Advertisement
E-Paper

ট্যাংরায় খুন কেন এবং কী ভাবে, দে ভাইয়েরা এখনও আইসিইউতে, তিনটি তত্ত্ব ধরে এগোচ্ছে পুলিশ

বৈভবের আড়ালে কোন রহস্য ঘনিয়ে উঠেছিল ট্যাংরার দে পরিবারে? আত্মীয় বা প্রতিবেশীরা অনটনের তত্ত্ব মানতে পারছেন না। তবে কি অন্য কোনও কারণ? নানা দিক খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

ট্যাংরার দে পরিবারে কোন রহস্য ঘনিয়ে উঠেছিল, উত্তর খুঁজছে পুলিশ।

ট্যাংরার দে পরিবারে কোন রহস্য ঘনিয়ে উঠেছিল, উত্তর খুঁজছে পুলিশ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২২:৪৭
Share
Save

২১/সি অটল শূর রোডের ঝাঁ চকচকে চারতলা বাড়িটি আদ্যোপান্ত সিসি ক্যামেরায় মোড়া। বাড়ির বাইরে থেকে উঁকি মেরেও ভিতরের কিছু দেখার উপায় নেই। দরজা-জানলায় কাচের আতিশয্য দেখলে বোঝা যায়, প্রায় প্রতিটি ঘরেই রয়েছে শীতাতপ যন্ত্র। অন্দরমহলও বেশ রঙচঙে, গোছানো। বৃহস্পতিবার সকালেও বাড়ির দরজার বাইরে ঝুলছিল ফুলের প্যাকেট, লেবু এবং লঙ্কা। দে পরিবারের সকলে নিত্যদিন পুজোআচ্চা নিয়ে থাকতেন। প্রতি বছর ঘটা করে লক্ষ্মী এবং সরস্বতী পুজো হত বাড়িতেই। ট্যাংরা অঞ্চলে দে ভাইদের কারখানাটিও ছিল বেশ বড়, চোখে পড়ার মতো। কারখানার বাগানে এখনও ফুটে আছে রঙিন বোগেনভিলিয়া। এমন পরিপাটি বাড়িতে যে এমন একটা কাণ্ড ঘটে গিয়েছে, তা এখনও মানতে পারছেন না অনেকে। যাঁরা প্রণয়, প্রসূনদের চিনতেন, তাঁদের এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না দে পরিবারের অন্দরের বাস্তব। পাড়ায় নানারকম কাহিনি ডালপালা মেলছে। কী ভাবে বাড়ির দুই বধূ খুন হয়ে গেলেন, ১৪ বছরের কিশোরীকেও কেন রেহাই দেওয়া গেল না, কী ভাবে কিশোরকে নিয়ে গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়লেন দুই ভাই— এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে পুলিশ। একটার পর একটা সূত্র জুড়ে চলেছে তারা। রহস্য জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে।

রোমি দে, সুদেষ্ণা দে এবং প্রিয়ম্বদার দেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে বৃহস্পতিবার দুপুরে। সন্ধ্যায় তার রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসে। সেই সঙ্গেই খুনের তত্ত্বে সিলমোহর পড়ে যায়। রিপোর্ট বলছে, হাতের শিরা এবং গলা কাটা অবস্থায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে দুই বধূর মৃত্যু হয়েছে। ঘুমন্ত অবস্থায় কেউ বা কারা তাঁদের খুন করেছেন। প্রিয়ম্বদার মৃত্যু হয়েছে খাদ্যে বিষক্রিয়ার ফলে। ময়নাতদন্তের অন্তত ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টা আগে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, প্রণয়-প্রসূনদের আঘাত গুরুতর হলেও তাঁরা স্থিতিশীল। আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা চলছে ১৪ বছরের প্রতীপেরও। তাঁদের শরীরের অনেক হাড়গোড় ভেঙেছে। ফলে পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও সময় লাগবে।

মঙ্গলবার রাত ১২টার পরেই প্রতীপকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন প্রণয় এবং প্রসূন। পুলিশি জেরার মুখে দাবি, কিশোরকে হাসপাতালে ভর্তি করানোর উদ্দেশ্য ছিল তাঁদের। কিন্তু প্রতীপ হাসপাতালে যেতে চায়নি। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গিয়েছে, খানিকটা টলতে টলতেই সে হাঁটছে। পরে বুধবার ভোর ৩টে নাগাদ তাঁদের গাড়ি বাইপাসের ধারে অভিষিক্তা মোড়ের কাছে মেট্রোর পিলারে ধাক্কা মারে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে এই দু’ঘণ্টা গাড়ি নিয়ে কোথায় ঘুরছিলেন তাঁরা? ধোঁয়াশা রয়ে গিয়েছে। ট্যাংরাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করতে মূলত তিনটি তত্ত্ব ধরে এগোচ্ছে পুলিশ।

ছক কষলেন কে

ট্যাংরাকাণ্ডে প্রথম থেকেই আত্মহত্যা এবং আত্মহত্যার চেষ্টার একটি তত্ত্ব উঠে এসেছে। আহত দুই ভাই হাসপাতাল থেকে দাবি করেছিলেন, তাঁরা ছ’জনই একসঙ্গে ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন। তার পর কিশোরকে নিয়ে দুই ভাই গাড়িতে বেরোন। আত্মহত্যার উদ্দেশ্যেই ধাক্কা মারেন পিলারে। পুলিশ জানিয়েছিল, এই বয়ান যাচাই করার প্রয়োজন রয়েছে। দেখা গিয়েছে, মৃত দুই মহিলার হাতের শিরা কাটা। একই ভাবে হাতে কাটার দাগ রয়েছে প্রণয়ের। কিন্তু প্রসূনের শরীরে অন্য অনেক ক্ষত থাকলেও হাতে এমন কোনও দাগ নেই। আত্মহত্যার উদ্দেশ্যেই যদি হাত কাটা হয়ে থাকে, প্রসূন কেন হাত কাটলেন না? সকলে মিলে আত্মহত্যা করার পরিকল্পনাই বা কার মাথায় এল? কত দিন আগে কে এতগুলি মৃত্যুর ছক কষেছিলেন? দে ভাইরা দাবি করেছেন, সোমবার রাতে একসঙ্গে তাঁরা ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলেন। পরে দুই ভাইয়ের ঘুম ভেঙে যায়। জেগে ওঠে প্রতীপও। পুলিশের অনুমান, এর পর ঘুমন্ত অবস্থায় দুই বধূর হাতের শিরা কেটে দেওয়া হয়। দুই ভাইয়ের শরীরে কেন ঘুমের ওষুধের প্রভাব পড়ল না? পুলিশকে ভাবাচ্ছে তা-ও। অনুমান, অন্য কোনও উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন তাঁরা। আদৌ আত্মহত্যা করতে চাননি। বাইপাসে তাঁদের গাড়িটি দুর্ঘটনার কবলে না-পড়লে সেই উদ্দেশ্যও হয়তো সফল হত। দুই বধূ-সহ তিন জনকে যে প্রণয় বা প্রসূনই খুন করেছেন, তার নিশ্চয়তাও এখনও পাওয়া যায়নি। এই ঘটনায় বাইরের কারও যোগ থাকলেও থাকতে পারে। কোনও সম্ভাবনাই এখনও উড়িয়ে দেয়নি পুলিশ।

দেনার বোঝা

ট্যাংরার দে পরিবার ঋণের বোঝায় জর্জরিত হয়ে পড়েছিল। খোঁজ নিয়ে পুলিশ জানতে পেরেছে, তাঁদের বাড়িটিও বন্ধক দেওয়া হয়েছিল। অন্তত ছ’টি ব্যাঙ্ক এবং সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলেন দুই ভাই। দেনার পরিমাণ হয়েছিল কয়েক কোটি টাকা। পাওনাদারদের হাত থেকে রেহাই পেতেই কি একসঙ্গে সকলে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন? যদি তা-ই হয়, তবে কেন পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হল না? কেন তিন জন মরলেন, বাকিরা বেঁচে গেলেন? ‘ঋণের জন্য আত্মহত্যার চেষ্টা’ বলে যে দাবি দে ভাইয়েরা করে আসছেন, তা মানতে পারছেন না তাঁদের প্রতিবেশী এবং আত্মীয়েরা। পাড়ার মুদির দোকানেও কখনও তাঁরা ধারবাকিতে জিনিস নেননি। বাড়ি, গাড়ি বা কারখানার কোথাও অনটনের ছাপ নেই। প্রতি দিন নিয়ম করে তাঁদের গাড়ি ধোওয়া হত। কোনও বিলাসিতা বা বৈভবে রাশ টানা হয়নি। বুধবার তিন জনের মৃত্যুর খবর শুনে ট্যাংরায় গিয়েছিলেন ব্যবসায়ী মনোজ গুপ্ত। তিনি দে ভাইদের চামড়ার জোগান দিতেন এক সময়ে। তাঁদের থেকে বেশ কিছু টাকা তাঁর পাওনা ছিল। একাধিক বার তাঁর চেক বাউন্স করে যায় বলে জানান মনোজ। কিন্তু টাকার জন্য প্রণয়দের উপর কোনও রকম চাপ দেননি বলেই দাবি করেছেন। এমনকি, টাকার জন্য তাঁদের ব্যবসাও যে আটকে ছিল, তা নয়। মনোজ দাবি করেছেন, ব্যবসা ভালই চলছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে খবর পেতেন তিনি। ফলে শুধু আর্থিক সমস্যার কারণে এত বড় সিদ্ধান্ত নিলেন সকলে মিলে, এই তত্ত্বের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অনেকে বলছেন, ঋণ শোধের জন্য কারখানাটিও তো বিক্রি করে দিতে পারতেন তাঁরা। মৃত্যুর পথেই কেন হাঁটতে হল?

জটিল মনস্তত্ত্ব

শুধু আর্থিক সমস্যা নয়, ট্যাংরাকাণ্ডের নেপথ্যে জটিল কোনও মনস্তত্ত্ব থাকতে পারে, অনুমান পুলিশের। হতে পারে, পরিবারের অন্দরে এমন কোনও সমস্যা বড় হয়ে দেখা দিয়েছিল যে, কেউ আর বেঁচে থাকতে চাননি। একসঙ্গে সজ্ঞানে হয়তো সকলে ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলেন। যদি তা-ই হয়, তবে শিরা কেটে খুন বা গাড়ি দুর্ঘটনার ‘প্ল্যান বি’ কি আগেই ছকে রেখেছিলেন প্রসূন বা প্রণয়? তাঁরা কি আদৌ বেশি ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলেন? কী এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে, ঘুমন্ত অবস্থায় দুই বধূ খুন হলেন? কেন তাঁদের দেহ দেখে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লেন বাকিরা? দোতলার তিনটি ঘরে আলাদা আলাদা ভাবে তিন জনের দেহ কেন পড়েছিল? একসঙ্গে একই সময়ে কি তিন ঘরে তিনটি খুন হয়? দে ভাইয়েরা হাসপাতাল থেকে যে বয়ান দিয়েছেন, তার সঙ্গে বাস্তবের একাধিক সূত্র মেলানোর চেষ্টা করছে পুলিশ। মূলত এই তিন তত্ত্বই রয়েছে তাদের সামনে।

কার মৃত্যু কী ভাবে

ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, রোমি দে-র দুই হাতের কব্জির শিরা কাটা অবস্থায় ছিল। গলায় ছিল একটি মাত্র কাটা ক্ষত। ধারালো কিছু দিয়ে তাঁর গলায় বাঁ দিক থেকে ডান দিকে এক বার আঘাত করা হয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। সুদেষ্ণা দে-র দুই হাতেও শিরা কাটা ছিল। গলায় ছিল একটি গভীর ক্ষত। এই আঘাতের ফলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ, রোমি এবং সুদেষ্ণার মৃত্যুর ধরন প্রায় একই রকম। ১৪ বছরের প্রিয়ম্বদা দে-র মৃত্যু হয়েছে খাদ্যে বিষক্রিয়ার জেরে। তার বুক, দুই পা, ঠোঁট এবং মাথার তালুতে একাধিক আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। কিশোরীর দুই হাত এবং পা নীল হয়ে গিয়েছিল। পেটের ভিতরেও রক্তক্ষরণ হয়েছে তার। পেটে যে খাবার ছিল, তা পুরোপুরি হজম হয়নি। ওই খাবারে ছিল হলুদ এবং সাদাটে কিছু কণিকা, তাতে ওষুধের গন্ধ ছিল। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, শেষ বার খাবার খাওয়ার তিন থেকে ছ’ঘণ্টার মধ্যে এই তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর সময় ময়নাতদন্তের অন্তত ৩৬ থেকে ৪৮ ঘণ্টা আগে।

কেমন আছেন দে ভাইরা?

প্রণয়, প্রসূন এবং প্রতীপ— তিন জনই বাইপাসের ধারের একটি হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। প্রসূনের পাঁজরের বেশ কয়েকটি হাড় ভেঙে গিয়েছে। কনুই থেকে কব্জি পর্যন্ত যে হাড় (আলনা) রয়েছে, তা সরে গিয়েছে। অর্থোপেডিক সার্জন, প্লাস্টিক সার্জনের অধীনে তাঁর চিকিৎসা চলছে। প্রসূনের দাদা প্রণয় দে আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন। দুর্ঘটনার কারণে শরীরে গুরুতর চোট-আঘাত লেগেছে। পিলারে গাড়ির ধাক্কার অভিঘাতে তাঁর কোমরের হাড় ভেঙে গিয়েছে। দুর্ঘটনার সময়ে গাড়ির ড্যাশবোর্ডের সঙ্গে হাঁটুর ধাক্কায় এ রকম হতে পারে। বাঁ পায়ের নীচের অংশে ‘পিন ট্রাকশন’ দেওয়া হয়েছে। অস্থি বিশেষজ্ঞ-সহ বেশ কয়েক জন চিকিৎসক তাঁর চিকিৎসা করছেন। ১৪ বছরের কিশোরের শরীরেও রয়েছে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন। তার ডান বাহু, আলনা ভেঙে গিয়েছে। কব্জি এবং গলায় গুরুতর চোট লেগেছে।

পায়েস-রহস্য

দে পরিবারে যে বিপর্যয় নেমে এসেছে, তাতে পায়েসের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। আহতদের বয়ান অনুযায়ী, সোমবার রাতে একসঙ্গে তাঁরা পায়েস খেয়েছিলেন। তাতে ছিল ঘুমের ওষুধ। সকলে সেই পায়েস খেয়েছিলেন কি না, কার পায়েসে কতটা ঘুমের ওষুধ ছিল, পুলিশ খতিয়ে দেখছে। কারণ ওই পায়েসেই মৃত্যু হয়েছে ১৪ বছরের প্রিয়ম্বদার। তার মা এবং কাকিমা পায়েস খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। ঘুমন্ত অবস্থায় হাতের শিরা কেটে তাঁদের খুন করা হয়।

গাড়ি নিয়ে দু’ঘণ্টা কোথায় ঘোরাঘুরি?

ট্যাংরার অটল শূর রোডের বাড়ি থেকে মঙ্গলবার রাত ১২টা ৫০ মিনিট নাগাদ গাড়িতে চেপে বেরিয়ে গিয়েছিলেন দুই ভাই। সঙ্গে ছিল প্রণয়ের ১৪ বছরের পুত্র প্রতীপ। রাত ৩টের পরে বাইপাসের ধারে অভিষিক্তা মোড়ের কাছে একটি স্তম্ভে ধাক্কা দেয় তাঁদের গাড়ি। মাঝে প্রায় দু’ঘণ্টা কোথায় গাড়ি নিয়ে ঘুরেছিলেন তাঁরা? রাস্তায় বসানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং বিভিন্ন সূত্র থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, প্রথমে গাড়ি নিয়ে তাঁরা গিয়েছিলেন বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়েতে। সেই রাস্তা ধরে তাঁরা পৌঁছে যান কোনা এক্সপ্রেসওয়ে। কোনা এক্সপ্রেসওয়ে ধরে দ্বিতীয় হুগলি সেতুতে ওঠে তাঁদের গাড়ি। তার পরে এজেসি বোস রোড হয়ে পার্ক সার্কাস সাত মাথার মোড়ে পৌঁছয় প্রণয়দের গাড়ি। সেখান থেকে সায়েন্স সিটি হয়ে ইএম বাইপাসের রাস্তা ধরে গাড়িটি। শেষে রাত ৩টে নাগাদ অভিষিক্তা মোড়ে একটি স্তম্ভে ধাক্কা দেয় সেটি। আহত দুই ভাই পুলিশি জেরায় দাবি করেছেন, প্রতীপকে একটি হাসপাতালে রেখে ‘আত্মহত্যার পরিকল্পনা’ ছিল তাঁদের। কিন্তু ওই কিশোর হাসপাতালে যেতে রাজি হয়নি।

‘এত কিছু জানতাম না’

বাইপাসে দুর্ঘটনার পরে দে পরিবারের আহত সদস্যেরা দাবি করেছিলেন, দেনা, আর্থিক সমস্যার কারণেই ছ’জন মিলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু এই দাবি নিয়ে ধন্দ আছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে স্পষ্ট, দুই বধূ এবং কিশোরীকে খুন করা হয়েছে। আত্মীয়দের দাবি, চামড়ার ব্যবসা করা দে পরিবারের যে আর্থিক অনটন ছিল, সে বিষয়ে কিছুই জানতেন না তাঁরা। হাসপাতালে ময়নাতদন্তের সময়ে এসেছিলেন মৃত রোমির বাবা। তিনি মেয়ে এবং নাতনিকে দেখতে এসে ভেঙে পড়েন। কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘‘এত কিছু জানতাম না!’’ মৃতার আর এক আত্মীয় বলেন, ‘‘এত কিছু টের পেলে কি এটা হতে দিতাম!’’ অন্য এক আত্মীয় সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‘আমরা সব জানি। আপনাদের বলতে পারছি না। এটা আমাদের মধ্যেই থাকতে দিন।’’ অন্য এক পরিচিত উড়িয়ে দেন আর্থিক সমস্যার অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘‘যা জীবনযাপন ছিল, যা বাড়ি! দেখে বোঝার উপায় ছিল!’’

সংক্ষেপে
  • ১৯ ফেব্রুয়ারি রাত ৩টের পরে অভিষিক্তা মোড়ের কাছে একটি স্তম্ভে ধাক্কা দিয়েছিল তাঁদের গাড়ি। প্রণয় এবং প্রসূন দাবি করেছিলেন, আত্মহত্যা করার জন্যই ওই পদক্ষেপ করেছিলেন তাঁরা। প্রণয়ের বয়ানও খতিয়ে দেখতে চায় পুলিশ।
  • সোমবার রাতে প্রসূনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁর দাদা প্রণয় দে এবং প্রণয়ের কিশোর পুত্র প্রতীপ এখনও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। প্রতীপ জানিয়েছে, কাকা তাকেও খুন করার চেষ্টা করেছিলেন। মঙ্গলবার প্রসূনকে আদালতে হাজির করানো হয়েছিল। ৬ মার্চ পর্যন্ত তাঁকে পুলিশি হেফাজতে থাকতে বলা হয়েছে।
Tangra unnatural death Tangra Murder Case

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}