প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ। —ফাইল চিত্র।
তাদের পুজোয় গত বছর অসুর হয়েছিল মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধীর মুখের আদলে। এ বার মণ্ডপে ঢোকার মুখে ‘উলঙ্গ রাজা’র অবয়বে বিরাজ করেছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের আদলে দু’টি মুখ। দশমীর সন্ধ্যায় পুজো উদ্যোক্তাদের তরফে যে রাবণ দহন হয়েছে, তার দু’টি মাথাও মোদী ও শাহের মতো! তার জেরে আবার বিতর্কে অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার পুজো। গান্ধীজির সময়ে উদ্যোক্তাদের দাবি ছিল, ওই মিল ‘কাকতালীয়’! এ বারও দেশের শীর্ষস্থানীয় দুই রাজনীতিকের আদলে রাবণের দু’টি মাথা তাঁদের মতে ‘নেহাতই কাকতালীয়’!
অসুর-কাণ্ডের সময়ে বিতর্কের জেরে পুলিশ হস্তক্ষেপ করেছিল। এ বার একাদশীর দিন, বুধবার পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন উদ্যোক্তারাই। তাঁদের অভিযোগ, দশমীর সন্ধ্যায় রাবণ দহনের পরে রাতে কয়েক জন ব্যক্তি রুবির মোড়ে ওই পুজোর মণ্ডপের বিরুদ্ধে ঢুকে উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করে। হিন্দু মহাসভার রাজ্য সভাপতি চন্দ্রচূড় গোস্বামীকে ধাক্কা মারা হয়, বাঁশ-ইট হাতে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়। কসবা থানায় অভিযোগ দায়ের করে হিন্দু মহাসভার তরফে ওই ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবির পাশাপাশি প্রতিমা বিসর্জন না হওয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা দেওয়ার আর্জিও জানানো হয়েছে। পুলিশ অবশ্য এই নিয়ে মুখ খোলেনি।
হিন্দু মহাসভার রাজ্য নেতৃত্ব এই পুজোর মাধ্যমে দাবি তুলেছেন, এনআরসি-র ‘প্রতারণা’ বন্ধ করে মতুয়া-সহ সনাতনী মানুষকে নিঃশর্ত নাগরিকত্ব দিতে হবে। এনআরসি নামক কৃতকর্ম থেকে সরে না এলে মোদীকে গদি ছাড়তে হবে, সরাসরি এই কথা বলতেও কসুর করছেন না তাঁরা! নিঃশর্ত নাগরিকত্বের দাবিতে মতুয়া মহাসঙ্ঘের তৃণমূল কংগ্রেস-প্রভাবিত অংশের সঙ্গে হাত মিলিয়ে আন্দোলনের তোড়জোড়ও করছে মহাসভা। মমতাবালা ঠাকুরের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনার কথা বলছেন হিন্দু মহাসভার নেতৃত্ব। মতুয়া মহাসঙ্ঘের ওই অংশ নিজেরা ইতিমধ্যেই এই দাবিতে আন্দোলনে নেমে গিয়েছে। এ সবের প্রক্ষিতে বিজেপি দাবি করছে, হিন্দু মহাসভার নেপথ্যে শাসক দল তৃণমূলের সক্রিয় মদত আছে। আর তৃণমূলের পাল্টা দাবি, মোদী সরকার তথা বিজেপির ‘মুখোশ’ এ বার হিন্দু-সহ সব অংশের মানুষের কাছেই খুলে পড়ছে!
তাঁদের পুজোয় রাবণের দুই মাথা মোদী ও শাহের আদলে হওয়া প্রসঙ্গে হিন্দু মহাসভার রাজ্য সভাপতি চন্দ্রচূড়ের দাবি, ‘‘ওই মিল নেহাতই কাকতালীয়। মোদী বা শাহ তো কানে দুল, কপালে তিলক পরে রাজনীতি করেন না!’’ সেই সঙ্গেই তাঁর সংযোজন, ‘‘তবে মেঘের আড়াল থেকে নয়, একটা কথা সরাসরি বলতে চাই। একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল যখন সনাতনী হিন্দুত্বের কথা বলে তার পরে সনাতনীদের এনআরসি-র লাইনে দাঁড় করায়, তখন ক্ষোভ ও যন্ত্রণার বহিঃপ্রকাশও হবে। আমাদের এনআরসি-র প্রতীকী রাবণ দহনের বার্তা এটাই।’’
এই প্রেক্ষিতে রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘কোন হিন্দু মহাসভা এটা? যারা সাভারকর, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, এন সি চট্টোপাধ্যায়দের ভাবনার সঙ্গে প্রতারণা করে পয়লা বৈশাখকে বাংলা দিবস ঠিক করার বৈঠকে চলে গিয়েছিল! গান্ধীজি’র আদলে অসুর হয়েছিল বলে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছিল। এ বার দেশের প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চরম অসম্মান করা হচ্ছে দেখেও পুলিশকে হাত গুটিয়ে বসিয়ে রাখা হল? এ তো তৃণমূলের পয়সায় দোকানদারি হচ্ছে! এখন মনে হচ্ছে, অসুর-কাণ্ডটাও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে ঘটানো হয়েছিল।’’
তৃণমূলের রাজ্য নেতা তাপস রায় অবশ্য বলেছেন, ‘‘সব কিছুতেই তৃণমূলকে দায়ী করা ওঁদের অভ্যাস! কিন্তু এটা তো সত্যি কথা যে, রামের নাম করে আর হিন্দুত্বের কথা বলে কত দিন চলবে? মতুয়াদের নাগরিকত্ব হোক বা নানা অংশের মানুষের বিভিন্ন সমস্যার বাস্তবিক সমাধান চাই। এত প্রতারণা ওঁরা করেছেন, সনাতনী-সহ সব মানুষের কাছেই ওঁদের মুখোশ এ বার খুলে পড়ছে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy