হর্ষবর্ধন শ্রিংলা ও রাজু বিস্তা। — ফাইল চিত্র।
দার্জিলিং তো প্রাক্তন আমলা হর্ষবর্ধন শ্রিংলার। কিন্তু কোথায় যাবেন সেই আসনে গত বারের জয়ী সাংসদ রাজু বিস্তা? আপাতত বিজেপি শিবিরের অন্দরে সেটাই প্রশ্ন।
বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি না-হলে সাধারণত জয়ী সাংসদকে তাঁর আসন থেকে সরানো হয় না। কমবেশি সব রাজনৈতিক দলই সেই রেওয়াজ মেনে চলে। কিন্তু দার্জিলিং আসনের জন্য বিজেপি এ বার তার ব্যতিক্রম ঘটাচ্ছে। গত কয়েকটি লোকসভা ভোটেই অবশ্য বিজেপি পাহাড়ে তাদের প্রার্থী বদল করেছে। ২০০৯ সালে প্রথম ওই আসনটি জিতেছিল বিজেপি। দার্জিলিং থেকে জিতেছিলেন যশোবন্ত সিংহ। ২০১৪ সালে যশোবন্তকে সরিয়ে বিজেপি প্রার্থী করেছিল সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়াকে। আবার ২০১৯ সালে তাঁকে টিকিট দেয়নি বিজেপি। সুরিন্দরকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে। তিনি ওই আসনে জিতে এখন সাংসদ। ২০১৯ সালে আবার সুরিন্দরের বদলে বিস্তাকে প্রার্থী করেছিল বিজেপি। এ বার বিস্তাকে সরিয়ে শ্রিংলাকে প্রার্থী করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। প্রসঙ্গত, বিস্তা ওই আসনে জিতেছিলেন চার লক্ষেরও বেশি ভোটে।
দার্জিলিং আসনের প্রার্থী হিসেবে শ্রিংলাকে নিয়ে জল্পনা ছিল। সেই জল্পনায় সিলমোহর দিয়ে দিয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। চলতি সপ্তাহেই শ্রিংলাকে দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলছেন অমিত শাহ। সূত্রের খবর, শ্রিংলাকে বলে দেওয়া হয়েছে দার্জিলিঙে নিজের ‘ভিত্তি’ আরও বাড়াতে। মুম্বইয়ে জন্ম হলেও শ্রিংলার পারিবারিক যোগাযোগ রয়েছে দার্জিলিঙে। সেই হিসাবে তিনি নিজেকে পাহাড়ের ‘ভূমিপুত্র’ হিসাবে পরিচয় দেন। সম্প্রতি এ নিয়ে অনেক বিতর্কও তৈরি হয়েছে। তবে শ্রিংলার পরিচয় শুধু ভারতের গণ্ডিতে আটকে নেই। তিনি ভারতের রাষ্ট্রদূত থেকেছেন আমেরিকায়। দু’বছরের জন্য রাষ্ট্রদূত ছিলেন তাইল্যান্ডেও। আবার বাংলাদেশে ভারতের হাই কমিশনার পদেও ছিলেন। দেশের বিদেশসচিব হন ২০২০ সালে। ২০২৩ সালে তাঁকেই ভারতে হওয়া জি-২০ সম্মেলনের প্রধান হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
এমন উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্ব সামলানো ব্যক্তিকে প্রত্যাশিত ভাবেই বিজেপি কোনও ‘নিশ্চিত’ আসনে প্রার্থী করতে চায়। শ্রিংলাকে নিয়ে জল্পনা শুরু হয়, যখন সম্প্রতি পাহাড়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে দেখা যেতে থাকে তাঁকে। ‘দার্জিলিং ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’ নামে একটি বেসরকারি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত তিনি। সেই সংস্থার নামে বিবিধ কর্মসূচিতে অংশ নিতে দেখা যায় তাঁকে। অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধনের দিনেও শ্রিংলা তাঁর স্ত্রী হেমালকে নিয়ে পাহাড়ে যজ্ঞানুষ্ঠান করেন। বিজেপির মঞ্চে বসে তাঁকে অযোধ্যার অনুষ্ঠানের সরাসরি সম্প্রচার দেখতেও দেখা যায়। তার পরেই তাঁকে দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়েছিলেন শাহ। সেখানেই শ্রিংলাকে তিনি দার্জিলিং নিয়ে সবুজ সঙ্কেত দিয়ে দিয়েছেন বলে বিজেপি সূত্রের খবর। যার পরে রাজ্য বিজেপির অন্দরে এমন আলোচনাও শুরু হয়েছে যে, তৃতীয় মোদী সরকারে শ্রিংলাকে মন্ত্রী করা হবে।
শ্রিংলার আসন পাকা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিস্তাকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে বিজেপিকে। ‘গুরুত্বপূর্ণ’ নেতা বিস্তাকে যুব মোর্চার সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি দলের জাতীয় মুখপাত্রও হয়েছেন। এখনও পর্যন্ত যা ঠিক রয়েছে, তাতে উত্তর-পূর্বের কোনও রাজ্য থেকে বিস্তাকে টিকিট দেওয়া হতে পারে। প্রসঙ্গত, বিস্তার জন্ম মণিপুরের সেনাপতি জেলায়।
বিস্তার জন্য আরও একটি আসনের নাম ভাবা হয়েছে। সেটি হল বর্ধমান-দুর্গাপুর। সেখানকার সাংসদ অহলুওয়ালিয়াকে বিজেপি এ বার প্রার্থী না-ও করতে পারে। কারণ, হিসাবে তাঁর বয়সের কথা বলা হচ্ছে। পাশাপাশিই, অহলুওয়ালিয়ার বিরুদ্ধে নিজের লোকসভা এলাকায় সময় না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিস্তাকে জেতা আসন বর্ধমান-দুর্গাপুরেও টিকিট দিতে অসুবিধা হবে না। তবে রাজ্য নেতারা এ বিষয়ে এখনই প্রকাশ্যে কিছু বলতে রাজি নন। শ্রিংলা অবশ্য শাহের নির্দেশমতো দার্জিলিঙে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy