প্রতীকী ছবি।
কারও ফল অসম্পূর্ণ। অনেকে অকৃতকার্য। কেউ আশানুরূপ নম্বর পাননি। পরীক্ষা না দিয়েই এমন ফলে ক্ষুব্ধ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকেরা পথে নামলেন। শনিবার জেলায় জেলায় অবরোধ-বিক্ষোভ হল। টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভের সময় মুর্শিদাবাদে এক ছাত্র পুড়ে জখম হন। সল্টলেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের অফিসের সামনে অবরোধ হয়েছে। দমদমে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর বাড়ির সামনেও জনা বিশেক পড়ুয়া জমায়েত করেন।
এ দিন সংসদ অফিসের সামনে অবরোধ করেন বারাসত প্রিয়নাথ বালিকা বিদ্যাপীঠের এক দল ছাত্রী। সংসদের তরফে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আগামী সাত দিনের মধ্যে প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রয়োজনীয় নথি-সহ উচ্চ মাধ্যমিকের অভিযোগ বা আবেদনগুলি সংসদে জানাতে হবে। রবিবার বা ছুটির দিন-সহ রোজ বেলা ১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত সাক্ষতের ব্যবস্থা থাকছে।
নবান্ন সূত্রের খবর, পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ যাতে নষ্ট না হয় সে জন্য সমস্যার দ্রুত মীমাংসা করতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনিক কর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। এ দিনই সংসদ সভাপতি মহুয়া দাস এবং শিক্ষাসচিব মনীশ জৈনকে ডেকে পাঠান মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। মুখ্যমন্ত্রীর মনোভাব তাঁদের জানানো হয়। কী ভাবে পদক্ষেপ করা হবে, সে সম্পর্কে প্রাথমিক আলোচনাও হয়েছে। প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানে জোর দিয়েছে নবান্ন। শিক্ষা দফতরের কর্তাদের একাংশের ধারণা, যান্ত্রিক কিছু গোলমাল থেকে থাকতে পারে। অসফল ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা তুলনায় কম। তবু যোগ্য কেউ যাতে বঞ্চিত না হন, তা নিশ্চিত করতে হবে।
মাধ্যমিক ও একাদশে উত্তীর্ণ বেশ কিছু পরীক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হতে পারেননি। অথচ এই দু’টি পরীক্ষার ভিত্তিতেই উচ্চ মাধ্যমিকের মূল্যায়ন হয়েছে। এতেই ক্ষোভ জেলায় জেলায়। উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে মালদহ, উত্তর দিনাজপুর থেকে আলিপুরদুয়ারে চলে ছাত্র-বিক্ষোভ। মালদহের হবিবপুরের বুলবুলচণ্ডী আরএন রায় হাইস্কুলে অর্ধেক ছাত্রীই অনুত্তীর্ণ হওয়ায় রাজ্য সড়ক অবরোধ হয়। পুলিশ মৃদু লাঠিচার্জ করে বলেও অভিযোগ। ছাত্রীরা আত্মহত্যা করলে দায় কার, শিক্ষিকাকে প্রশ্ন করে বিতর্কে জড়ান হবিবপুরের বিজেপি বিধায়ক জয়েল মুর্মু। তিনি আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিচ্ছেন বলে দাবি পাল্টা সরব হন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা ঝুম্পা মজুমদার। টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ-ভাঙচুর হয়েছে উত্তর দিনাজপুরে।
যে জেলার ছাত্রী উচ্চ মাধ্যমিকে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছেন, সেই মুর্শিদাবাদেও পাশ করানোর দাবিতে পথে নামেন পড়ুয়ারা। হরিহরপাড়া-সুন্দলপুর রাজ্য সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভের সময় এক পরীক্ষার্থী আগুনে পুড়ে জখম হন। সহপাঠীদের দাবি, ভাল নম্বর না পাওয়ায় আগুনে ঝাঁপ দেন বাসির মণ্ডল। যদিও বাসির বলছেন, ‘‘টায়ারে পেট্রল ঢেলে আগুন দিতেই আমার কানের পাশে একটা অংশ পুড়ে যায়।’’ তাঁকে ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। বাসির ২৫৮ নম্বর পেয়েছেন।
দুই বর্ধমান, মেদিনীপুর, খড়্গপুর, ঝাড়গ্রাম, নদিয়া, হাওড়া, হুগলি—বিক্ষোভ হয়েছে প্রায় সব জেলাতেই। মধ্যমগ্রামে যশোর রোড অবরোধে আটকে পড়ে অ্যাম্বুল্যান্স। মগরায় জিটি রোড অবরোধ হয় আধ ঘণ্টা। ঘণ্টা খানেক আমতা-বাগনান রোডে অবরোধ চলে। খড়্গপুরের সিলভার জুবিলি হাইস্কুলে টিচার ইন-চার্জকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত ঘেরাও করে রাখেন অকৃতকার্যরা। শনিবার সকাল থেকে গেটে তালা দিয়ে ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষোভ দেখান দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘি শ্রীফলতলা চন্দ্রকান্ত হাইস্কুলে। প্রায় ৬ ঘণ্টা আটকে ছিলেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। বীরভূমের ইলামবাজার হাইস্কুলে আবার দু’দিন পরেও মার্কশিট না পাওয়ায় বিক্ষোভ দেখান ২৫-৩০ জন পরীক্ষার্থী।
দুর্গাপুরের এবিএল টাউনশিপের এভিবি হাইস্কুলের ৩২ জনের ফলাফল ‘অসম্পূর্ণ’ আসায় তাঁরা স্কুলে বিক্ষোভ দেখান। পরীক্ষার্থী তন্ময় পোদ্দার বলেন, ‘‘মাধ্যমিকের, একাদশের ফল দিয়ে দ্বাদশের ফল কী ভাবে নির্ধারিত হয়? হয় পরীক্ষা হোক। না হলে সবাইকে পাশ করাতে হবে।’’ ইতিমধ্যে অনুত্তীর্ণ বা কম নম্বর পাওয়া পড়ুয়াদের সমস্যা সংসদের নজরে আনতে শুরু করেছেন বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ। পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক স্বামী অজেয় চৈতন্য বলেন, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিকের মূল্যায়নের পদ্ধতি মেনে যে নম্বর পাওয়া উচিত ছিল, আমাদের ৬০ জন পরীক্ষার্থীকে তার থেকে কম নম্বর দেওয়া হয়েছে। সংসদে কথা বলেছি। তাঁরা বিবেচনার
আশ্বাস দিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy