সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান চুঁচুড়ার রবীন্দ্রভবনে। বুধবার। ছবি: তাপস ঘোষ
সিঙ্গুরে গাড়ি কারখানা হয়নি। ডানলপ-হিন্দমোটর দীর্ঘদিন বন্ধ। জুটমিলগুলি ধুঁকছে, কোনওটা আবার বন্ধ। হুগলির বড় শিল্পের ক্ষেত্রে এ পর্যন্ত ছবিটা ধূসরই। ক্ষুদ্র ও ছোট শিল্পের সংখ্যাও কম নয় এ জেলায়। কিন্তু বলাগড়ের নৌ-শিল্প হোক বা গোঘাটের ঘড়া শিল্প— ধুঁকছে সেগুলিও। এর মধ্যেই অবশ্য ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প দফতরের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ দাবি করলেন, ‘‘আগামী দু’-তিন বছরের মধ্যে এই জেলায় ৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে।’’
গত বছর হুগলি জেলা শিল্প সম্মেলন (পোশাকি নাম সিনার্জি) হয়েছিল জুন মাসে। তার ছ’মাস পরে, বুধবার চুঁচুড়ার রবীন্দ্রভবনে ফের জেলা শিল্প সম্মেলন হল। সেখানেই ওই দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসুচি ও ব্যবসা সহায়ক ইকো-সিস্টেম সুনিশ্চিত হওয়ায় ওই বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে ২২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।’’
সম্মেলনে জেলার প্রায় আড়াইশো শিল্পোদ্যোগী উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন দফতরের প্রতিমন্ত্রী তাজমুল হোসেন, জেলাশাসক দীপাপ্রিয়া পি-সহ জেলার বিভিন্ন সরকারি দফতরের আধিকারিকরা। প্রশাসনের শিল্পবান্ধব ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা করে জেলাশাসকের আশ্বাস, উদ্যোগপতিদের যে কোনও সমস্যায় জেলা প্রশাসন পাশে আছে। তিনি বলেন, ‘‘শিল্পোন্নয়নের কথা চিন্তা করে এখানে সড়ক পরিবহণের ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। নদিয়া ও হুগলির মধ্যে ঈশ্বরগুপ্ত সেতুর সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে। ডানকুনি-পালসিট ছয় লেনের রাস্তা তৈরির কাজ চলছে। আরামবাগ-চাঁপাডাঙা রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে।’’
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, গত সম্মেলনে শিল্পের যে প্রস্তাবগুলি আসে, তার ২৬ শতাংশ রূপায়ণ হয়েছে এ পর্যন্ত। চলতি অর্থবর্ষে এই জেলায় দ্বিতীয় শিল্প সম্মেলনে দাঁড়িয়ে শিল্প টানতে সরকার কতটা আগ্রহী, তার ফিরিস্তি তুলে ধরেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘বিগত তিন মাসে এই জেলায় মোট ৫২৯টি বিধিবদ্ধ ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ৪৩১টি জমি হস্তান্তর ক্ষেত্রে। দূষণ, বিদ্যুৎ সংযোগ, কিছু ক্ষেত্রে ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন, লাইসেন্স প্রভৃতি ক্ষেত্রেও ছাড়পত্র দিয়েছে প্রশাসন।’’ তাঁর দাবি, চলতি আর্থিক বছরে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এখানে ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পক্ষেত্রে ৩৩৮৩ কোটি টাকা ব্যাঙ্ক মারফত ঋণ দেওয়া হয়েছে। ‘বাংলাশ্রী’ প্রকল্পে ২৪টি সংস্থাকে ১ কোটি ৮৬ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পক্ষেত্রে কেন্দ্রের হিসাবে বাংলা দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। শীঘ্রই এক নম্বর স্থান দখল করা আমাদের লক্ষ্য।’’
শিল্প সম্মেলনে এসে সত্যিই কি ব্যবসায় আগ্রহ বাড়ছে?
শিল্পোদ্যোগীদের কাছ থেকে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া মিলেছে। শ্রীরামপুরের পিয়ারাপুরে লজিস্টিক সংস্থা তৈরিতে উদ্যোগী আকাশ মিত্তল বলেন, ‘‘জেলা সম্মেলন প্রতি তিন মাস অন্তর হওয়া উচিত। সম্মেলনে এসে লাভ হয়েছে। বেশ কিছু সমস্যা মিটেছে।’’ আবার, বেগমপুরের তাঁতশিল্পী জগবন্ধু ওম বলের বক্তব্য, ‘‘আমাদের মতো ক্ষুদ্রশিল্পের লোকেদের এই সম্মেলনে এসে সে ভাবে লাভ হয় না। এই মুহূর্তে কাঁচামালের যা দাম, সে দিকে সরকারের নজর দেওয়া উচিত। না হলে বেগমপুরের তাঁতশিল্প এক দিন হারিয়ে যাবে।’’
সরকারি টাকা খরচ করে এই সম্মেলন নিয়ে কটাক্ষ করেছেন বিরোধীরা। সম্মেলনকে ‘মোচ্ছব’ আখ্যা দিয়ে জেলা সিটু নেতা তীর্থঙ্কর রায় বলেন, ‘‘এ রাজ্যে শিক্ষিত বেকার ছেলেমেয়েরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন, আর টাকার বিনিময়ে তৃণমূল নেতারা অযোগ্যদের চাকরি দিচ্ছেন। এই সরকার যতদিন না যাবে, ততদিন এ রাজ্যে শিল্প হবে না।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মজুমদার বলেন, ‘‘শিল্পক্ষেত্রে বিনিয়োগ হলে, তৃণমূল নেতারা বলুন, শিল্পটা কোথায়! আসলে বিনিয়োগ হয়তো হচ্ছে, কিন্তু সেই টাকা তৃণমূলের ঘরে চলে যাচ্ছে।’’
চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদারের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘বামেদের আমলে রাজ্যে ৫৪ হাজার কলকারখানা বন্ধ হয়েছে। ওঁদের মুখে শিল্প নিয়ে কথা সাজে না। আমাদের সময়ে হুগলিতে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে এবং দিল্লি রোডের পাশে কত শিল্প হয়েছে, সিপিএম এবং বিজেপি নেতারা দেখে আসুন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy