জগদীশপুরের বিভিন্ন বাড়িতে পড়েছে এমন পোস্টার। —নিজস্ব চিত্র
হাওড়ার জগদীশপুরের প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান গোবিন্দ হাজরার বিরুদ্ধে এ বার পোস্টার পড়ল তাঁরই এলাকায়। প্রোমোটিং ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত ছিলেন গোবিন্দ। তাঁর তৈরি করা একাধিক বহুতল এবং নির্মাণে বুধবার দেখা যায় পোস্টার।
ওই পোস্টারে লেখা, ‘রাহু ভবন, চিটিংবাজির বিশ্বস্ত প্রতিষ্ঠান’। হাওড়ার জগদীশপুরের একাধিক বাড়িতে লাগানো হয়েছে এই পোস্টার। নিশানায় জগদীশপুরেরই প্রাক্তন পঞ্চায়েত প্রধান। আড়ালে আবডালে এলাকার অনেকেই যাঁকে ‘রাহু’ বলে ডাকেন। কিন্তু কেন? এলাকার অনেকেরই অভিযোগ, পঞ্চায়েত প্রধান থাকাকালীন গোবিন্দর ‘রাহুর দৃষ্টি’ যে সব জমি অথবা কারখানার উপর পড়েছে সেগুলি তিনি দখল করে নিয়েছেন যে কোনও উপায়ে। আর তা থেকেই তিনি হয়েছেন বিপুল সম্পত্তির মালিক। এমন ঘটনার নমুনাও পাওয়া গিয়েছে এলাকাবাসীর কাছে।
দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত গোবিন্দ এখন পুলিশের হেফাজতে। তাঁর বিরুদ্ধে জগদীশপুর হাটকে মুম্বইয়ের এক ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ। অভিযোগ, সরকারি পদ ব্যবহার করে পঞ্চায়েতে শংসাপত্র নিতে আসা মানুষজনের থেকে টাকা নেওয়ার। এ ছাড়া সরকারি প্রকল্পে বাড়ি বানানোর ক্ষেত্রেও গোবিন্দকে টাকা দিতে হত বলে অভিযোগ। আবাসন প্রকল্পে নির্মাণ সামগ্রীর সিন্ডিকেটও চালানোর অভিযোগ রয়েছে ধৃতের বিরুদ্ধে। জেলা পরিষদের খাস জমিতে পুকুর ভরাট করে ‘মল্লিকা ব্যাঙ্কোয়েট’ নামে অনুষ্ঠান বাড়ি তৈরির অভিযোগও উঠেছে। তালিকা আরও দীর্ঘ হয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্যে। জগদীশপুরেরই হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী কমল চন্দ বলেন, ‘‘প্রধান থাকাকালীন নিজের বাড়ি এবং বহুতল নির্মাণের জন্য গোবিন্দ হাজরা আমার থেকে রং এবং নানা সামগ্রী কিনেছিলেন। ৩ বছর ধরে পাওনা সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা। কিন্তু তা এখনও পাইনি। এ ছাড়া দোকান ঘর কেনার জন্য চার লাখ টাকা আগাম দিলেও এখনও দোকান দেননি প্রাক্তন প্রধান।’’
জোড়াফুল শিবিরের একাংশের খবর, ১৯৯৮ সালে তৃণমূল তৈরি হওয়ার সময়েই রাজনীতিতে যোগ দেন গোবিন্দ। ২০০৩ সালে তৃণমূলের টিকিটে পঞ্চায়েত ভোটে জিতে জগদীশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হন। টানা ১৮ বছর ছিলেন ওই পদে। এই দীর্ঘ সময়ে গোবিন্দই হয়ে উঠেছিলেন জগদীশপুরের হর্তাকর্তা। কেউ কেউ অবশ্য বলেন ‘বিধাতা’ও। ওই সময়ে তাঁর কথাই ছিল শেষ কথা। কিন্তু গত বিধানসভা ভোটের আগে ‘হাওয়া’ বুঝে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে বিজেপি-তে যোগ দেন তিনি।
এক সময়ের দাপুটে গোবিন্দ গ্রেফতার হতেই সরব স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে। এমনকি তাঁর নির্মিত বহুতল ও একাধিক নির্মাণে পড়েছে পোস্টারও। এ নিয়ে বালি জগাছা ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সুভাষ রায়ের অভিযোগ, ‘‘দুর্নীতির অভিযোগে গোবিন্দ হাজরাকে দল থেকে কিছুদিনের জন্য বহিস্কার করা হয়েছিল। বহু মানুষকে তিনি ঠকিয়ে টাকা রোজগার করেছেন।’’ গোবিন্দকে নিয়ে ষড়যন্ত্রের তত্ত্বে অবশ্য অনড় পদ্মশিবির। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য উমেশ রাই বলেন, ‘‘গোবিন্দ হাজরা তৃণমূলের দাবাং নেতা। তিনি ৪ বারের প্রধান। তখন তৃণমূল তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করেনি। এখন বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন বলেই এ সব করা হচ্ছে। এ সব চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy