ফের নতুন জীবনে ফিরছেন শিবু বারুই। —নিজস্ব চিত্র।
প্রায় দে়ড় যুগ ঘরবন্দি। বছরের পর বছর কেটেছে একচিলতে ঘরের তক্তপোষের তলায়। পরিবার, পড়শি, আত্মীয়স্বজন বা বন্ধুবান্ধব— কেউই তাঁকে তক্তপোষের তলা থেকে বার করে আনতে পারেননি। একচিলতে ঘরেই চলছিল খাওয়াদাওয়া, মলমূত্র ত্যাগ। চলছিল নেশাও। এ ভাবেই কেটেছে প্রায় ১৪ বছর। ‘প্রেমিকা’র সঙ্গে বিচ্ছেদের জেরেই কি এতগুলি বছর নিজেকে ঘরবন্দি করে রেখেছিলেন বছর তেতাল্লিশের শিবু বারুই?
দু’সপ্তাহ হল শিবুকে যেন নতুন জীবন দিয়েছেন স্থানীয় নেশামুক্তি কেন্দ্রের কর্মকর্তা সুমন্ত আইচ। পূর্ব বর্ধমানের গুসকরা শহরের বাসিন্দা শিবুর কথা শুনে তাঁকে নিজের কেন্দ্রে নিয়ে যান সুমন্ত। সেখানে চিকিৎসার পাশাপাশি চলছে তাঁর কাউন্সেলিং। সুমন্ত বলেন, ‘‘শিবু বারুইকে যখন ঘর থেকে বার করা হল, তখন তাঁর হাতপায়ের আঙুলে বড় ব়ড় নখ গজিয়ে গিয়েছে। মাথার চুলে জট। শরীরে পুরু ময়লার আস্তরণ। সূর্যের আলোয় তাকাতে পারছিলেন না। এখানে আসার দু’সপ্তাহের মধ্যেই সূর্যের আলো দেখছেন। কথাও বলছেন। তাঁর মানসিক অবস্থাও অনেকটাই উন্নতির দিকে।’’
প্রায় ১৪ বছর ধরে বদ্ধ ঘরে থাকা ছোট ছেলের শিবুর মলমূত্র পরিষ্কার করতেন অশীতিপর মা কমলা দেবী। গুসকরার বিবেকানন্দ পল্লিতে তাঁদের একতলা বাড়ি। আশি পেরোনো বিধবা বলেন, ‘‘আর পাঁচটা যুবকের মতোই স্বাভাবিক ছিল শিবু। একটা দোকানে কাজও করত। কিন্তু প্রায় ১৪ বছর আগে হঠাৎ কেমন বদলে যায়। কিছুতেই ঘর থেকে বেরোতে চাইত না। কারও সঙ্গে কথাবার্তাও পছন্দ করত না। ওর ঘরে কেউ ঢুকলেই বিরক্ত হত। দরজা-জানালা বন্ধ করে থাকত। বদ্ধ ঘরের তক্তপোষের তলাটাই সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা ছিল শিবুর কাছে।’’
বছর কয়েক আগে কমলা দেবীর বড় ছেলে মারা গিয়েছেন। বড় ছেলের স্ত্রী অঞ্জু বারুই পরিচারিকার কাজ করেন। তাঁর রোজগারের টাকাতেই সংসার চলে। অঞ্জুর মেয়ে বাইরে থেকে পড়াশোনা করেন। অঞ্জু বলেন, ‘‘আমার দেওর স্বাভাবিকই ছিল। দোকানে কাজকর্ম করত। তবে ওই দোকানের মালিক কাজ ছাড়িয়ে দেওয়ার পর ঘরবন্দি হয়ে গেল।’’
কাজ হারানোর জন্যই কি নিজেকে ঘরবন্দি করেছিলেন শিবু? অঞ্জু অবশ্য অন্য কথাও জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘শিবুর কাছে সব সময় একটি বাক্স থাকত। ওই বাক্সের মধ্যে একটি মেয়ের ছবি দেখেছিলাম।’’ অঞ্জু এবং শিবুর মা, দু’জনেই নাকি ওই মেয়েটির সঙ্গে সম্পর্কের কথা জানতেন। তবে তাঁর সঙ্গে শিবুর বিচ্ছেদ হয়ে যায়। যদিও এ নিয়ে বিশদে কিছুই বলতে চাননি শিবুর বৌদি বা মা। অঞ্জু বলেন, ‘‘কোনও প্রেমঘটিত কারণ নাকি কাজ চলে যাওয়ায় হতাশা থেকে এমন হয়ে গেল শিবু, তা ঠিক জানি না।’’
দু’সপ্তাহ আগে সুমন্তর উদ্যোগে ঘর থেকে বার করা হয়েছে শিবুকে। নানা প্রলোভন দেখিয়ে অনেক বুঝিয়েসুজিয়ে তাঁকে তক্তপোষের তলা থেকে বার করা হয়। তার পর চুল-নখ কাটিয়ে পরিষ্কার-পরিছন্ন করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় নেশামুক্তি কেন্দ্রে। মা-বৌদির আশা, ফের সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে শিবু!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy