গ্রীষ্মের প্রখর তাপে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তাপমাত্রা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পানীয় জলের চাহিদা। এই সঙ্কটপূর্ণ সময়ে গ্রামীণ এলাকাগুলিতে যাতে পানীয় জলের সমস্যা না দেখা দেয়, তার জন্য একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ শুরু করেছে নবান্ন। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর বিশেষ উদ্যোগী হয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা রূপায়ণ করেছে। সম্প্রতি দফতরের তরফ থেকে দু’টি হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে— ৮৯০২০২২২২২ এবং ৮৯০২০৬৬৬৬৬। যদি কোথাও জল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে, তা হলে এই নম্বরগুলিতে হোয়াট্সঅ্যাপের মাধ্যমে যে কেউ অভিযোগ জানাতে পারবেন। দ্রুততার সঙ্গে সমস্যা সমাধানে প্রতিটি ব্লকে একটি করে কুইক রেসপন্স টিম (কিউআরটি) গঠন করা হয়েছে। এই টিমে রয়েছেন ব্লক স্তরের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার ও অপারেটররা, যারা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সমস্যার স্থানে পৌঁছে জল সরবরাহ স্বাভাবিক করবেন।
আরও পড়ুন:
জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘রাজ্যে যখনই কোথাও পানীয় জলের সমস্যা দেখা দেয়, সেখানেই পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হয় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। গত বছর শিলিগুড়ি পুরসভা এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কট দেখা দিলে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সেই সমস্যার সমাধান করেছিল। আর গরমের সময় তো বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে সব সময় কাজ করতে হয়। দু’টি হোয়াট্সঅ্যাপ নম্বর দিয়ে যাতে গ্রামে বসবাসকারী মানুষের পানীয় জলের চাহিদা মেটানো যায়, সে জন্য এই উদ্যোগ।’’ গ্রীষ্মকালীন পরিস্থিতি সামাল দিতে হোয়াট্সঅ্যাপ নম্বর দেওয়ার পাশাপাশি আরও বেশ কিছু পরিকল্পনা করা হয়েছে বলেই নবান্ন সূত্রে খবর।
ব্লকস্তরে সচেতনতা ও সমন্বয় বাড়াতে আয়োজিত হচ্ছে কর্মশালা। প্রতিটি ব্লকে এক বার করে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। এতে উপস্থিত থাকছেন বিডিও, থানার ওসি বা আইসি, ব্লকের জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার এবং সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিরা। কর্মশালাগুলিতে আলোচিত হচ্ছে কোন প্রকল্প চালু আছে, কোন প্রকল্প কত দিনে শেষ হবে এবং কী ভাবে নিরবচ্ছিন্ন জল সরবরাহ বজায় রাখা যাবে। প্রশাসনের মতে, জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে সাধারণ মানুষের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ থাকে, তাই তাঁরা যাতে যথাযথ তথ্য মানুষকে জানাতে পারেন, সেই জন্য তাঁদের এই কর্মশালায় যুক্ত করা হয়েছে।
জল সরবরাহ বাড়াতে ‘পাম্পিং আওয়ার’ বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগে যেখানে দিনে ১৬ ঘণ্টা জল তোলা হত, এখন তা কোথাও কোথাও বাড়িয়ে ২২ থেকে ২৩ ঘণ্টা করা হয়েছে। পাশাপাশি, ভূগর্ভস্থ জলস্তর দ্রুত নেমে যাওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে বৃদ্ধি করা হয়েছে ভ্রাম্যমাণ জলের ট্যাঙ্কের সংখ্যা— গত বছরের ৩০ থেকে এ বার তা ৫৫ করা হয়েছে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে পদক্ষেপটি করা হয়েছে, তা হল ‘জলস্বপ্ন’ প্রকল্পে দেওয়া জল সংযোগগুলিতে যেন ‘ড্রাই ট্যাপ’ না থাকে— অর্থাৎ কল থাকলেও জল নেই, এমন পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। পশ্চিমাঞ্চলের জলসঙ্কটপ্রবণ জেলাগুলিতে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়ে এই সব পদক্ষেপ বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। রাজ্য সরকারের প্রশাসনিক স্তর থেকে সুনির্দিষ্ট ভাবে জানানো হয়েছে যে, এ বারের গ্রীষ্মে গ্রামীণ এলাকায় জলসঙ্কট যেন না হয়, তা নিশ্চিত করতেই এই সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে, গ্রীষ্মকালে পানীয় জলের চাহিদা মেটাতে রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগ একপ্রকার জীবনদায়ক হয়ে উঠতে চলেছে। বাস্তবে কতটা কার্যকর হয় এই পরিকল্পনা, তা অবশ্য সময়ই বলবে।