বায়ুদূষণ ঠেকাতেই বাজি নিয়ে এত লড়াই। ছবি: সংগৃহীত।
কলকাতা হাই কোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট ‘গ্রিন ক্র্যাকার’ বা সবুজ বাজি পোড়ানোয় সায় দিয়েছে। দূষণ রুখতে শুধু সবুজ বাজি পোড়ানোর আর্জি জানিয়েছে নাগরিকদের কাছে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদও। সেই আবেদন ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমাধ্যমে। কিন্তু রাজ্যে সবুজ বাজি মেলে কি? প্রশ্ন শুনেই পর্ষদের এক শীর্ষ কর্তার মন্তব্য, “সোনার পাথরবাটি যদি মেলে, তা হলে বাংলায় সবুজ বাজিও পাওয়া সম্ভব।” তাঁর বক্তব্য, শুধু পশ্চিমবঙ্গ কেন, গোটা দেশে কোথায় সবুজ বা পরিবেশবান্ধব আতশবাজি মেলে, তা নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট এবং জাতীয় পরিবেশ আদালত নির্দেশ দিয়েছে, তাই তাঁরা সবুজ বাজিতে ছাড় দিয়েছেন বলে জানাচ্ছেন ওই কর্তা।
রাজ্যে কালীপুজো ও দীপাবলিতে আদালতের নির্দেশ কতটা মেনে চলা হবে, ওই পর্ষদকর্তার বক্তব্যেই সেটা স্পষ্ট। মঙ্গলবার রাত থেকেই চলছে শব্দবাজি ফাটানো। ওই পর্ষদকর্তার সোনার পাথরবাটির রূপকের সত্যতা বাজির বাজারে ঘুরেই মালুম হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগনা, মালদহ, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়ি-সহ রাজ্যের বহু জায়গায় সাধারণ বাজির প্যাকেটে ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট বা নিরি-র লোগো এবং ভুয়ো কিউআর কোড সেঁটে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। এক সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক বুধবার উত্তর ২৪ পরগনার নীলগঞ্জ থেকে গাড়ি বোঝাই করে সবুজ তকমা সাঁটানো বাজি কিনেছেন। এবং ঘনিষ্ঠ মহলে বুক ফুলিয়ে সে-কথা জানিয়েছেন তিনি নিজেই।
বায়ুদূষণ ঠেকাতেই বাজি নিয়ে এত লড়াই। কালীপুজোর আগে সেই দূষণের ছবিটাও রাজ্যে স্বস্তিকর নয়। পর্ষদের তথ্য বলছে, মঙ্গলবার গভীর রাত থেকে বুধবার ভোর পর্যন্ত কলকাতার অন্তত তিন জায়গায় (বিটি রোড, যাদবপুর, বিধাননগর) বায়ুদূষণ সূচক ২০০-র উপরে ছিল। যা খারাপ বলেই পর্ষদের ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে। হাওড়ার ঘুসুড়ি, আসানসোল, দুর্গাপুরেও একই অবস্থা। অনেকেরই আশঙ্কা, আজ, বৃহস্পতিবার কালীপুজো এবং কাল, শুক্রবার দীপাবলির রাতে নিয়মবিধির তোয়াক্কা না-করেই দেদার বাজি পুড়বে। তাতে বাড়বে দূষণ। বর্ষা বিদায় নেওয়ায় বাতাস সহজে পরিস্রুতও হবে না।
প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, দক্ষিণ ২৪ পরগনার চম্পাহাটি, নুঙ্গি-সহ রাজ্যের বাজির আঁতুড়ঘর থেকে প্রচুর বাজি বাজারে চলে গিয়েছে। তা মানুষের হাতেও পৌঁছচ্ছে। সেগুলি পুড়বেই। মঙ্গলবার রাত থেকেই উত্তর ২৪ পরগনা, পশ্চিম মেদিনীপুর ও গ্রামীণ হাওড়ার নানা প্রান্তে বাজি ফাটার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। বুধবার সন্ধ্যার পরেই দক্ষিণ ২৪ পরগনা, শিলিগুড়ি শহরের এখানে-ওখানে বাজি ফাটতে শুরু করে। খাস কলকাতার কসবা, অজয়নগর এলাকাতেও শব্দবাজি ফেটেছে। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি, মজুতদারিতে জড়িত অভিযোগে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ৪১ জন গ্রেফতার হয়েছে। বাজেয়াপ্ত হয়েছে ৪১০ কেজি বাজি। পশ্চিম ও পূর্ব বর্ধমানে ‘ড্রোন’-এ নজরদারি চালানো হবে। পুলিশের বাজি অভিযানের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন কুলটির বিজেপি বিধায়ক অজয় পোদ্দার। পুলিশের বিরুদ্ধে অভব্য আচরণের অভিযোগ তুলে বিধায়কের নেতৃত্বে প্রায় আধ ঘণ্টা বরাকর স্টেশন রোড অবরোধ করে রাখে বিজেপি। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি (পশ্চিম) অভিষেক মোদী বলেন, “অভিযান চলছে আদালতের নির্দেশে। তাই সেটা যে বন্ধ করা
যাবে না, সে-কথা বিধায়ককে বুঝিয়েছে পুলিশ।”
পুলিশ টহল দিলেও বহরমপুর-সহ মুর্শিদাবাদ জেলার যত্রতত্র বিকিয়েছে তুবড়ি, ফুলঝুরি, চকলেট বোমা। বর্ধমান শহরের তেঁতুলতলা বাজারে রাস্তায় ঢেলে বিকিয়েছে শব্দবাজি, আতশবাজি। বীরভূম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, হুগলিতে নিষিদ্ধ বাজি বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। পুরুলিয়ায় গ্রেফতার হয়েছেন ১৩ জন। ঝাড়গ্রামে ধরা হয়েছে তিন জনকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy