Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
উজ্জ্বল ইতিহাস

মুর্শিদাবাদে মাটির তলায় মিলল গুপ্তযুগের সম্ভার

শুভ করো, কল্যাণ করো, আরোগ্য করো, ধনসম্পদ দাও, বুদ্ধিনাশ করো শত্রুর। তুমি দীপ-জ্যোতি, তোমাকে নমস্কার করি।দেড় হাজার বছর আগে দীপটি জ্বালিয়ে এমনই প্রার্থনা কি করতেন এখনকার মুর্শিদাবাদে আহিরণের কাছে গণকরের কোনও বধূ? তাঁর কণ্ঠে থাকত মাটির পুঁতির মালা।

মৃৎপাত্রের খণ্ড। নিজস্ব চিত্র

মৃৎপাত্রের খণ্ড। নিজস্ব চিত্র

বিমান হাজরা
গণকর (আহিরণ) শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০১৬ ০৪:২৮
Share: Save:

শুভ করো, কল্যাণ করো, আরোগ্য করো, ধনসম্পদ দাও, বুদ্ধিনাশ করো শত্রুর। তুমি দীপ-জ্যোতি, তোমাকে নমস্কার করি।

দেড় হাজার বছর আগে দীপটি জ্বালিয়ে এমনই প্রার্থনা কি করতেন এখনকার মুর্শিদাবাদে আহিরণের কাছে গণকরের কোনও বধূ? তাঁর কণ্ঠে থাকত মাটির পুঁতির মালা। তাঁর ছেলে খেলত মাটির গোলক নিয়ে।

তিন বছর আগে এই গণকর থেকেই পাওয়া গিয়েছিল ‘স্বর্ণযুগে’র স্বর্ণমুদ্রা। এ বার সেই গুপ্তযুগেরই দীপ, পুঁতি, বল ছাড়াও নানা মৃৎপাত্র পাওয়া গেল। গুপ্তযুগের এই প্রদীপটির নীচে জল ধরে রাখারও বন্দোবস্ত ছিল। যাতে, প্রদীপটি ধরলে, হাতে তাত না লাগে। পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের প্রাক্তন মহা অধিকর্তা গৌতম সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘এমন প্রদীপের ব্যবহার এখনও গ্রামে রয়েছে। ভারতীয় সভ্যতায় সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যর এই প্রবাহমানতা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।’’ তাঁর কথায়, বাংলার এই অঞ্চল সম্পর্কে পুরাতাত্ত্বিক ধারণা এখনও স্পষ্ট নয়। এ বার বিস্তৃত ক্ষেত্র অনুসন্ধান দরকার।

খ্রিস্টীয় চতুর্থ, পঞ্চম শতকে গুপ্তযুগের সাংস্কৃতিক নিদর্শনগুলি ছড়িয়ে রয়েছে বড় একটি এলাকা জুড়ে। পাওয়া গিয়েছে, পাথরের চাকা ও মাটির পাত্রের হাতলও। যা থেকে বোঝা যাচ্ছে এখানে সম্পন্ন গৃহস্থদেরই বসবাস ছিল। রয়েছে অলঙ্কৃত ইটও। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন ভারতের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সুদীপা রায় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মনে হচ্ছে এখানে কয়েক শতাব্দী ধরেই মানুষ বাস করত।’’ গণকর থেকে পঞ্চাশ কিলোমিটারের মধ্যেই মুর্শিদাবাদের বড়ঞা ঢেকা বিচকান্দি থেকে পাওয়া গিয়েছে গুপ্তযুগের পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন। কর্ণসুবর্ণও তার কাছাকাছি সময়ের। তাই অনুমান করা যায়, গুপ্ত যুগে এই এলাকাটিতে একাধিক জনপদ ছিল।

মুর্শিদাবাদের গণকরে উৎখননের পর পাওয়া গুপ্তযুগের প্রদীপ

গুপ্তযুগের স্বর্ণমুদ্রাগুলি পাওয়া গিয়েছিল বছর তিনেক আগে। তার পর থেকেই পুরাতত্ত্ববিদেরা এই এলাকাটিতে আরও অনুসন্ধানের ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন। রাজ্য প্রত্ন বিভাগের উপ-অধিকর্তা বিনয় মণির নেতৃত্বে ৮ সদস্যের দল সে কারণেই এই খনন শুরু করেন। বিনয়বাবু জানান, মির্জাপুরের ‘শিয়াল কালীতলা’ ঢিবি এলাকার ১৬০০ বর্গ মিটার এলাকাকে চিহ্নিত করে খনন করেন তাঁরা। মাটির দেড় মিটার নীচে থেকে প্রায় ৩০টি প্রত্নবস্তু পাওয়া গিয়েছে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কুমারগুপ্ত, বুধগুপ্তর মতো রাজাদের প্রভাব এই সব এলাকায় ছিল।’’

তবে স্থাপত্যের অংশ এখনও কিছু পাওয়া যায়নি। বিনয়বাবু জানান, রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে এক সপ্তাহের মধ্যে। তারপর রাজ্য সরকার অনুমতি দিলে বড় এলাকা জুড়ে খননের কাজ শুরু হবে। তখন এই এলাকার নাম কি ছিল, তা-ও হয়তো জানা যাবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Gupta Era archaeologist Assets
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE