তগ্রামের বিধায়ক তপন দাশগুপ্তের। তৃণমূল ছাড়াও বিজেপি, সিপিএম-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্লাবিত এলাকায় ত্রাণ বিলি করছে।

ডিভিসি-র জল দামোদর বাহিত হয়ে তারকেশ্বর, ধনেখালি, জাঙ্গিপাড়ার বিস্তীর্ণ এলাকাও ডুবিয়েছে। কয়েক হাজার মানুষ জলবন্দি। জাঙ্গিপাড়ায় প্রায় এক হাজার হেক্টর কৃষিজমি জলের তলায়। ফলে, চাষে ভালই ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। জাঙ্গিপাড়া-উদয়নারায়ণপুর রাস্তার উপর দিয়ে জল বইছে। ওই রাস্তায় গাড়ি চলাচল বন্ধ। জাঙ্গিপাড়ায় দু’টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। জাঙ্গিপাড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তমালশোভন চন্দ্র বলেন, ‘‘তিন হাজার মানুষ জলবন্দি। দুর্গতদের খাবার পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।’’

তারকেশ্বরের কেশবচকের বাসিন্দা সুদেব শাসমলের প্রশ্ন, ‘‘পুজোর আগে ব্যাপক ক্ষতি হল। দুর্গতি থেকে কবে প্রতিকার পাব?’’

অন্য বিষয়গুলি:

flood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy