হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। —ফাইল চিত্র।
বাবা হিন্দু, মা বৌদ্ধ। দুই সম্প্রদায়ের ‘সেরা সংস্কার’ তিনি কাজে লাগাতে চান উত্তরবঙ্গের উন্নয়নে। মঙ্গলবার এমনটাই জানালেন দার্জিলিং জেলার ভূমিপুত্র, দীর্ঘ চার দশক ভারতের বিদেশনীতির গুরুদায়িত্ব সামলানো হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। বিশ্ব পরিভ্রমণ করে এখন যিনি অনেকটাই শিকড়মুখী। তাঁকে পাহাড়ে প্রার্থী করার কথাও ভাবছে বিজেপি। শ্রিংলা বলেন, “উত্তরবঙ্গের জন্য এমন পরিকল্পনা দরকার, যা দীর্ঘস্থায়ী এবং টেকসই ভাবে মানুষের কাজে লাগবে। কিছু কাজ আমি শুরু করে দিয়েছি ইতিমধ্যেই। আরও অনেক পরিকল্পনা মাথায় রয়েছে। সুযোগ পেলে করব।”
গত এক বছর ধরে জি২০-র গুরুদায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি নিজের পৈতৃক ভূমির দিকে স্থির নজর রেখেছেন শ্রিংলা। দলীয় সূত্রের খবর, তাঁকে দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্র থেকে দাঁড় করাতে আগ্রহী বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। সাধারণত দার্জিলিং, কালিম্পং, মিরিক, কার্শিয়াং পাহাড়ে যে প্রার্থী বেশি ভোট পান, তিনিই ওই আসনে জেতেন। আশির দশকের পর থেকে এই আসনে বাইরে থেকে ‘পরিচিত নামে’র প্রার্থী দাঁড় করানোর চল শুরু হয়। ইন্দ্রজিৎ খুল্লার, জশবন্ত সিংহ, সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া থেকে রাজু বিস্তা এই তালিকায় শেষ সংযোজন। তবে এঁরা সবাই ‘বহিরাগত’। এ বার শ্রিংলার নামকে অগ্রাধিকার দেওয়ার একটি কারণ, দার্জিলিঙের আদি বাসিন্দা হিসাবে শ্রিংলার পাহাড়ে পরিচিতি রয়েছে। রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে তিনি কূটনীতিক হিসাবে গত কয়েক দশকে যে কাজ করেছেন, তাকেও বিবেচনার মধ্যে রাখছেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব।
তবে কবে টিকিট পাবেন, তার জন্য অপেক্ষা না করে এলাকার উন্নয়নে বারবারই ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে প্রাক্তন বিদেশসচিবকে। আজ বললেন, “এখনও পর্যন্ত স্থির রয়েছে ২৫ নভেম্বর ভারতে গেটস ফাউন্ডেশন-এর প্রধান হরি মেনন এবং সংশ্লিষ্ট কিছু কর্তা দার্জিলিং পৌঁছবেন। আমিও সঙ্গে থাকব। এই প্রথম ওই সংস্থার কেউ পদার্পণ করবেন উত্তরবঙ্গে। বনাঞ্চলকে সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগানো, চা বাগানের ফাঁকা জমি ব্যবহার করা, অরণ্য বর্জ্যের পুনর্ব্যবহারের সম্ভাবনাগুলি খতিয়ে দেখবেন তাঁরা। এলাকার প্রান্তিক মানুষ, এনজিও, পুরসভার প্রতিনিধিদের সঙ্গে তাঁদের কথা বলানোর ব্যবস্থা করা হবে।” এর পরই দার্জিলিং ওয়েলফেয়ার সোসাইটির (যা তিনি শুরু করেছিলেন বেশ কয়েক বছর আগে) নেতৃত্বে প্রায় কুড়িটি ভারতীয় এবং বহুজাতিক সংস্থার একটি প্রশিক্ষণ তথা কমর্সংস্থান কর্মসূচির আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন শ্রিংলা। দুবাইয়ের কিছু সংস্থা সেখানে যোগ দেবে। আইটি, বিপিও, ওষুধ শিল্প, হাসপাতাল পরিষেবা ক্ষেত্রগুলিতে প্রশিক্ষণের পর ওই শিবির থেকেই স্থানীয়দের একাংশের কর্মসংস্থান হবে বলে তাঁর দাবি।
উত্তরবঙ্গের প্রকৃতি ও পরিবেশ সুরক্ষায় জোর দিয়ে শ্রিংলা বলেন, “দূষণ ছড়াবে না এমন শক্তির আশু প্রয়োজন। চা শিল্পের জন্য পাইপের মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাসের জোগান দরকার। পাইপলাইনের সংযোগ কলকাতা থেকে রংপুরে ইতিমধ্যেই রয়েছে। শিলিগুড়িতে এই পাইপের মাধ্যমেই গ্যাস দেওয়া সম্ভব।” বনাঞ্চল ধ্বংস, হাতির গমনপথ সঙ্কুচিত হওয়ার মতো বিষয়গুলি নিয়েও টেকসই পদক্ষেপের কথা বলছেন শ্রিংলা। তাঁর কথায়, “শিলিগুড়িকে স্মার্ট সিটির তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল বহু দিন আগেই। কিন্তু কাজ এগোয়নি। জি২০-তে সামান্য কিছু করা গিয়েছে। অপটিকাল ফাইবারের বিস্তীর্ণ নেটওয়ার্ক, আধুনিক পয়ঃপ্রণালী, সবুজ রক্ষা, সৌন্দর্যায়ন, বৈদ্যুতিন লাইনের আধুনিকীকরণ, সংযোগকে মসৃণ করার বহু কাজ বাকি।”
প্রসঙ্গত কিছু দিন আগে শ্রিংলার উদ্যোগ ও নেতৃত্বে বিনিয়োগ আর বাণিজ্য সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে কার্শিয়াং ও দার্জিলিঙে দু’দিনের সফরে আসেন ‘ইউনাইটেড স্টেটস-ইন্ডিয়া স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ ফোরাম’-এর প্রতিনিধিরা। তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy