Advertisement
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪
Howrah

হাওড়ায় জমা জলে নরক-যন্ত্রণা, মামলা করায় ঘুম ভাঙ‌‌ল প্রশাসনের

কোনও প্রত্যন্ত গ্রাম নয়, এমনই অসহনীয় পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন হাওড়া ও বালি শহর লাগোয়া ন’পাড়া, সাঁপুইপাড়া, আনন্দনগর ও বসুকাটি অঞ্চলের হাজার হাজার বাসিন্দা।

Logged water

দুর্ভোগ: হাওড়ার নিশ্চিন্দা এলাকায় কিছু দিন ধরেই জমে রয়েছে জল। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

দেবাশিস দাস
হাওড়া শেষ আপডেট: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৯:৩৪
Share: Save:

বৃষ্টি হয়েছে। জল জমেছে। তার পরে সেই জল থেকে গিয়েছে প্রায় দেড় মাস ধরে। এক দিকে, সেই জমা জলে ঘর-বাড়ি ও রাস্তাঘাট জুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে সাপ, ব্যাঙ। অন্য দিকে, দূষিত ওই জলের কারণে এলাকায় দেখা দিয়েছে জলবাহিত নানা রোগভোগ। সম্প্রতি ডেঙ্গিও থাবা বসিয়েছে সেখানে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, আতঙ্কিত ও তিতিবিরক্ত বাসিন্দারা কেউ কেউ ঘর-বাড়ি বিক্রি করে দিয়ে চলে যাচ্ছেন। এলাকা সূত্রের খবর, প্রশাসনের সর্বস্তরে জানিয়েও কোনও ফল না হওয়ায় কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

কোনও প্রত্যন্ত গ্রাম নয়, এমনই অসহনীয় পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছেন হাওড়া ও বালি শহর লাগোয়া ন’পাড়া, সাঁপুইপাড়া, আনন্দনগর ও বসুকাটি অঞ্চলের হাজার হাজার বাসিন্দা। তাঁদের অভিযোগ, ওই এলাকায় নগরায়ণ হয়েছে, বহুতল বাড়িও তৈরি হয়েছে, কিন্তু তৈরি করা হয়নি কোনও সুপরিকল্পিত নিকাশি ব্যবস্থা। যার ফলে এক এলাকার বর্জ্য জল গিয়ে জমা হচ্ছে পাশের এলাকায়। আবার সেই পাড়ার জল গিয়ে পড়ছে আর এক এলাকায়। এমনও দেখা যাচ্ছে, আশপাশের পাঁচটি এলাকার জল গিয়ে পড়ছে একটি নির্দিষ্ট এলাকায়। ফলে, সেই এলাকা হঠাৎ করে ভেসে যাচ্ছে জলে। নিকাশি ব্যবস্থার বেহাল দশার কারণে ওই জল জমে থাকছে মাসের পর মাস। দুর্গন্ধযুক্ত এমন পচা জলেই গত দেড় মাস ধরে বসবাস করছেন ন’পাড়া, সাঁপুইপাড়া, আনন্দনগর ও বসুকাটি এলাকার বাসিন্দারা। এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, বড় রাস্তা থেকে অলিগলি— সর্বত্রই জমে রয়েছে হাঁটু সমান কালো, নোংরা জল। দুর্গন্ধে নাকে রুমাল দিয়ে চলাফেরা করছেন প্রায় সকলেই। সেই পচা জলই ঢুকে পড়েছে অনেকের বাড়ির ভিতরে। ঘরের মধ্যে ইট পেতে উঁচু করতে হয়েছে মেঝে। কার্যত বিছানার উপরেই সংসার করছেন বাসিন্দারা।

ন’পাড়ার বাসিন্দা বিমল ভট্টাচার্য জানালেন, ২০১৪ সালের পর থেকেই ওই গোটা অঞ্চলের বাসিন্দারা এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলেছেন। যত দিন যাচ্ছে, এই সমস্যা বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের এখন সাপ, ব্যাঙের সঙ্গে এক ঘরে বাস করতে হচ্ছে। ছেলেমেয়েরা অনেকেই বাধ্য হয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। ঘরে ঘরে ডেঙ্গি রোগী। এ ছাড়া, জলবাহিত নানা রোগ তো হচ্ছেই। এর সঙ্গে রয়েছে পানীয় জলের সমস্যা। অনেকেই ঘরবাড়ি বিক্রি করে এলাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।’’ বিমল জানান, হাওড়া জেলা প্রশাসন থেকে নবান্ন, সর্বস্তরে তাঁরা চিঠি দিয়ে এই পরিস্থিতি থেকে রেহাই চেয়ে আবেদন করেছেন।
কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এলাকার আর এক বাসিন্দা শ্রীতমা বিশ্বাস বললেন, ‘‘এই এলাকাটি সাঁপুইপাড়া-বসুকাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীনে। কিন্তু এখানে গ্রাম পঞ্চায়েত বা প্রশাসন আছে বলে তো মনে হয় না। মাসের পর মাস এ ভাবে পাঁক জলের মধ্যে কোনও মানুষ বসবাস করতে পারে কি?’’

পরিস্থিতির কোনও উন্নতি না হওয়ায় সম্প্রতি কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছেন এলাকার বাসিন্দারা। তার পরেই কিছুটা নড়েচড়ে বসেছেন এলাকার জ‌নপ্রতিনিধিরা। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের সভাপতি কল্যাণ ঘোষ স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যদের নিয়ে এলাকা ঘুরে দেখেছেন। আশ্বাস দিয়েছেন দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার।

এত দিন তা হলে টনক নড়ল না কেন? কল্যাণের সাফাই, ‘‘সাঁপুইপাড়া-বসুকাটি অঞ্চলটি গামলার মতো। আশপাশের চার-পাঁচটি এলাকার জল ওই জায়গায় গিয়ে জমা হয়। এটা দীর্ঘ কয়েক দশকের সমস্যা। আমি এলাকা ঘুরে দেখেছি। ঠিক হয়েছে, ইএসআই হাসপাতালের পাশ দিয়ে চকপাড়া-সাঁপুইপাড়া থেকে একটি খাল কেটে শেওড়াপোঁতা খালে ফেলা হবে। তা হলে হয়তো ৭০-৮০ শতাংশ জল নেমে যাবে। আসলে নিচু জমি কিনে মানুষ বাড়ি করায় এই সমস্যা আরও বেড়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Howrah drainage system PIL
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy