Advertisement
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
বিদ্যুৎ দফতরের ‘গাফিলতি’তে বাড়ছে ক্ষোভ
Electrocuted

Electrocuted: এ বার তার ছিঁড়ে পড়ল পুকুরে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট মহিলা

সংস্থার কর্মকর্তাদের দাবি, মৃতদের পরিবারকে এমন অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, যাতে তারা মর্যাদাপূর্ণ ভাবে বাঁচতে পারেন।

বিপজ্জনক: পুকুরে পড়ে রয়েছে বিদ্যুতের তার।

বিপজ্জনক: পুকুরে পড়ে রয়েছে বিদ্যুতের তার। ছবি: সুব্রত জানা

নিজস্ব সংবাদদাতা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০২২ ০৫:২০
Share: Save:

বাড়ির পাশের পুকুরে বুধবার সকালে কাপড় ধুচ্ছিলেন এক যুবতী। আচমকাই বিদ্যুতের তার গায়ে ছিঁড়ে পড়ায় তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করানো হল নার্সিংহোমে।

ফের ঘটনাস্থল হাওড়ার উলুবেড়িয়া। চলতি মাসে এখানে খোলা এবং ছেঁড়া তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হলেন তিন জন। আগের দু’টি ঘটনায় এক যুবক এবং এক বৃদ্ধা মারা যান। পর পর এমন ঘটনায় ক্ষোভ চরমে উঠেছে এলাকাবাসীর। এ দিনের দুর্ঘটনার পরেও উলুবেড়িয়া-২ ব্লকের নয়াচক নামে ওই গ্রামে ছেঁড়া তার জুড়তে গিয়ে এলাকাবাসীর ক্ষোভের মুখে পড়েন বিদ্যুৎ বণ্টন বিভাগের কর্মীরা। ওই দফতরের গাফিলতি এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জেরে এমন ঘটছে বলে অভিযোগ তোলেন গ্রামবাসী। পুরনো তার অবিলম্বে বদলে আবরণে মোড়া তার লাগানোর দাবি ওঠে।

বিদ্যুৎ দফতর এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ মৌমিতা মালিক নামে বছর পঁচিশের ওই মহিলা পুকুরে কাপড় ধুচ্ছিলেন। তখনই ওই দুর্ঘটনা। বাড়ির লোকেরা জানান, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট অবস্থায় মৌমিতা কার্যত ছটফট করতে থাকেন। ট্রান্সফর্মার থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তাঁকে উদ্ধার করা হয়। উলুবেড়িয়ার একটি নার্সিংহোমে তাঁকে ভর্তি করানো হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা কেশব বাগ বলেন, ‘‘১৯৮৫ সালে গ্রামে বিদ্যুৎ আসে। তখনকার তারই চলছে। ছিঁড়ে গেলে জোড়াতালি দেওয়া হয়। পাকাপোক্ত কাজ না করায় মানুষের জীবনের ঝুঁকি বাড়ে।’’ আর এক গ্রামবাসীর ক্ষোভ, ‘‘পুরনো তার বদলে কভার দেওয়া নতুন তার লাগাতে বহু বার বিদ্যুৎ দফতরে বলা হয়েছে। ওরা শোনেনি।’’

গত ২ জুলাই উলুবেড়িয়া পুরসভার ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ গঙ্গারামপুরে ছেঁড়া তারে সাইকেল জড়িয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান বছর পঁচিশের এক যুবক। মঙ্গলবার ওই ওয়ার্ডেরই বাহির গঙ্গারামপুরে ঘাস কাটতে গিয়ে ছেঁড়া তারে তড়িদাহত হয়ে একই পরিণতি হয় এক বৃদ্ধার। বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার বীরশিবপুর সাব-সেন্টারের ম্যানেজার সন্দীপ দাস বলেন, ‘‘নতুন দায়িত্ব নিয়েছি। দুর্ঘটনার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’’

উলুবেড়িয়া-২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শেখ ইলিয়াস বলেন, ‘‘খোলা তার, বিদ্যুতের খুঁটি স্পর্শ করতে সাধারণ মানুষকে নিষেধ করা হচ্ছে। খোলা তারের পরিবর্তে সর্বত্র কভার দেওয়া তার লাগানোর জন্য পঞ্চায়েত সমিতির তরফে বিদ্যুৎ দফতরকে বলা হবে।’’ সন্দীপবাবুর দাবি, সব জায়গাতেই ‘কভার’ দেওয়া তার লাগানোর কাজ চলছে। নয়াচকেও শীঘ্রই এমন তার লাগানো হবে।’’ খোলা তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার প্রতিটি ঘটনার তদন্ত চলছে বলে ওই দফতর সূত্রের দাবি।

অবশ্য শুধু হাওড়া নয়, কলকাতা-সহ রাজ্যের অন্যত্রও সম্প্রতি খোলা তারে সাধারণ মানুষের বিদ্যুৎস্পৃষ্ট এবং তার জেরে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এই সব ঘটনায় মৃতদের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং খোলা তারের বিপদ এড়াতে সার্বিক রক্ষণাবেক্ষণের দাবিতে সরব হয়েছে হুগলির চন্দননগরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আইন সহায়তা কেন্দ্র। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের প্রধান সচিব, রাজ্য পুলিশের ডিজি, বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা ও সিইএসসি-র চেয়ারম্যান-সহ বিভিন্ন দফতরে চিঠি দিয়েছে তারা।

সংস্থার কর্মকর্তাদের দাবি, মৃতদের পরিবারকে এমন অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, যাতে তারা মর্যাদাপূর্ণ ভাবে বাঁচতে পারেন। কোথায় কোথায় খোলা তার আছে, চিহ্নিত করে আধুনিক প্রযুক্তিতে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। হুকিং বন্ধ করতে হবে। সংগঠনের সম্পাদক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ দফতরের গাফিলতি, দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। এর দায় নিয়ে দফতরের শীর্ষকর্তাদের অপসারণ করা হবে না কেন?’’

অন্য বিষয়গুলি:

Electrocuted Uluberia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy