ছবি: সংগৃহীত।
‘তিন ভাইকে পায়ের তল দিয়ে পিষে মারার’ কথা প্রকাশ্য সভায় নিজেই বলেছিলেন বীরভূমের তৎকালীন তৃণমূল এবং বর্তমান বিজেপি নেতা মনিরুল ইসলাম। লাভপুরের সেই হত্যা মামলা নতুন মোড় নিল কলকাতা হাইকোর্টের একটি নির্দেশে।
ন’বছর আগে যিনি প্রথমে ওই তিন খুনের তদন্ত করেছিলেন, মঙ্গলবার সেই অফিসারের উপরেই ফের তদন্তভার দিয়েছেন বিচারপতি মধুমতী মিত্র। রাজ্য পুলিশকে তাঁর নির্দেশ, তিন মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে। তদন্তের তদারক করবেন বীরভূমের এসপি। ‘সাক্ষী সুরক্ষা প্রকল্প, ২০১৮’ অনুযায়ী মামলাকারী ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।
২০১০ সালে খুন হন লাভপুরের বুনিয়াডাঙার বাসিন্দা জরিনা বিবির তিন ছেলে জাকের আলি, ওইসুদ্দিন শেখ ও কোটন শেখ। বালিরঘাটের সালিশি সভায় নবগ্রামের বাড়িতে ডেকে পিটিয়ে খুনের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের টিকিটে জেতা লাভপুরের বিধায়ক (সম্প্রতি বিজেপিতে গিয়েছেন) মনিরুল এবং অন্য ৫৩ জনের বিরুদ্ধে। মনিরুল তখন সবে ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। পরে অভিযোগ থেকে নিষ্কৃতি পান মনিরুল-সহ ২২ জন। ২০১৪-য় পুলিশের চার্জশিটে দেখা যায়, চার বছরের তদন্তকালে মাত্র সাত জনের বয়ান নেওয়া হয়েছে!
রাজনৈতিক প্রভাবেই ওই মামলায় দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ তোলে নিহতদের পরিবার। অভিযোগ দায়েরের পর থেকেই জরিনা বিবির পরিবার গ্রামছাড়া হয়ে যায়। জরিনার নাতি ও নাতনিকে অপহরণের অভিযোগ ওঠে। হত্যাকাণ্ডের বেশ কিছু দিন পরে মনিরুল প্রকাশ্য সভায় ‘তিন ভাইকে পায়ের তল দিয়ে পিষে মারার’ কথা বলেন দম্ভের সঙ্গেই।
ওই মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি। তাঁর পর্যবেক্ষণ: প্রথমত, যে-ভাবে তদন্ত হয়েছে, তার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। দ্বিতীয়ত, যে-প্রবল চাপ, হুমকি এবং আশঙ্কার মধ্যে মামলাকারী ও তাঁর পরিবার গোপন জবানবন্দি দিয়েছেন এবং মনিরুল ও তাঁর সহযোগীদের নির্দোষ বলতে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ করছেন, তা যদি সত্যি হয়, সেটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তিনি বলেন, ‘‘আদালতের কাজ হল সত্যিটা খুঁজে বার করা। সরকারি আইনজীবী নিজেই তো জানিয়েছেন যে, এই তদন্ত পক্ষপাতদুষ্ট এবং কলঙ্কিত।’’
তদন্তকারীর রিপোর্ট নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি। তিনি বলেছেন, তদন্তকারী অফিসার জানিয়েছেন যে, নিহতদের কারও দেহে মনিরুলের বন্দুকের আঘাত নেই। তিনি বোধ হয় খেয়াল করেননি যে, এফআইআরে রড এবং লাঠিরও উল্লেখ ছিল। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, স্বচ্ছ এবং যুক্তিপূর্ণ তদন্ত হয়নি। ‘‘মামলাকারীদের অভিযোগ সত্যি হলে তাঁদের অধিকার খর্ব করা হয়েছে,’’ বলেন বিচারপতি।
শেষ দেখতে চান বলে জানান অশীতিপর জরিনা বিবি। এ দিন তিনি বলেন ‘‘সেই কবে থেকে সুবিচারের আশায় বুক বেঁধে রয়েছি। ছেলেদের হত্যাকারীদের সাজা দেখতে না-পেলে মরেও শান্তি পাব না!’’ বক্তব্য জানতে বুধবার বারবার ফোন করা হলেও ধরেননি মনিরুল। উত্তর দেননি এসএমএসেরও।
বীরভূম জেলা তৃণমূলের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের হাত ধরেই তৃণমূলে আসেন মনিরুল। গত এক বছরে অনুব্রতের সঙ্গে দূরত্ব বেড়েছে তাঁর। লোকসভা ভোটে কার্যত ব্রাত্য করে রাখা হয় মনিরুলকে। ভোটের পরেই তিনি দিল্লি গিয়ে বিজেপি-তে যোগ দেন। কিন্তু তা মানতে পারেননি জেলা বিজেপি নেতা-কর্মীদের একাংশ। হাইকোর্টের রায়ে খুশি তাঁরাও। বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি বিশ্বজিৎ মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা দলে ওঁর অনুপ্রবেশ মানতে পারিনি। কোর্টের রায়ে কর্মী-সমর্থকেরা স্বস্তি পাবেন।’’ তৃণমূলের জেলা কমিটির সদস্য ও সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীর মন্তব্য, ‘‘আইন আইনের পথে চলবে।’’ বীরভূমের এসপি শ্যাম সিংহ বলেন, ‘‘নির্দেশের কথা জেনেছি সংবাদমাধ্যমে। নির্দেশ এখনও হাতে পাইনি। যে-রকম নির্দেশ থাকবে, সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy