—ফাইল চিত্র।
কর চালু করে দিল পুরসভা অথচ, তার নিয়মকানুন কিছুই স্পষ্ট নয় হোটেলগুলির কাছে! করের অঙ্ক কম। তা সাধারণ পর্যটকদের কাছে মাথাব্যথার কারণও নয়। কিন্তু সব ধরনের পর্যটকদের সুবিধা-অসুবিধা দেখা হয়েছে কি না, কী পদ্ধতিতে সেই কর সংগ্রহ করা হবে— সে সব নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে দার্জিলিঙে। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করেই কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে হোটেল সংগঠনগুলি।
দার্জিলিং ঘুরতে গেলে এ বার থেকে দিতে হবে কর। সোমবার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দার্জিলিং পুরসভা। ইতিমধ্যেই এই সিদ্ধান্তের কথা বিভিন্ন হোটেল মালিক ও পর্যটন ব্যবসায়ীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে করের কুপনও পৌঁছে দেওয়া হয়েছে শহরের হোটেলগুলিতে। পুরপ্রধান দীপেন ঠাকুরি জানান, এই করের বিষয়টি নতুন কিছু নয়। ৩০ বছর ধরে এই কর চালু ছিল দার্জিলিঙে। জিএনএলএফ আমলে নেওয়া হয়েছে। ব্যতিক্রম হয়নি বিমল গুরুংয়ের আমলেও। মাঝের কয়েকটি বছর পর্যটকদের থেকে ওই কর নেওয়া বন্ধ করা হয়েছিল। আবার তা চালু করা হল। আগে যেমন করের অঙ্ক ২০ টাকা ছিল, এখনও তা-ই রাখা হচ্ছে। দীপেনের কথায়, ‘‘শহরের জঞ্জাল পরিষ্কার করতে অনেক খরচ হচ্ছে পুরসভার। সেই কারণেই বাধ্য হয়ে আবার ওই কর ফিরিয়ে আনা হল। পাহাড়ে পর্যটকদের সুষ্ঠু পরিষেবা দিতেই এই সিদ্ধান্ত।’’
পর্যটকদের একাংশের বক্তব্য, দার্জিলিঙের উন্নয়নের ‘স্বার্থে’ পুরসভা যে পরিমাণ কর চাইছে, তাতে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু শৈলশহরে ঘুরতে আসার খরচ এমনিতেই দিনে দিনে বাড়ছে। মাঝেমাঝেই হোটেল খরচ বাড়িয়ে দেন মালিকেরা। জিনিসপত্রেও দামও অনেকটাই বেশি। সব কিছু নজরে আরও কর না চাপালেই চলত। সপরিবার কলকাতা থেকে দার্জিলিঙে ঘুরতে গিয়েছেন অমিত সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘দার্জিলিঙের উন্নয়নের স্বার্থে যদি এই করের টাকা ব্যবহার করা হয়, তা হলে বিশেষ আপত্তি থাকা উচিত নয়। ২০ টাকার ব্যাপার তো! কিন্তু এটাও মাথায় রাখা উচিত ছিল, এখানে হোটেল ভাড়া, জিনিসপত্র কেনাকাটা সবেতেই তো কর দিতে হচ্ছে।’’ বন্ধুদের সঙ্গে দার্জিলিঙে বেড়াতে গিয়েছেন হুগলির শালিনী গুপ্ত। তাঁর কথায়, ‘‘এখন দার্জিলিঙে ঘোরার খরচ আগের অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই তা বাজেটের বাইরে চলে যায়। এখনও ট্যুরিস্ট স্পটগুলিতেও আলাদা আলাদা করে টাকা নেওয়া হয়! ২০ টাকাটা অবশ্য বড় কিছু নয়। দিতেও আপত্তি নেই। কিন্তু প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে, এটা উন্নয়নের স্বার্থেই ব্যবহার করা হয়। কারণ, এই শহরটাকে আমরা খুবই ভালবাসি। পর্যটকদের কথা ভেবেই যাতে কর থেকে পাওয়া টাকা খরচ করা হয়।’’
তবে পর্যটন সংস্থাগুলির দাবি, সারা বছর ধরেই দার্জিলিঙে শিক্ষামূলক ভ্রমণ চলতেই থাকে। কচিকাঁচাদের নিয়ে আসে বহু স্কুল। দলবেঁধে অনেকে ট্রেকিংয়ের জন্যও আসেন। অনেক দিন থাকতেও হয় তাঁদের। তাঁদের ক্ষেত্রে এই কর দেওয়াটা সমস্যার হলেও হতে পারে। একটি পর্যটন সংস্থার মালিকের কথায়, ‘‘দু’-চার জন ঘুরতে এলে ২০ টাকা দেওয়া এমন কিছু বিষয় নয়। কিন্তু শিক্ষামূলক ভ্রমণের ক্ষেত্রে করের অঙ্কটা বড় হবে। যে হেতু, গোটা ঘোরার সমস্ত খরচই সাধারণত একটি নির্দিষ্ট তহবিল থেকে নেওয়া হয়। এই বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।’’
পুরসভার এই সিদ্ধান্তে ইতিমধ্যেই অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। পর্যটন সংস্থাগুলির অভিযোগ, কোনও রকম আলোচনা না করেই আচমকা এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পুরসভায় কর-ঘোষণার তৈরি হয়েছে ধন্দও। দার্জিলিং হোটেল অ্যাশোসিয়েশনের সম্পাদক বিজয় খান্না খানিকটা ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেন, ‘‘মাঝে একটা বৈঠকে এই করের কথা আমাদের জানিয়েছিলেন চেয়ারম্যান। আমরা তাতে সম্মতি দিইনি। বলেছিলাম, পর্যটকদের থেকে এ ভাবে কর তোলা উচিত হবে না। তার পর আজ হঠাৎই নির্দেশিকা জারি করল পুরসভা। আমরা পুরসভার সঙ্গে বৈঠকে বসব।’’ বিজয় জানান, এখনই তাঁরা পর্যটকদের থেকে কর আদায় করবেন না। পুরসভার সঙ্গে বৈঠকের পরেই তাঁরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
ভবিষ্যতে করের টাকায় পর্যটকদের সমস্ত সমস্যার সমাধান হবে কি না, সেই প্রশ্ন তুলেছেন অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজারভেশন অ্যান্ড ট্যুরিজ়মের আহ্বায়ক রাজ বসু। তিনি বলেন, ‘‘একটা নির্দেশিকা জারি করেছে দার্জিলিং পুরসভা। কিন্তু এ বিষয়ে এখনই বিশেষ কিছু বলা যাবে না। আমরা সম্পূর্ণ বিষয়টা জানিও না। কবে বৈঠক হয়েছে, সে বিষয়েও জানা নেই। তবে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঠে আসছে। দার্জিলিং পুরসভা যে কর নেবে, তা বদলে পর্যটকদের কী সুবিধে দেবে? এই করের টাকা কোন কাজে ব্যবহার করা হবে, তা নিয়ে পুরসভা আমাদের এখনও কিছু জানায়নি। আজকের তারিখে পর্যটকেরা দার্জিলিং থেকে ভাল করে একটা কাঞ্চনজঙ্ঘার ছবি তুলতে পারেন না। ছবির মাঝে তার-পাইপ চলে আসে। যত্রতত্র নির্মাণ, পার্কিংয়ের বিপুল সমস্যা, মরসুমে হোটেলগুলোতে জলের সমস্যা, জঞ্জালের সমস্যা! করের টাকায় কি এই সমস্যাগুলোর সমাধান হবে? আমাদের মনে হয়, বিষয়টি আরও ভাল করে আলোচনার দরকার রয়েছে।’’
আলোচনা না করে কর চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত হয়নি বলেই মনে করছেন ‘হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজ়ম ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্ক’-এর সম্পাদক সম্রাট স্যানাল। তিনি বলেন, ‘‘শুধুমাত্র একটি নির্দেশিকা পেয়েছি। কাদের সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত হল, তা নিয়ে আমাদের কিছুই জানা নেই। হ্যাঁ, এটা সত্যি যে, অনেক আগে এই কর নেওয়া হত পর্যটকদের থেকে। কিন্তু নতুন করে চালু করতে গেলে সকলের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন ছিল। এখনও আমরা পুরো বিষয়টা জানি না।’’
পুরপ্রধান দীপেন অবশ্য দাবি করেছেন, সকলের সঙ্গে আলোচনা করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দীপেনের অভিযোগ, আগে যে কর সংগ্রহ করা হত, তার কোনও হিসাব থাকত না। তাঁর আশ্বাস, এ বার সমস্ত হিসাব রাখা হবে। সেই সঙ্গে নিয়ম মেনে টেন্ডার ডেকে কাজ করা হবে বলে জানিয়েছেন দীপেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy