—নিজস্ব চিত্র।
পুজোর মুখে রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রশাসন। পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডে লাগাতার বৃষ্টির জেরে পশ্চিম বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া এবং হুগলিতে প্লাবনের আশঙ্কায় চিন্তার ভাঁজ পড়েছে প্রশাসনিক কর্তাদের কপালে। এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সোমবার ওই সাত জেলার জেলাশাসক, পুলিশ সুপার এবং পুলিশ কমিশনারদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। বন্যা পরিস্থিতি রুখতে সাত জেলার প্রশাসনিক কর্তাদের কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে বৈঠকে। নির্দেশ, শীঘ্রই অপেক্ষাকৃত নিচু এবং বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলিকে চিহ্নিত করে সেখানে লাগাতার মাইক প্রচার চালাতে হবে। সেই এলাকার মানুষদের নিরাপদ জায়গায় সরানোরও নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন।
রাজ্যে এখনই কমছে না বৃষ্টি। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, বুধবার রাজ্যের প্রায় সব জেলায় হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। সঙ্গে বইতে পারে ঝোড়ো হাওয়া। কয়েকটি জেলায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাসও রয়েছে। তবে প্রশাসন চিন্তিত ঝাড়খণ্ডের পরিস্থিতি নিয়ে। রবিবার সেখানে ৫০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি হয়েছে। আরও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় আশঙ্কা বেড়েছে। কারণ, ঝাড়খণ্ডে বেশি বৃষ্টি হলেই সেই জল নেমে আসবে রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলিতে। নবান্নের আশঙ্কা, তখন আর বন্যা এড়ানো যাবে না।
সোমবার মুখ্যসচিবের ভার্চুয়াল বৈঠকে সেচ দফতরের প্রধান সচিবও ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত জেলা প্রশাসনের কর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বন্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেচ দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলতে হবে। যেখানে যেখানে বাঁধ ভাঙার ঘটনা ঘটেছে, সেখানকার পরিস্থিতি কড়া নজরে রাখতে হবে। শীঘ্রই মেরামত করতে হবে ভাঙা বাঁধগুলিকে। জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে প্রচুর বালির বস্তা। জেলার কোনও জায়গায় যদি অস্বাভাবিক বৃষ্টি হয়, তা গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। পাশাপাশিই, কোথাও বাঁধ ভাঙল কি না, কোথাও জলস্তর বেড়েছে কি না এবং বৃষ্টির পরিমাণ কত— এই সব তথ্য দিয়ে প্রতি পাঁচ ঘণ্টায় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে রিপোর্ট দিতে হবে জেলা প্রশাসনকে।
ইতিমধ্যেই লাগাতার দু’দিনের বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে রাজ্যের বেশ কিছু জায়গা। মালদহের গাজল ও বামনগোলা ব্লকের বেশ কিছু জায়গায় প্লাবিত হয়েছে পুনর্ভবা ও টাঙন নদীর জলে। কোথাও পড়ছে মাটির বস্তা, কোথাও পুনর্ভবার জল ঠেকাতে দেওয়া হয়েছে শুধুই মাটি। প্লাবনের আশঙ্কায় রাত জেগে কাটাতে হচ্ছে বামনগোলার কুপাদহ গ্রামের মানুষদের। বৃষ্টিতে পুরুলিয়ার বেশ কয়েকটি জায়গাতেও জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের কংসাবতী নদীতে জলস্তর বৃদ্ধির ফলে ডুবেছে সাঁকো। হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর এবং আমতায় বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। মুণ্ডেশ্বরীতেও জলের তোড়ে বাঁশের সাঁকো ভেঙে জনজীবন বিপর্যস্ত। এর মধ্যেই সোমবারই এক লক্ষ কিউসেক জল ছেড়ে ডিভিসি। মাইথন জলাধার থেকে ৪৫ হাজার কিউসেক এবং পাঞ্চেত জলাধার থেকে ৫৫ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। ডিভিসির আধিকারিক অপূর্ব সাহা জানান, এক দিকে দামোদর ও বরাকর উপত্যকা এলাকায় গত দু’দিন ধরে টানা বৃষ্টি হওয়ায় সেই জল মাইথন জলাধারে এসে জমা হয়েছে। তেমনই ঝাড়খণ্ডের তেনুঘাট থেকে জল ছাড়ায় সেই জল এসে জমা হয়েছিল পাঞ্চেত জলাধারে। ঝাড়খণ্ড এবং এ রাজ্যে আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় আগে থেকেই সতর্ক হচ্ছেন ডিভিসি কর্তৃপক্ষ। সূত্রের খবর, যদি পূর্বাভাস মতো আরও বৃষ্টি হয়, সে ক্ষেত্রে আরও জল ছাড়তে হবে ডিভিসিকে। তবে দামোদরের জল ছাড়লে রাজ্যের নিম্ন অববাহিকা অঞ্চল, বিশেষত বর্ধমান, হাওড়া ও হুগলিতে যেন তার কোনও প্রভাব না পড়ে, সে দিকেও নজর রাখা হচ্ছে বলে খবর ডিভিসি সূত্রে।
ডিভিসি জল ছাড়ায় সতর্কতা অবলম্বন করছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। সোমবার রাজ্যের মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর জেলার সমস্ত মহকুমাশাসক, বিডিও, পুলিশ প্রশাসন, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর, স্বাস্থ্য আধিকারিক, পিএইচই ও সেচ দফতরের আধিকারিক, জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই বন্যাপ্রবণ এলাকাগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ, মেডিক্যাল টিম ও অন্যান্য জরুরি পরিষেবার ব্যবস্থা তৈরি রাখা হয়েছে। বাঁধগুলির উপর কড়া নজরদারির ব্যবস্থাও করা হয়েছে। পাশাপাশি, আগামী কয়েক দিন মৎস্যজীবীদের নদীতে মাছ ধরতে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসন। ২৪ ঘণ্টার জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে জেলা, মহকুমা ও ব্লক স্তরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy