কলকাতা, হাওড়া-সহ সারা রাজ্যে আইনজীবীদের টানা কর্মবিরতিতে মানুষের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছে সুপ্রিম কোর্ট। এই পরিপ্রেক্ষিতে হাওড়া আদালতের আইনজীবীদের উপরে পুলিশের লাঠি চালানোর ঘটনার তদন্তে বুধবার এক সদস্যের বিচার বিভাগীয় কমিশন গড়ে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। অন্ধ্রপ্রদেশের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্তের নেতৃত্বে ওই কমিশন তিন মাসে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে।
একই সঙ্গে হাইকোর্ট এ দিন নির্দেশ দেয়, ভবিষ্যতে রাজ্যের কোনও আদালতে পুলিশকে ঢুকতে হলে হাইকোর্ট বা সংশ্লিষ্ট আদালত প্রশাসনের অনুমতি নিতে হবে।
উচ্চ আদালত কমিশন গড়ে দিলেও আইনজীবীরা কাজে ফিরছেন কি না, এ দিনও তা স্পষ্ট হয়নি। রাজ্য বার কাউন্সিলের একটি সূত্র জানিয়েছে, হাইকোর্টের রায় খতিয়ে দেখে কাল, শুক্রবার পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা আছে। ওই নির্দেশ ‘মনঃপূত’ হলে আইনজীবীরা কাজ শুরু করবেন। অর্থাৎ হাইকোর্টের নির্দেশটি কাউন্সিলের বেশির ভাগ সদস্যের ‘মনঃপূত’ হওয়া বা না-হওয়ার উপরে নির্ভর করছে কয়েক হাজার বিচারপ্রার্থীর ভবিষ্যৎ।
কমিশন গড়ে দেওয়ার পাশাপাশি বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার ও বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে, লাঠি চালানোর ঘটনায় হাওড়া সিটি পুলিশের কমিশনার-সহ যে-সব পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে জেলা জজের অনুমতি না-নিয়ে আদালতে ঢোকার অভিযোগ উঠেছে, তাঁদের যেন হাওড়ায় কোনও কাজ দেওয়া না-হয়। ওই অফিসারেরা হলেন হাওড়ার সিপি বিশাল গর্গ, অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার ভাবনা গুপ্ত, অতিরিক্ত কমিশনার (দক্ষিণ) গোলাম সারওয়ার, ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) ভিএসআর অনন্তনাগ, হাওড়া থানার ওসি রাজর্ষি দত্ত, ওই থানারই অফিসার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিপেন তামাং।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কোন কোন বিষয়ে তদন্ত করবে কমিশন? ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে, হাওড়া আদালতে ঢুকে হাওড়া পুরসভার কোন কোন স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মী ভাঙচুর চালিয়েছিলেন, কারা আইনজীবীদের মারধর করেন, কোন কোন পুলিশ অফিসার হাওড়া আদালতে ঢুকে লাঠি চালিয়েছিলেন, কমিশন তার তদন্ত করবে। অভিযুক্ত পুরকর্মী ও পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তার সুপারিশও করবে কমিশন।
২৪ এপ্রিল হাওড়া আদালতে ঢুকে লাঠি চালায় পুলিশ। সেখানকার আইনজীবীদের অভিযোগ, হাওড়া পুর নিগমের কর্মীরা আদালতে ঢুকে বেশ কয়েকটি সেরেস্তা ভাঙচুর করেন। মেরেধরে জখম করা হয় কয়েক জন আইনজীবীকে। অভিযোগ, ওই ঘটনার প্রতিবাদে আইনজীবীরা পুর নিগমের সামনে অবরোধ করলে তা তুলতে গিয়ে পুলিশ লাঠি চালায়। পুলিশের বক্তব্য, আইনজীবীদের একাংশও পুর নিগমের কর্মী ও তাঁদের উপরে হামলা চালান। এই অভিযোগের ভিত্তিতে হাওড়া থানায় আইনজীবীদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি এফআইআর করা হয়েছে। ডিভিশন বেঞ্চ এ দিন রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছে, বিচারপতি সেনগুপ্তের কমিশনের তদন্ত শেষ হওয়ার আগে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে তদন্ত যেন আর না-এগোয়।
বিচারপতি সমাদ্দারের ডিভিশন বেঞ্চের প্রশ্ন, হাওড়া আদালতে তো সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়নি! তা হলে পুলিশ এমন আচরণ করল কেন? বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ: যে-সব পুরকর্মী আদালতে ঢুকে ভাঙচুর চালালেন, মারধর করলেন, পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও রকম আইনি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলেই মনে করেনি। তাঁদের বাধা পর্যন্ত দেয়নি। উল্টে আইনজীবীদের বিরুদ্ধে হাঙ্গামার অভিযোগে এফআইআর করেছে। ২৪ এপ্রিল সকাল থেকে গোলমালের খবর পেয়েও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে দেখেও তা নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। গোলমাল বাড়তে দিয়েছে। প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণ বলছে, পুলিশের আচরণ ‘বর্বরোচিত’। তারা পুরকর্মীদের বাড়তি সুবিধা দিয়েছে।
ডিভিশন বেঞ্চের আরও পর্যবেক্ষণ: হাওড়ার ঘটনায় হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা করেছে। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি পুলিশ ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের হলফনামা দিয়ে বক্তব্য পেশ করতে বলেছেন। তা সত্ত্বেও পুলিশের হাওড়া আদালতে ঢোকার কথা পুলিশ কমিশনার তাঁর হলফনামায় জানাননি। ওই ব্যাপারে একটি শব্দও লেখেননি। তথ্য গোপন করে আদালতকে বিপথে চালিত করেছেন পুলিশ কমিশনার।
ডিভিশন বেঞ্চ মামলার নিষ্পত্তি করেনি। পরবর্তী শুনানি ২৬ অগস্ট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy