দাদার সঙ্গে সঞ্জয় (বাঁ দিকে)। চুঁচুড়ায়। —নিজস্ব চিত্র।
বাবার চোখ অপারেশন হবে। তাই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ভাই সঞ্জয় সাহা ওরফে জয়কে বাড়ির কাছে মাসির বাড়িতে রেখে গিয়েছিলেন দাদা মৃত্যুঞ্জয়। সোমবার উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার সেই বাড়ি থেকেই নিখোঁজ হয়ে যান বছর ছত্রিশের সঞ্জয়। প্রথমে বাসে চেপে কল্যাণী, সেখান থেকে হেঁটে চুঁচুড়ায় হুগলি মোড়ের কাছে এসে ঘোরাঘুরি করতে থাকেন।
খবর পেয়ে তাঁকে উদ্ধার করে কারবালা মোড়ের কাছের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। পকেটে ছিল একটি ছোট মোবাইল ফোন। সেই ফোনের সৌজন্যেই মঙ্গলবার, বিশ্ব স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দিবসে জয়কে দাদা মৃত্যুঞ্জয়ের হাতে তুলে দিলেনম সংস্থার কর্ণধার ইন্দ্রজিৎ দত্ত।
মৃত্যুঞ্জয় জানান, তাঁদের বাবা বয়স্ক। বছর কয়েক আগে মা মারা গিয়েছেন। তারপর থেকে ভাইয়ের সব দায়িত্ব তাঁর উপরেই। তিনি বলেন, ‘‘ভাই হারিয়ে গিয়েছে শুনে, আমি দিশাহারা হয়ে গিয়েছিলাম। সংস্থার কর্মীদের ধন্যবাদ।’’
হাবড়ার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের রেল কলোনি এলাকার বাসিন্দা জয় জিনগত রোগে আক্রান্ত। বয়স বাড়লেও এই ধরনের রোগে মানসিক বিকাশ হয় না। বাড়ে না উচ্চতা। কথায় জড়তা থাকে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে বাকশক্তিও থাকে না। শ্রবণ ক্ষমতাও কম হয়।
পেশায় বই ব্যবসায়ী মৃত্যুঞ্জয় জানান, এর আগেও দু'এক বার জয়ের খোঁজ মিলছিল না। কিন্তু পরে আশপাশেই তাঁকে পাওয়া গিয়েছিল। সে কথা ভেবে নিজের একটি পুরনো টু-জি ফোন সব সময়ে ভাইয়ের পকেটে পুরে দিতেন মৃত্যুঞ্জয়। সিমহীন ফোনটিতে শুধুমাত্র তাঁর
নম্বর সেভ রয়েছে। কিন্তু নিয়মিত চার্জ না দেওয়ায় বন্ধ ছিল ফোনটি। ইন্দ্রজিৎ জানান, সোমবার রাতে জয়ের পকেটে থাকা ওই ফোনের চার্জার জোগাড় করতেই খানিকটা সময় লেগেছিল। তারপর চার্জ উঠতে আরও প্রায় আধ ঘণ্টা। পরে দেখা গেল ফোনে একটি মাত্র নম্বর, ‘দাদা’ বলে যা সেভ করা।
মঙ্গলবার ভাইকে দেখে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন মৃত্যুঞ্জয়। কিছুক্ষণ পরে দাদার হাত ধরে ঘরের পথে রওনা দেন সঞ্জয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy