শুক্রবার, বেলুড় স্টেশন রোডে বিক্ষোভ সুপ্রিয়া সাহার মৃত্যুর পরে পথ অবরোধ। নিজস্ব চিত্র।
প্রতিদিনের মতোই স্বামীর টোটোয় চেপে মেয়েকে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছিলেন তরুণী। মায়ের হাত ধরে বসেছিল চতুর্থ শ্রেণির বালিকা। আচমকাই পিছন থেকে আসা বেপরোয়া গতির গাড়ির ধাক্কায় টোটো থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়েন তরুণী। মেয়ের চোখের সামনেই মাকে পিষে দিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে চম্পট দেয় সেই গাড়ি। শুক্রবার সকালে বালির ষষ্ঠীতলার ওই দুর্ঘটনার পরে দ্রুত তরুণীকে বেলুড় স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম সুপ্রিয়া সাহা (২৫)। তিনি চাঁদমারির অরবিন্দনগরের বাসিন্দা। রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। আটক করা যায়নি গাড়িটিও।
হাওড়া সিটি পুলিশের এসিপি (উত্তর) জর্জ জন বলেন, ‘‘গাড়ি ও মালিককে চিহ্নিত করা হয়েছে। কে বা কারা তাতে ছিলেন, তা-ও জানার চেষ্টা হচ্ছে। সকলেরই খোঁজ চলছে।’’ স্থানীয়দের অভিযোগ, বিহার, ঝাড়খণ্ডের অল্পবয়সি যুবকেরা ষষ্ঠীতলা, সাঁপুইপাড়া, পালপাড়া-সহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ঘর ভাড়া নিয়ে কল সেন্টারের ব্যবসা করছেন। তার আড়ালেই চলছে অনলাইন প্রতারণা চক্র। সারা দিন ওই কাণ্ডের পরে সন্ধ্যা হতেই শুরু হয় হুল্লোড়। রাতে বা খুব সকালে তাঁরা বিভিন্ন গাড়ি, বাইক নিয়ে বেপরোয়া গতিতে যাতায়াত করেন। নিজেদের ‘ঈগল’ গ্যাং বলেও পরিচয় দেন বলে দাবি স্থানীয়দের।
স্থানীয় বাসিন্দা বিশ্বজিৎ সাউ, শুভ সাহাদের অভিযোগ, ‘‘পুরো এলাকাটা জামতাড়া হয়ে উঠেছে। এঁরা অনলাইন প্রতারণা ও বিভিন্ন অনৈতিক কাজ করেন। পুলিশে লিখিত অভিযোগ করেও লাভ হয়নি।’’ বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, চুক্তির ভিত্তিতে নিজে চালানোর শর্তে নিত্যনতুন গাড়ি ভাড়া করেন ওই যুবকেরা। পুলিশ সূত্রের খবর, এ দিন দুর্ঘটনা ঘটানো গাড়িটিতে চার জন ছিলেন। ৯ ডিসেম্বর বারাসত আঞ্চলিক পরিবহণ কার্যালয় থেকে ওই গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন হয়েছে।
ভিন্ রাজ্যের যুবকদের ভিড় বাড়লেও নিশ্চিন্দা থানার পুলিশের নজরদারি নেই, এই অভিযোগে এ দিন পথে নামেন স্থানীয়েরা। শামিল হন টোটোচালকেরাও। সকলে মিলে চামুড়িয়া রোড (বেলুড় স্টেশন রোড) অবরোধ করেন। কয়েক ঘণ্টা পরে পুলিশকর্তাদের আশ্বাসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। জর্জ বলেন, ‘‘অভিযোগ শুনেছি। সব খতিয়েদেখা হচ্ছে।’’
অরবিন্দনগরের বাসিন্দা, টোটোচালক সুমন সাহার ন’বছরের মেয়ে শ্রুতি নিশ্চিন্দা বালিকা বিদ্যালয়ের পড়ুয়া। প্রতিদিন সকালে স্ত্রী ও মেয়েকে টোটোয় চাপিয়ে বিদ্যালয়ে পৌঁছে দিতেন সুমন। এ দিনও সকাল সওয়া ৬টা নাগাদ তাঁরা ষষ্ঠীতলা দিয়ে যাচ্ছিলেন। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তায় টোটোর চাকা ঘষে যাওয়ার দাগ তখনও স্পষ্ট। পাশে একটি দোকানের দেওয়ালে ধাক্কা মেরেছিল টোটোটি। সেই দাগও রয়েছে। ঘটনাস্থলের কাছেই দোকান সমীর বেরার। তিনি জানান, বিলাসবহুল একটি গাড়ি আচমকাই বেশ কয়েক বার ধাক্কা মারে টোটোকে। টোটোটি বেসামাল হয়ে দোকানে ধাক্কা মারতেই ছিটকে পড়েন সুপ্রিয়া। তিনি চালকের ডান দিকে বসেছিলেন। সমীর বলেন, ‘‘মহিলা পড়ে যেতেই গাড়িটি এক বার দাঁড়িয়েও ওঁর উপর দিয়েই চালিয়ে দেয়। চিৎকার করে ধাওয়া করেও কিছু করতে পারিনি। গাড়িটি তীব্র গতিতে আনন্দনগরের দিকে চলে যায়।’’
আনন্দনগর থেকে সহজেই ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে ওঠা যায়। ঘটনাস্থলের সামনে দাঁড়িয়ে আক্ষেপ করছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা এক বৃদ্ধা। তিনি বলেন, ‘‘প্রথমে বিকট আওয়াজ শুনি। তার পরেই একটি বাচ্চার কান্নার আওয়াজ। বেরিয়ে দেখি ওই কাণ্ড। মেয়েটিকে কোলে শোয়ালাম। পরক্ষণেই এলিয়ে পড়ল।’’
সুমনদের বাড়ি গিয়ে দেখা গেল, ঠাকুরমা সীমার কোলে সুপ্রিয়ার ন’মাসের ছেলে। শ্রুতি বলছে, ‘‘ওরা পিছন থেকে ধাক্কা মারল। মা পড়ে যেতেই গাড়িও চালিয়ে দিল। এক বার আওয়াজ করেই চুপ করে গেল মা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy