৩৬ হাজার শিক্ষকের নিয়োগ নিয়ম মেনে হয়নি বলে অভিযোগ করেছিলেন বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা। প্রতীকী ছবি।
প্রাথমিকে ৩২০০০ শিক্ষকের চাকরি বাতিল সংক্রান্ত মামলার শুনানি শুরু হল ডিভিশন বেঞ্চে। যদিও ডিভিশন বেঞ্চ তাদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে জানিয়েছে, বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায় চাকরিহারাদের নেকড়ের মুখে ফেলে দেয়নি। তাঁরা চাইলেই আবার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেন। শিক্ষকদের নিয়োগে ত্রুটির কথা জানিয়ে গত শুক্রবার ৩৬ হাজার (পরে জানা যায়, মুদ্রণগত ত্রুটির কারণে ৩২ হাজারটা বেড়ে ৩৬ হাজার হয়েছে) প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টের উচ্চতর বেঞ্চে যায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। মঙ্গলবার সেই মামলাটিই শুনানির জন্য ওঠে হাই কোর্টের বিচারপতি সুব্রত তালুকদার এবং বিচারপতি সুপ্রতিম ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে। শুনানির শুরুতেই ওই মন্তব্য করেন বিচারপতি তালুকদার। তিনি বলেন, ‘‘একক বেঞ্চ তো আবার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে। কাউকে তো নেকড়ের সামনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয়নি। তা হলে সমস্যা কোথায়?’’
বিচারপতির এই প্রশ্নের জাবাবেই একের পর এক আইনজীবী নিজেদের যুক্তি পেশ করেন আদালতে। মঙ্গলবার পর্ষদের তরফে হাজির ছিলেন আইনজীবী লক্ষ্মী গুপ্ত। তিনি বলেন, ‘‘চাকরিহারা ওই প্রাথমিক শিক্ষকদের অ্যাপ্টিটিউড টেস্ট হয়নি তা বিচারপতি কী ভাবে বুঝলেন, আমাদের বিভিন্ন জেলা মিলিয়ে ১০০ জনের বেশি পরীক্ষক বা ইন্টারভিউয়ার ছিলেন। বিচারপতি মাত্র কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। শুধু তার ভিত্তিতে তিনি কী ভাবে বলে দিলেন, অ্যাপ্টিটিউট টেস্ট সঠিক পদ্ধতিতে না নিয়ে নম্বর দেওয়া হয়েছে?’’
চাকরিহারাদের তরফে ছিলেন সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি যুক্তি দেন, ‘‘অপ্রশিক্ষিত হওয়ার জন্যই যদি চাকরি বাতিল হয়, তবে যাঁরা মামলা করেছেন, তাঁরাও তো অপ্রশিক্ষিত প্রার্থী। তা ছাড়া নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি যখন দেওয়া হয়েছিল। তাতে স্পষ্ট বলা ছিল, অপ্রশিক্ষিত হলেও চাকরি পাবেন কিন্তু দু’বছরে প্রশিক্ষণ সম্পূর্ণ করতে হবে। তার পরও কী ভাবে অপ্রশিক্ষিত হওয়ার জন্য চাকরি বাতিল হতে পারে?’’
এ ব্যাপারে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম না করে কল্যাণ বলেন, ‘‘আমি হাই কোর্টের সমস্ত বিচারপতির সম্মান রেখে বলছি, এই বিচারপতি বিচারাধীন মামলার বাইরে গিয়েও মন্তব্য করেন। কোথাও পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মানিক ভট্টাচার্য গ্রেফতার হয়েছেন, সে সব নিয়েও মন্তব্য করতে শোনা গিয়েছে তাঁকে।’’
মূল মামলাকারীদের আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘‘অনিয়ম যে হয়েছে, কে কত নম্বর পেয়েছেন, তা তো পর্ষদের প্রকাশিত প্যানেলের তথ্য থেকেই জানা যাচ্ছে। ৩২ হাজারের চাকরি যাওয়া নিয়ে এত কথা বলা হচ্ছে। অথচ চাকরির অপেক্ষায় যে হাজার হাজার চাকরিপ্রার্থী বসে রয়েছেন তাঁদের কী হবে?’’
চাকরিহারাদের তরফে মঙ্গলবার হাই কোর্টে সওয়াল করেন আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ। তিনিও বলেন, ‘‘চাকরিহারাদের বক্তব্য শোনা হয়নি। কেন চাকরি গেল, তার কারণও জানানো হয়নি।’’
সব পক্ষের বক্তব্য শুনে শেষে বিচারপতি তালুকদার বলেন, ‘‘আমরা সেই কারণই জানার চেষ্টা করব।’’ আদালত সূত্রে খবর, বুধবারই এই মামলার শুনানি রয়েছে হাই কোর্টে।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মোট ৪২ হাজার ৫০০ জন শিক্ষককে নিয়োগ করা হয়েছিল রাজ্যের বিভিন্ন প্রাথমিক স্কুলে। তাঁদের মধ্যে ৩৬ হাজার শিক্ষকের নিয়োগ নিয়ম মেনে হয়নি বলে অভিযোগ করেছিলেন বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এই ৩৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি অবিলম্বে বাতিল করার নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, আগামী ৪ মাস তাঁরা পার্শ্বশিক্ষক হিসাবে স্কুলে কাজ করবেন। আর ওই চার মাসের মধ্যেই এই শিক্ষকদের ছেড়ে যাওয়া পদে যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ শুরু করে শেষ করতে হবে পর্ষদকে। সোমবার এই চাকরিচ্যুতদের তরফেও বিচারপতির নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে একটি মামলা হয়েছে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy