Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Serampore

Serampore: মানসিক অসুস্থ মহিলাদের জন্য কাজকে স্বীকৃতি শ্রমজীবীর

দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলায় বেশ কয়েক বিঘা জমি নিয়ে তৈরি আশ্রমটি চালায় সেখানকার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্রীরামপুর শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২২ ০৬:২৭
Share: Save:

ভবঘুরে এবং মানসিক অসুখে ভোগা মহিলাদের রাস্তা থেকে তুলে এনে সমাজের মূলস্রোতে ফেরানোর চেষ্টা চলে এখানে। প্রান্তিক মহিলাদের জন্য তৈরি এ যেন এক আশ্রম! নাম ‘এ ভিউ’ হোম বা ‘স্বাধীন ও উদ্যোগী মহিলাদের গ্রাম’।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার জীবনতলায় বেশ কয়েক বিঘা জমি নিয়ে তৈরি আশ্রমটি চালায় সেখানকার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তাদের এই উদ্যোগকে এ বার স্বীকৃতি দিল শ্রমজীবী হাসপাতাল। অন্যন্য মানবিক কাজের সম্মান (সুদক্ষিণা লাহা স্মৃতি পুরস্কার) পেল সংস্থাটি। রবিবার শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালে সংস্থাটির প্রতিনিধি-চিকিৎসক মধুপা বক্সীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন পরিবেশ আন্দোলনের বর্ষীয়ান কর্মী নব দত্ত।

ওই হোমে আলো জলে সৌরবিদ্যুতে। কর্তৃপক্ষ জানান, শুধুমাত্র ভবঘুরে এবং মানসিক অসুস্থ মহিলাদেরই রাখা হয়। হোমের চৌহদ্দিতে খেত, পুকুর আছে। পুকুরের মাছ আবাসিকরা খান। বিক্রিও হয়।

কী ভাবে আশ্রয় পান পথবাসী মহিলারা?

হোম কর্তৃপক্ষ জানান, প্রথমে তাঁদের খাবার, পোশাক ইত্যাদি দিয়ে ভাব জমানোর চেষ্টা করা হয়। বোঝানো হয়, থাকা-খাওয়ার জায়গা মিলবে। রাজি হলে পুলিশকে জানিয়ে হোমে আনা হয়। কাউন্সেলিং চলে। ভাটপাড়া এবং মুকুন্দপুরেও দু’টি ইউনিট আছে। প্রথমে জীবনতলার হোমে চিকিৎসা করা এবং ঘর সাফাই, বিছানা গোছানো, জল তোলা, রান্নায় সহযোগিতা ইত্যাদি কাজ শেখানো হয়। একটু সুস্থ হলে ভাটপাড়ায় নিয়ে গিয়ে জিনিসপত্র কেনাকাটা, লোকজনের সঙ্গে কথা বলার মতো বিষয় শেখানো হয়। তৃতীয় পর্যায়ে মুকুন্দপুরে হাতের কাজ শেখানো হয় স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে। তিনটি জায়গা মিলিয়ে পঞ্চাশের বেশি মহিলা আছেন। ১০১৪ সাল থেকে প্রায় ৪০ জনকে বাড়ি ফিরিয়ে দেওয়া গিয়েছে। অনেকেই বাড়িতে ভাল আছেন। ভবঘুরে জীবনের ছায়া সরেছে মন থেকে। তবে, সকলকে বাড়ির লোক নিতে চান না। অনেকে নাম-ঠিকানা বলতে পারেন না। কারও ক্ষেত্রে ভাষার সমস্যা হয়। চেষ্টাচরিত্র করে বাড়ি ফেরানো গেলেও নিয়মিত ওষুধ খাওয়া হয় না।

কর্তৃপক্ষ জানান, বছরে প্রায় ২০-২২ লক্ষ টাকা খরচ। নিয়মিত দাতাদের থেকে ১২-১৪ লক্ষ টাকা আসে। বাকিটা অনিশ্চিত। অনুষ্ঠানে এসে প্রান্তিক শ্রেণির মানুষের জন্য শ্রমজীবীর সঙ্গে মিলে কাজের আগ্রহ প্রকাশ করেন মধুপা।

শ্রমজীবীর সহ-সম্পাদক গৌতম সরকার গিয়েছিলেন হোমে। তিনি বলেন, ‘‘যে মেয়েদের ঠিকানা ছিল ফুটপাত, তাঁরা বাড়ির পরিবেশে থাকছেন, সম্মানের সঙ্গে সমাজের মূলস্রোতে ফিরতে পারছেন, এমন উদ্যোগের কুর্নিশ না করে পারা যায়! যে মেয়েরা কিছু দিন আগেও রাস্তায় থাকতেন, তাঁরা আমাদের ডিম ভেজে, চা করে খাওয়ালেন।’’

শ্রেষ্ঠ গল্পের জন্য এ বারের শ্রমজীবীর ‘শর্মিলা ঘোষ সাহিত্য পুরস্কার’ পেলেন বাংলাদেশের লেখিকা রুখসানা কাজল। ২০২১ সালের জুলাই মাসে প্রকাশিত ‘নবান্ন’ পত্রিকায় ‘পেশোয়ার এক্সপ্রেস, ছুটছে বর্ধিত বগি’ গল্পের জন্য তিনি এই পুরস্কার পেলেন। লেখিকার হাতে পুরস্কার তুলে দেন কবি মৃদুল দাশগুপ্ত। পুরস্কারদাতারা জানান, কিষাণ চন্দের বিখ্যাত দাঙ্গাবিরোধী গল্প ‘পেশোয়ার এক্সপ্রেস’ গল্পকে অবলম্বন করে রুখসানা আরও করুণ, ভয়ানক সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন। গল্পে অভিশপ্ত পেশোয়ার এক্সপ্রেস থামেনি। বরং দেশান্তরে ছুটে চলছে। ক্রমেই বেড়েছে বগির সংখ্যা।

অনুষ্ঠানে ছিল অনুগল্প পাঠ, গান, কবিতা। সাহিত্যপত্র ‘শ্রমজীবী মন’ প্রকাশ করেন রুখসানা কাজল, কবি রামকিশোর ভট্টাচার্য, মৃদুল দাশগুপ্ত, ত্রিদিবেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের কার্যকরী সভাপতি ফণীগোপাল ভট্টাচার্য, বাসুদেব ঘটক, বিষ্ণু বিশ্বাস প্রমুখ।

অন্য বিষয়গুলি:

Serampore NGO Mental Patient
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE