ইটভাটার শ্রমিকদের অভিভাবক হিসেবে স্বাক্ষর করছেন কলেজ শিক্ষক পার্থ চট্টোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।
গত বছর দেড়শো পেরিয়েছিল। এ বার জুড়ল আরও জনা কুড়ি। হুগলির বলাগড় ব্লকে পরিযায়ী শ্রমিকদের সন্তানদের স্কুলে ভর্তির সংখ্যা দীর্ঘতর হচ্ছে। শনিবার জিরাটের আশুতোষ স্মৃতিমন্দির প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয় ওই খুদেরা। প্রত্যেকেই স্থানীয় ইটভাটার শ্রমিকের সন্তান। কোনও শ্রমিকের বাড়ি ঝাড়খণ্ডে। কারও বিহার। কারও ওড়িশায়। কর্মসূত্রে বাস ইটভাটায়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহাদেব শীল জানান, ওই ছেলেমেয়েদের প্রত্যেকের অভিভাবক হিসাবে সই করেন জিরাটের বাসিন্দা, বলাগড় বিজয়কৃষ্ণ কলেজের শিক্ষক পার্থ চট্টোপাধ্যায়। মহাদেব বলেন, ‘‘প্রশাসন ও শিক্ষা দফতরের মধ্যস্থতায় গত বছর আমাদের স্কুলে ইটভাটা শ্রমিকদের প্রায় একশো ছেলেমেয়ে ভর্তি হয়েছিল। আরও কুড়ি জন বেড়ে গেল। গত বছর যারা ভর্তি হয়েছিল, তারা পড়াশোনার সঙ্গে অনেকটাই সড়গড় হয়েছে। মিড ডে মিল-সহ অন্যান্য সরকারি সুবিধা পায় ওরা।’’
পার্থর উদ্যোগে জিরাটের একটি ইটভাটায় পাঠশালা খুলেছিল বলাগড় কলেজ। বিষয়টি জেনে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রশাসন ওই সব শিশুকে স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করে। মহাদেব জানান, বর্ষায় ইটভাটায় কাজ বন্ধ থাকে। তখন শ্রমিকেরা বাড়ি ফিরে যান। ছেলেমেয়ের পড়াশোনার জন্য এ বার অনেকে যাননি।
বলাগড়ের বিদ্যালয় পরিদর্শক গৌরব চক্রবর্তী জানান, গত বছর আশুতোষ স্মৃতিমন্দির প্রাথমিকে প্রথমে ইটভাটার ৫৮ জন শিশু ভর্তি হয়। সংখ্যা পরে বাড়ে। নাটাগড় প্রাথমিক, গুপ্তিপাড়ার চর সুলতানপুর প্রাথমিকেও স্থানীয় ইটভাটার শ্রমিকের সন্তানরা ভর্তি হয়।
সাত বছর পেরনো ছেলে অঙ্কুশকে শনিবার স্কুলে ভর্তি করাতে এনেছিলেন রাসমণি ওঁরাও। বাড়ি রাঁচী ছাড়িয়ে। ছেলেবেলা থেকেই ইটভাটা শ্রমিক বাবা-মায়ের হাত ধরে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছেন রাসমণি। ছোট বয়সেই নিজেও ইটভাটা-শ্রমিক বনে যান। পড়াশোনা হয়নি। তবে নিজের চার ছেলেমেয়েকেই শিক্ষার আঙিনায় এনেছেন ‘পরিযায়ী মা’। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। অন্য মেয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ে। এক ছেলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। দু’জনে জিরাটের দু’টি স্কুলের পড়ুয়া।
রাসমণির কথায়, ‘‘আমার পড়াশোনা হয়নি। চাই, সন্তানেরা পড়ুক। গত বছর বারো ধরে জিরাটের ইটভাটাতেই কাজ করি। ছেলেমেয়ের পড়ার জন্য বছরে দু’এক বার বাড়িতে গেলেও থাকা হয় কম।’’ তিনি জানান, অঙ্কুশ গত বছর এক আত্মীয়ার বাড়িতে থাকায় ইটভাটার অন্য ছেলেমেয়েদের সঙ্গে তাকে স্কুলে ভর্তি করতে পারেননি। এ বার ভর্তির কথা জেনেই ছেলেকে স্কুলে পাঠিয়ে দিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy