Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Calcutta High Court

এক শতাংশ অভিযোগ সত্য হলেও লজ্জার বিষয়! হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির মন্তব্য সন্দেশখালি মামলায়

বৃহস্পতিবার সন্দেশখালি নিয়ে জনস্বার্থ মামলার শুনানি ছিল কলকাতা হাই কোর্টে। এই ঘটনায় দায়ের হওয়া মোট পাঁচটি জনস্বার্থ মামলা একত্র করে শোনে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ।

Hearing on Sandeshkhali case in Calcutta High Court on Thursday

কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৩১
Share: Save:

জেলা প্রশাসন এবং রাজ্যের শাসকদলের নৈতিক দায়িত্ব অবশ্যই পালন করা উচিত। সন্দেশখালি নিয়ে জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে এমনই মন্তব্য করলেন কলকাতা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম। একই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “এক শতাংশ অভিযোগ সত্য হলেও লজ্জার বিষয়।”

বৃহস্পতিবার সন্দেশখালি নিয়ে জনস্বার্থ মামলার শুনানি ছিল কলকাতা হাই কোর্টে। এই ঘটনায় দায়ের হওয়া মোট পাঁচটি জনস্বার্থ মামলা একত্রে শোনে প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ। আদালতে সওয়াল করে ইডির আইনজীবী আর্জি জানান, শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সব এফআইআর এবং চার্জশিটের কপি দেওয়া হোক। হাই কোর্ট জানায়, রাজ্য জানিয়েছে ৪০টির বেশি এফআইআর হয়েছে। তবে এখনই ইডির হাতে সেগুলো দেওয়ায় আপত্তি রয়েছে। পরবর্তী শুনানির দিন সেগুলি আদালতে জমা দিতে হবে। আদালত খতিয়ে দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাবে।

এক জনস্বার্থ মামলাকারীর আইনজীবী আর্জি জানান যে, এই মামলায় সাক্ষীদের নিরাপত্তা দেওয়া হোক। নিরাপত্তার কারণে কোনও মহিলা সাক্ষী দেওয়ার জন্য আদালতে এগিয়ে আসেননি বলে দাবি করেন তিনি। আর এক মামলাকারীর আইনজীবী প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল বলেন, “অনেক মহিলা লিখতে-পড়তে পারেন না। তাঁরা কী ভাবে সাক্ষী দেবেন? সেখান থেকে অনেক অভিযোগ এসেছে। আমি তাঁদের অনেককে আদালতে নিয়ে এসেছি। আর রাজ্য বলছে কিছুই হয়নি। আমি হলফনামায় ওই সব তথ্য জানিয়েছি। নিরাপত্তা না দিলে তাঁদের হুমকি দেওয়া হবে।’’

সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর শাহজাহানের আইনজীবীর উদ্দেশে কড়া সুরে প্রধান বিচারপতি বলেন, “এক জন অভিযুক্তের হয়ে আপনি সওয়াল করছেন। প্রথমে নিজের চারপাশের ছায়া থেকে মুক্ত হন। তার পরে অন্যের অভিযোগ নিয়ে কথা বলবেন। হলফনামার একটি অভিযোগও যদি সত্যি হয়, সেটাও লজ্জাজনক।” একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, “সরকার বলে এখানে মহিলারা নিরাপদে রয়েছেন। একটি হলফনামার একটি অভিযোগ প্রমাণিত হলেই তো ওই সব দাবি অসত্য হয়ে যাবে।”

এখানেই থামেননি প্রধান বিচারপতি। শাহজাহানের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, “৪০ দিন ধরে পালিয়ে বেড়িয়েছেন। লুকোচুরি খেললেন। তার পরেও নিজের অবস্থান অস্পষ্ট করেননি। আপনার চোখ বন্ধ রাখছেন বলে সারা দুনিয়া অন্ধকার হয়ে যাবে, এটা ভাবার কোনও কারণ নেই।”

আর এক আইনজীবী আদালতে সওয়াল করে জানান, নিরপেক্ষ সংস্থাকে দিয়ে পুরো ঘটনার তদন্ত করানো হোক। বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করে রাজ্যের বাইরে কোনও অফিসারকে মাথায় রাখা হোক। মণিপুরের মতো অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হোক। নির্যাতিত মহিলাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক।

রাজ্যের পক্ষে সওয়াল করে অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) বলেন, “গত পঞ্চায়েত ভোটে দেখেছি প্রচুর জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়। নির্দেশও আসে। সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত যায়। কিন্তু যখন ইলেকশন পিটিশন করতে বলা হয়, তখন কেউ আর থাকে না। আসলে সবই কুমিরের কান্না। তার পরে ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় প্রচুর অভিযোগ এসেছে। সিবিআই তদন্ত হয়। কিন্তু এখন কতগুলো অভিযোগ বেঁচে রয়েছে? আদালত চাইলে সিবিআইয়ের কাছে রিপোর্ট চেয়ে দেখতে পারে।”

সিবিআইকেই আক্রমণ করেন রাজ্যের এজি। তিনি বলেন, “আমি বলছি না সন্দেশখালিতে কোনও ঘটনা ঘটেনি। কী হয়েছে, সেটাই দেখতে হবে। প্রিয়ঙ্কা টিবরেওয়াল এত কথা বলছেন। তিনি বলবেন সাধারণ মানুষ হিসাবে বলছেন না কি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসাবে? শাহজাহান যদি এতই হিংস্র হয়, তবে কি ইডি তল্লাশি করতে গেলে প্রচুর লোক বেরিয়ে আসে? এটা বিশ্বাসযোগ্য? বাইরে হয়তো আমার অনেক সমালোচনা হবে, কিন্তু বলতে হবে সিবিআই তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টও বলেছে খাঁচার তোতাপাখি। প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি এনভি রমণাও একই কথা বলেছিলেন।”

তবে শুনানি শেষ হলেও বৃহস্পতিবার রায়দান স্থগিত রেখেছে উচ্চ আদালত।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy