পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছে মধুর বাক্স।—নিজস্ব চিত্র
ও দিকে মোদী, এ দিকে মধু।
বড় আতান্তরে পড়েছেন বঙ্গের মধু-কারবারিরা।
আশ্বিনের পর থেকে ব্যস্ততা শুরু হয় ওঁদের। বাক্স-প্যাঁটরা গুছিয়ে মধুর সন্ধানে বেরিয়ে পড়েন দূরদূরান্তে। বীরভূম, বাঁকুড়া, মুর্শিদাবাদ, উত্তরবঙ্গ ঘুরে সোজা সুন্দরবন। কিন্তু গত ৮ নভেম্বর, নোট বাতিলের পর থেকে পদে পদে হোঁচট খাচ্ছেন তাঁরা।
হাঁসখালির তাপস প্রামাণিক মধু সংগ্রহে গিয়েছিলেন বাঁকুড়ার জঙ্গলে। তিনি ফিরে এসেছেন। কিন্তু গোটা পঞ্চাশেক বাক্স তাঁকে রেখে আসতে হয়েছে। কারণ, টান পড়েছে নগদে। কবে নাগাদ সেই বাক্স তিনি আনতে পারবেন তা-ও তিনি জানেন না। কেউ কেউ আবার বলে কয়ে মৌমাছির বাক্সগুলো নিয়ে এসেছেন। তবে স্থানীয় বাজারে দেনা মেটাতে না পেরে পাঁচ টিন মধু দিয়ে আসতে হয়েছে।
মধু কারবারিরা জানাচ্ছেন, কোনও এলাকায় যাতায়াত বাবদ গাড়ি ভাড়া, ক্যাম্প করা, স্থানীয় বাজারে কেনাকাটা সবটাই তো নগদে চলে। কখনও কখনও চেনাজানা হয়ে গেলে অল্পবিস্তর ধার-দেনাও হয়। কিন্তু মোদীর ওই নোট বাতিলের ঘোষণার পরে ক্রেতা বিক্রেতা সকলেই বিপাকে পড়েন। তাপস বলছেন, ‘‘কী লজ্জা বলুন তো? ফেরার সময় সকলেই তাঁদের পাওনা টাকা চাইছেন। অথচ আমাদের কাছে কোনও টাকা নেই।’’
কয়েক দিনের মধ্যে ওই কারবারিদের উত্তরবঙ্গে যাওয়ার কথা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেটা অনিশ্চিত। দুঃশাসন বিশ্বাস, প্রদীপ সরকারেরা সমস্বরে বলছেন, ‘‘যাব কী করে? টাকা কোথায়? বাঁকুড়ার দেনাই শোধ করতে পারিনি এখনও।’’
নৈহাটির শম্ভু ভৌমিকও মধু সংগ্রহ করেন নদিয়া ও বাঁকুড়ায়। নোট বাতিলের গেরোয় পড়েছেন তিনিও। শম্ভু বলছেন, ‘‘কারবারে ওঠা-পড়া অনেক দেখেছি মশাই। তবে মোদীর এই এক ঘোষণা আমাদের পথে বসিয়ে দিল। এই প্রথম বুঝতে পারছি, মধু ততক্ষণ মিষ্টি লাগে যতক্ষণ টাকার জোগান ঠিকঠাক থাকে।’’
শম্ভু জানান, এ বারে মহাজনের কাছ থেকে আগাম পঞ্চাশ হাজার টাকা দেনা করে নিয়ে গিয়েছিলাম। মৌমাছির খাবার চিনি কিনতে ও অন্যান্য খরচ মিটিয়ে হাতে যা পড়েছি তা সবই পাঁচশো ও এক হাজারের নোট। ঠিক তখনই নোট বাতিলের ঘোষণা হল।
অথচ এটাই মধু সংগ্রহের সেরা সময়। গাঁ-গঞ্জের খেত হলুদ হয়ে থাকে সর্ষে ফুলে। আর সেই জমির পাশ দিয়ে রাখা থাকে সারি সারি মৌমাছির বাক্স। কারবারিরা জানাচ্ছেন, অগ্রহায়ণ-পৌষে নাওয়া-খাওয়ার সময় থাকে না। মৌমাছি ও বাক্সের সংখ্যা দুই-ই বেড়ে যায়। বাড়তে থাকে মধুর ক্রেতাও। সেই টাকায় শোধ হয় মহাজনের দেনা। লাভের মুখ দেখেন কারবারিরা। কিন্তু এ বারে মধু নয়, প্রাপ্তির ভাঁড়ারে হুল ফোটাচ্ছে
নগদের অভাব।
লালবাগ স্টেশনের পাশের মাঠে প্রতি বছরের মতো এ বারেও এসেছেন মধু কারবারিরা। কিন্তু একই সমস্যায় পড়েছেন তাঁরাও। শ্রীরাম মাহাতো যেমন বলছেন, ‘‘১০০ টাকার মধু কিনে সকলেই দু’হাজার টাকা ধরিয়ে দিচ্ছেন। এ ভাবে কি ব্যবসা
চলে নাকি?’’
মধুর কারবার করেন ভগবানগোলার রাফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, মৌমাছিদের প্রতি দিন নিয়ম করে চিনি খাওয়াতে হয়। কিন্তু এ বারে নোট বাতিলের জেরে সেই চিনির জোগান দিতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। লাভ তো অনেক দূরের কথা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy