—ফাইল চিত্র।
পরিকল্পনা মেনেই সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রক্তপরীক্ষা, ডিজিটাল এক্স-রে, এমআরআই, সিটি স্ক্যান-সহ বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা নিখরচায় করার নির্দেশ জারি করল স্বাস্থ্য দফতর। বুধবারের ওই নির্দেশে জানানো হয়েছে, ওই সব হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা তো বটেই, বহির্বিভাগে আসা রোগীরাও চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে বিনামূল্যের এই পরিষেবা পাবেন।
এই ব্যবস্থায় সাধারণ ভাবে রোগীদের সুরাহা হওয়ারই কথা। কিন্তু প্রশাসনের অন্দরেই সংশয় জাগছে, নিখরচায় ওই সব পরিষেবা পেতে গিয়ে সম্পূর্ণ পরিষেবাটাই মুখ থুবড়ে পড়বে না তো! স্বাস্থ্য দফতরের ‘ডায়াগনস্টিক সার্ভিস’-এর এই পরিকল্পনায় সমস্যা কি বাড়বে!
এমন সংশয় কেন?
এত দিন পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপি মডেলে তৈরি প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরিতে বাজারের থেকে কম টাকায় ওই সব পরিষেবা পেতেন রোগীরা। নতুন ব্যবস্থায় রোগীর কাছ থেকে কোনও টাকা নেওয়া হবে না। স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, ল্যাবরেটরিতে রোগীকে দেওয়া পরিষেবা বাবদ খরচের বিল জমা পড়বে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষের কাছে। বিল যাচাই করে টাকা মিটিয়ে দেবে সরকার।
প্রশাসনের একাংশ মনে করছেন, জটিলতা তৈরি হবে বিল মেটানোর প্রক্রিয়াতেই। সরকারি কাজের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতার চিরাচরিত ফাঁদে পড়ে যাবে এই টাকা আদায়ের বিষয়টিও। স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, জেলার হাসপাতালে বিনামূল্যের এই পরিষেবা ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে। পরিষেবা বাবদ যে-খরচ হয়, রাজ্য সরকার তার পুরোটা দেয় না। কেন্দ্রের ‘ন্যাশনাল ফ্রি ডায়াগনস্টিক সার্ভিস’ প্রকল্পের আওতায় এই পরিষেবা দেওয়া হয়। কেন্দ্রের টাকা বরাদ্দ করা এবং হাসপাতালের বিল যাচাই করে বিল মেটানোর প্রক্রিয়া যথেষ্ট দীর্ঘ। তাই দীর্ঘসূত্রতার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এই প্রক্রিয়ায় সমস্যা বাড়বে বলে জানাচ্ছেন বিভিন্ন বেসরকারি প্যাথলজি সংস্থার কর্তারাও। কলকাতার একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পিপিপি মডেলের সঙ্গে যুক্ত একটি ডায়াগনস্টিক সংস্থার কর্তা জানান, বাজারের তুলনায় কম খরচেই রোগীরা পরিষেবা পেতেন। কিন্তু একসঙ্গে বহু রোগী থাকায় ব্যবসায় সমস্যা হত না। সাধারণ রোগীদেরও সুরাহা হত। যেমন, মস্তিষ্কের এমআরআই করতে বাজারে খরচ পড়ে আট হাজার টাকা। অথচ সরকারি মেডিক্যাল কলেজের পিপিপি সেন্টারে ২৪৯০ টাকায় সেই পরিষেবা পাওয়া যায়। একই ভাবে ডায়ালিসিস কিংবা সিটি স্ক্যানের ক্ষেত্রে বাজারের তুলনায় অর্ধেকেরও কম টাকায় পরিষেবা মেলে। উপরন্তু তাঁদের কোনও কর্তৃপক্ষের উপরে নির্ভর করে থাকতে হয় না।
বেসরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে পরিষেবা দেওয়ার জন্য রাজ্যে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প রয়েছে। সেখানেও বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার খরচ মেটায় সরকার। কিন্তু অধিকাংশ বেসরকারি হাসপাতালই এই প্রকল্পের আওতায় আসতে আগ্রহী নয়। অনেক বেসরকারি হাসপাতালের কর্তারা জানাচ্ছেন, সরকারের কাছ থেকে বকেয়া টাকা আদায়ের ব্যাপারটা বেশ জটিল ও সময়সাপেক্ষ। পরিষেবা দেওয়ার পরে মাসের পর মাস অপেক্ষা করা কঠিন। ‘‘অনেক বেসরকারি সংস্থাই পিপিপি মডেলে প্যাথলজি সেন্টারে কাজ করতে চায়। কিন্তু টাকা মেটানোর ক্ষেত্রে জটিলতা চললে বেসরকারি হাসপাতালের মতো অনেকেরই আর আগ্রহ থাকবে না,’’ বলছেন একটি ডায়াগনস্টিক সংস্থার কর্তা।
স্বাস্থ্য দফতর অবশ্য এই সব সংশয়কে আমল দিতে রাজি নয়। রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানাচ্ছেন, পরিকল্পনা শুরু হয়েছে। তবে এত সংশয়ের কিছু নেই। এই পরিকল্পনা সফল করার প্রথম ধাপ হল সরকারি প্যাথলজি সেন্টারগুলোকে শক্তিশালী করা। যাতে বেসরকারি সংস্থার উপরে অতিরিক্ত নির্ভরতা কমানো যায়। সেই অনুযায়ী পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। ‘‘কিছু ক্ষেত্রে বেসরকারি সেন্টারের প্রয়োজন অবশ্যই আছে। পরিষেবা বাবদ খরচ মেটানোর ক্ষেত্রে বিলে গোলমাল না-থাকলে কোনও জটিলতা হবে না,’’ আশ্বাস স্বাস্থ্য অধিকর্তার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy