শীতকালের সুযোগ নিয়ে আরও বেশি করে অনুপ্রবেশ ঘটছে বলে বিএসএফ সূত্রে খবর। —ফাইল চিত্র।
একে ও পারে ‘অস্থিরতা’। দোসর ডিসেম্বর মাস! শীতের ঘন কুয়াশার সুযোগ নিয়েই কাঁটাতারের ফাঁক গলে ভারতে ঢুকে পড়ছেন অনুপ্রবেশকারীরা। যা মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে বিএসএফ কর্তাদের।
বাংলায় ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে নিরাপত্তার দায়িত্বে বিএসএফের উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ার রয়েছে। আবার উত্তরবঙ্গের চার জেলায় সীমান্ত পাহারা দেয় গুয়াহাটি ফ্রন্টিয়ারও। বাংলাদেশে অশান্তি শুরু হওয়ার পর থেকে তিন ফ্রন্টিয়ারেরই অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ যে অনেকটাই বেড়েছে, তা আগেই তথ্য দিয়ে জানিয়েছে বিএসএফ। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, ভারত-বাংলাদেশের ২২১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের মধ্যে ১৮৪৯ কিলোমিটার স্থলসীমান্ত। জলসীমান্ত প্রায় ১৭০ কিলোমিটার। সীমান্তের ৮০০ কিলোমিটার এলাকায় কোনও কাঁটাতার নেই। তারই সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশিরা ভারতে প্রবেশ করছেন বলে খবর বিএসএফ সূত্রে।
কিন্তু কী ভাবে ঘটে অনুপ্রবেশ? বিএসএফ সূত্রে খবর, শীতের শুরু থেকে সীমান্ত এলাকায় সন্ধ্যা নামলে দৃশ্যমানতা কমে আসে। কয়েক ফুট দূরের জিনিসকেও ঘন কুয়াশার কারণে দেখা যায় না। মূলত এই কারণেই শীতকালকে ব্যবহার করেন অনুপ্রবেশকারীরা। তা ছাড়া শীতের শুরুতে জলসীমান্তের নদীগুলিতেও জলস্তর নামতে থাকে। প্রায় শুকিয়ে যাওয়া নদীপথ পেরিয়ে নদীপারের ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়েও ভারতে প্রবেশ করেন অনেকে। উত্তরবঙ্গের মহানদী আর দক্ষিণবঙ্গের জলঙ্গি ও ইছামতী নদীকে অনুপ্রবেশের ‘হটস্পট’ বলেও চিহ্নিত করেছেন বিএসএফ কর্তারা।
গোয়েন্দা সূত্রে খবর, অনুপ্রবেশের ক্ষেত্রে দু’দেশের ‘দালাল’দেরও বিশেষ ভূমিকা থাকে। সে দেশের পুলিশের নজর এড়িয়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের সীমান্তের গন্তব্যে পৌঁছে দেন ও পারের দালালেরা। এর পর ওয়াকিটকির মাধ্যমে এ পারের দালালদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁদেরই সহায়তায় ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’ থেকে অরক্ষিত সীমান্ত এবং জঙ্গলঘেরা নদীপথ দিয়ে অবৈধ ভাবে বাংলায় প্রবেশ করেন বাংলাদেশি নাগরিকেরা। অনুপ্রবেশের পর মূলত দালালচক্রই অর্থের বিনিময়ে আধার, ভোটার এবং প্যান কার্ড বানিয়ে দেন বাংলাদেশি নাগরিকদের।
বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, মূলত নদিয়া-মুর্শিদাবাদ এবং উত্তর ২৪ পরগনা দিয়েই ভারতে ঢোকার বেশি চেষ্টা বেশি করে থাকেন অনুপ্রবেশকারীরা। কারণ, এই জেলাগুলি থেকে দ্রুত কলকাতায় চলে এসে ভিড়ে মিশে যাওয়া যায়। সম্প্রতি কলকাতার একটি হোটেল থেকে সেলিম মাতব্বর নামে এক বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তদন্তে উঠে এসেছিল, সেলিম বাংলাদেশে বিএনপির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ২০২৩ সালে নদিয়া দিয়েই ভারতে ঢুকেছিলেন তিনি। নাম ভাঁড়িয়ে আধার কার্ড, পাসপোর্টও সেলিম তৈরি করে নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। গোয়েন্দাদের একাংশের দাবি, বিভিন্ন সময় তদন্তে দেখা গিয়েছে, অনুপ্রবেশের পর বাংলাদেশি নাগরিকদের মূলত নিয়ে যাওয়া হয় দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলিতে। সেখানে অধিকাংশ পুরুষই নির্মাণ শ্রমিকের কাজে লেগে যান।
তবে অনুপ্রবেশ আটকাতে সক্রিয় বিএসএফ। সীমান্তে নজরদারি দ্বিগুণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি এন কে পাণ্ডে। তিনি বলেন, ‘‘গত কয়েক মাস ধরে সীমান্তে উদ্বেগজনক ভাবে অনুপ্রবেশের ঘটনা বেড়েছে। সীমান্ত এলাকার গ্রামগুলিতে যাতে অনুপ্রবেশকারীরা আশ্রয় নিতে না পারেন, তার চেষ্টা চালাচ্ছে বিএসএফ। সীমান্ত এলাকায় নজরদারি দ্বিগুণ করা হয়েছে। অনুপ্রবেশের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে বিএসএফ চেষ্টা চালাচ্ছে।’’
অন্য দিকে নদিয়া জেলার রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার সানি রাজ বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক সীমান্তঘেঁষা থানা এলাকাগুলিতে নিয়মিত তল্লাশি চালিয়ে বেশ কয়েক জন অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে দালালচক্রের সন্ধান মিলেছে। গ্রেফতার করা হয়েছে দালালচক্রের ১৫ জনকে।’’
সম্প্রতি উত্তরবঙ্গের সীমান্ত দিয়েও যে অনুপ্রবেশের সংখ্যা বেড়েছে, তা কয়েক দিন আগেই জানিয়েছিলেন বিএসএফের উত্তরবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের আইজি সূর্যকান্ত শর্মা। পাশাপাশি তিনি জানিয়েছিলেন, অনুপ্রবেশকারীদের প্রতিরোধ করার জন্য প্রহরা আরও আঁটসাঁট করা হয়েছে। নজরদারি চালানো হচ্ছে থার্মাল ক্যামেরা, নাইট ভিশন ক্যামেরা, সিসি ক্যামেরা এবং ড্রোনের মাধ্যমে। সীমান্তে পারাপারের জায়গায় বসানো হয়েছে বায়োমেট্রিক মেশিন। সীমান্ত দিয়ে অবৈধ ভাবে প্রবেশের অভিযোগে ২০২৩ সালে মোট ১২৭ জন বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করেছে বিএসএফের উত্তরবঙ্গ ফ্রন্টিয়ার। গ্রেফতার হন ১৭৩ জন ভারতীয়ও।
বিএসএফের আইজি বলেন, ‘‘সীমান্তে টানা নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে অগস্টের পর থেকে ও পার থেকে সংখ্যালঘুদের এ পারে আসার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ নিয়ে বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ)-র সঙ্গে আলোচনা করে ওই সমস্ত সমস্যা মেটানো হচ্ছে। আর ফেন্সিং (কাঁটাতার)-এর জন্য জমি অধিগ্রহণে রাজ্য সরকারেরও ভাল সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে। ফ্রন্টিয়ারের অধীনে থাকা মোট সীমান্তের ১০ শতাংশে ফেন্সিং নেই। খুব শীঘ্রই সেই জায়গাগুলোতে ফেন্সিং লাগানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy