যাদবপুর নিয়ে পাল্টা মিছিলে যোগ দেওয়া তৃণমূল ছাত্রনেতাদের সঙ্গে তিনি যাতে দেখা করেন, সে জন্য বারেবারে অনুরোধ এসেছিল সরকারের একেবারে শীর্ষস্তর থেকে। কিন্তু নড়ানো যায়নি রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীকে। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতারা এ দিন ঘণ্টাখানেক রাজভবনে বসে থাকলেও তাঁদের কারও সঙ্গে দেখা করেননি রাজ্যপাল। তবে প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরের অনুরোধ মেনে টিএমসিপি নেতাদের সঙ্গে রাজভবনে যাওয়া তিন পড়ুয়ার সঙ্গে মিনিট পাঁচেক কথা বলেন তিনি। এবং ওই সময়টুকু টিএমসিপি নেতাদের বসে থাকতে হয় বাইরে, অন্য ঘরে।
অথচ শনিবার এই রাজ্যপালই যাদবপুরের আন্দোলনরত ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। প্রথামতো রাজভবন থেকে সে কথা ওই ছাত্রদের আগাম জানিয়েও দেওয়া হয়েছিল।
এ দিন কী হল?
রাজভবন সূত্রের খবর, তৃণমূলের উদ্যোগে ডাকা সোমবারের মিছিল থেকে প্রতিনিধিরা রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে চান, এই মর্মে আগাম লিখিত আবেদন পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু রাজ্যপালের দফতর থেকে সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে কোনও সময় দেওয়া হয়নি।
বস্তুত, শনিবার যাদবপুরের আন্দোলনরত পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলার পরই রাজ্যপাল সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিলেন, এই বিষয়ে তিনি আর কোনও ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে কথা বলবেন না। রাজ্যপাল তাঁর সচিবালয়ের অফিসারদের জানিয়ে দেন, যাদবপুর নিয়ে যা শোনার তা সেখানকার ছাত্রছাত্রীদের মুখেই তিনি শুনেছেন। ফলে এ নিয়ে আর কোনও ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে দেখা করার দরকার নেই।
উপরন্তু রবিবার সন্ধেয় রাজ্যপাল নিজেই শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ডেকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, উপাচার্য ও পড়ুয়াদের মধ্যেকার সমস্যায় শাসক দল ও সরকার নাক না-গলিয়ে নিরপেক্ষ ভূমিকা নিলেই ভাল হয়। সুতরাং তার পরে এ দিন শাসক দলের ছত্রচ্ছায়ায় আয়োজিত পাল্টা মিছিল থেকে আসা প্রতিনিধিদের সঙ্গে তিনি স্বাভাবিক ভাবেই আর দেখা করার তাগিদ অনুভব করেননি বলে রাজভবন সূত্রের খবর।
তবুও এ দিন মিছিল করে মেয়ো রোডে এসে কার্যত মুখরক্ষার তাড়নায় রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার কথা ঘোষণা করে বসেন টিএমসিপি-র সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা। কিন্তু তখনও পর্যন্ত রাজভবনের সায় মেলেনি। এই অবস্থায় মরিয়া শঙ্কু ফোন করেন রাজ্যপালের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন সরকারের এমন এক মন্ত্রীকে। সরকারের উপরমহলের অন্যরাও নড়েচড়ে বসেন। শুরু হয় অনুনয়-বিনয়। রাজ্যপাল কিন্তু কোনও ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে দেখা না-করার সিদ্ধান্তে অনড়ই থাকেন।
পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে এর পরে অনুরোধ শুরু হয়, রাজ্যপাল যাতে মিছিলে যাওয়া যাদবপুরের ছাত্র প্রতিনিধিদের সঙ্গে অন্তত দেখা করেন। তার উত্তরে কেশরীনাথ সরকারি লোকেদের জানিয়ে দেন, ‘ঠিক আছে, যাদবপুরের ছাত্র কেউ থাকলে তিনি আসতে পারেন। তবে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নামে কোনও স্মারকলিপি দেওয়া যাবে না।’
রাজভবনের তরফে এটুকু আশ্বাস পেয়েই শঙ্কুদেবরা বিকেল তিনটে নাগাদ মেয়ো রোড থেকে রওনা দেন। শঙ্কুদের দাবি, তাঁদের প্রতিনিধি দলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা ছিলেন। যদিও এ ব্যাপারে বেশি মুখ খুলতে চাননি তিনি। রাজভবনে যাওয়ার আগে শঙ্কুদেব মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলে যান, ‘‘আমরা রাজ্যপালের কাছে যাচ্ছি। তাঁর কাছ থেকে কোনও আশাব্যঞ্জক উত্তর যদি না পাই, তা হলে রাত গড়াবে, দিন গড়াবে। কিন্তু আমরা এখান থেকে উঠব না। যাদবপুরে সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে দেওয়ার আশ্বাস রাজ্যপালকে দিতে হবে। উত্তর না-পেলে আমরা এখান থেকে উঠব না।”
রাজভবনে পৌঁছনোর পরে শঙ্কুদের প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। তত ক্ষণে রাজ্যপালের কাছে খবর গিয়েছে, ছাত্রদের সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন তৃণমূলের ছাত্র নেতারা। রাজ্যপাল তখন অফিসারদের সামনেই এ নিয়ে বেশ অসন্তোষ প্রকাশ করেন। পরে শঙ্কুদেবদের সঙ্গে যাওয়া তিন ছাত্রকে ডেকে নেন রাজ্যপাল। শঙ্কুদের বাইরে বসিয়ে রাখা হয়। বিকেল তখন প্রায় চারটে।
এর মিনিট পাঁচেক পরেই রাজভবন থেকে বেরিয়ে আসেন শঙ্কুরা। সেখান থেকে সোজা মেয়ো রোডের সমাবেশে। রাজ্যপালের তরফে ওই রকম শীতল আপ্যায়নের পরে বিষয়টি নিয়ে বিশেষ কথা বলতে চাননি তিনি। তাই মেয়ো রোডের অবস্থান থেকে রাজভবনে যাওয়া এবং ঘণ্টাখানেক বাদে সেখান থেকে বেরনোর পরে শঙ্কুদেব স্পষ্ট বলেননি, রাজ্যপালের কাছে তাঁদের দাবি কী ছিল এবং রাজ্যপাল কী আশ্বাস দিয়েছেন। এমনকী এ-ও বলেননি, তাঁদের সঙ্গে যাদবপুরের কত জন ছাত্রছাত্রী রাজভবনে গিয়েছিলেন, বা তাঁদের নাম কী। শঙ্কুর দাবি, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সদস্যরা (সিআর) তাঁদের সঙ্গে রাজ্যপালের কাছে গিয়েছিলেন।
আর রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ? শঙ্কুর উত্তর, “আমাদের কাছে রাজ্যপালের দফতরের রিসিভ করা চিঠির কপি আছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy