গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
লোকসভা ভোটে শূন্যে পৌঁছেছিল দল। বিধানসভাতেও ঝুলি শূন্যই থেকেছে। সঙ্কটের এই সময়ে ‘আত্মসমীক্ষা’ এবং ‘আত্মজিজ্ঞাসা’ প্রয়োজন। প্রয়াত সিপিএম নেতা মুজাফ্ফর আহমেদ তথা কাকাবাবুর ১৩৩-তম জন্মদিবসে দলীয় সতীর্থদের জন্য সেই ‘আত্মজিজ্ঞাসা’ ছুড়ে দিলেন প্রবীণ সিপিএম নেতা বিমান বসু। বৃহস্পতিবার সিপিএমের মুখপত্রে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যানের উত্তর সম্পাদকীয়তে সেই প্রশ্ন উঠে এসেছে। দলের বর্তমান নেতৃত্বের কাজ নিয়ে যে তাঁর মনে ক্ষোভ রয়েছে, তা রাখঢাক না করেই জানিয়েছেন এই অশীতিপর রাজনীতিক। কাকাবাবুর পার্টির প্রতি অবদানের কথা স্মরণ করে বিমান লিখেছেন, ‘আমরা যারা এখন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র সঙ্গে যুক্ত রয়েছি, আমি-সহ তাদের সকলকেই আত্মজিজ্ঞাসা করা প্রয়োজন যে আমরা পার্টির জন্য কত সময় ব্যয় করি?’
সিপিএমের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক লিখেছেন, ‘কাকাবাবুদের সবসময় ধ্যান-জ্ঞান ছিল পার্টি কী করে জনগণের জীবনযন্ত্রণা লাঘব করতে পারে। এ কাজে নিজেকে কত ভাল ভাবে যুক্ত করা যায়। জনগণের মধ্যে পার্টিকে প্রসারিত করতে পার্টি পরিচালিত বিভিন্ন গণসংগঠনের প্রাত্যহিক কার্যকলাপ পরিচালনা করতে যা যা করা উচিত, তা কি আমরা সবসময় ঠিকঠাক সম্পন্ন করার সময় উদ্বেগ প্রকাশ করি? কাকাবাবুরা তা করতেন।’ ঘটনাচক্রে, বিমানের লেখা উত্তর সম্পাদকীয়টি যে সময়ে সিপিএমের দলীয় মুখপত্রে প্রকাশিত হচ্ছে, তখনই সিপিএমের প্রয়াত রাজ্য সম্পাদক অনিল বিশ্বাসের কন্যা অজন্তা বিশ্বাসের তৃণমূল মুখপত্রে উত্তর সম্পাদকীয় লেখা নিয়ে ‘বিব্রত’ আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। তৃণমূলের মুখপত্রে অজন্তার লেখা যে বিমানের মতো বর্ষীয়ান নেতারা ভাল চোখে দেখেননি, তা ইতিমধ্যে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দলের একাংশ মনে করছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অকুণ্ঠ প্রশংসা করে অজন্তার তৃণমূলের মুখপত্রে লেখার দিকেও তাঁর নিজের লেখায় অঙ্গুলিনির্দেশ করে থাকতে পারেন বিমান। কারণ, অনিল-কন্যা এখনও সিপিএমের পার্টি সদস্য।
তবে দলের অন্য একাংশের কথায়, বিমান সাধারণ ভাবে দলীয় সতীর্থদের কথাই বলতে চেয়েছেন। সাধারণ ভাবে এবং সামগ্রিক ভাবে। তাঁর লেখার মধ্যে অজন্তাকে বার্তা দেওয়ার কোনও অভিপ্রায় নেই। স্রেফ ঘটনাচক্রেই অজন্তার লেখা প্রকাশের এক সপ্তাহের মধ্যে কাকাবাবুর জন্মদিন পড়েছে এবং বিমান তাঁর বক্তব্য লিখেছেন। এর মধ্যে বিশেষ কাউকে ইঙ্গিত করা বা বার্তা দেওয়ার প্রশ্ন নেই।
প্রসঙ্গত, সিপিএমের বর্তমান প্রজন্মের নেতানেত্রীদের একটি বড় অংশ পার্টির কাজের থেকে নেটমাধ্যমে ‘আত্মপ্রচার’-কে বেশি গুরুত্ব দেন বলেই অভিমত সিপিএমের প্রবীণ প্রজন্মের নেতাদের একাংশের। অভিজ্ঞ এবং আন্দোলনের পথ অতিক্রম করে উঠে-আসা নেতাদের একাংশ নেটমাধ্যমের মঞ্চ ব্যবহার করে দলের বর্তমান নেতা-নেত্রীদের কার্যকলাপ ভাল চোখে দেখেন না বলেও খবর। বিধানসভা নির্বাচনের ফলপ্রকাশের পরেও সেই সব নেতা-নেত্রীদের সম্বিত ফেরেনি বলে মত সিপিএম নেতৃত্বের একাংশের। তাই সম্প্রতি নেটমাধ্যমে বিভিন্ন নেতা-নেত্রীর ‘ফ্যান পেজ’ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। প্রবীণ বামপন্থী নেতার লেখার সূত্রে দলের একাংশ মনে করছে, এবার আরও একধাপ এগিয়ে নেটমাধ্যমে ‘সক্রিয়’ নেতা-নেত্রীদের ‘সতর্কবার্তা’ দিতেই দলীয় মুখপত্রে ‘আত্মজিজ্ঞাসা’র কথা বলেছেন বিমান। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান নিজে নেটমাধ্যমে নেই। স্মার্টফোনও ব্যবহার করেন না। পার্টি-নিবেদিতপ্রাণ বিমানের ‘আত্মজিজ্ঞাসা’-র পর নেটমাধ্যমে ভেসে-থাকা সিপিএমের বর্তমান প্রজন্মের নেতাদের ওই অংশের ‘চেতনা’ হবে বলে আশা সিপিএমের রাজ্য কমিটির একাধিক নেতার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy