Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
CV Anand Bose

বিজেপি-তৃণমূলের মাঝে কোন পথ নেবে রাজভবন? তিন শব্দ এবং এক সংখ্যায় রহস্য বাড়ালেন আনন্দ

ব্রাত্য বসুর সঙ্গে বৈঠকের শেষে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে ছিলেন রাজ্যপাল আনন্দ বোস। কথা খুব কমই বলেছেন। তবে তার মধ্যেই কিছু শব্দের ব্যবহার নতুন জল্পনা তৈরি করে রাখল।

image Governor CV Anand Bose

কোন পথে হাঁটবেন? ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:৫২
Share: Save:

একটা সময় পর্যন্ত রাজ্য বিজেপির অভিযোগ ছিল রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস তৃণমূলের পক্ষ নিয়ে কথা বলছেন! স্বয়ং বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কথাতেই তেমন ইঙ্গিত মিলেছিল। সেন্ট জ়েভিয়ার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডি’লিট প্রদান অনুষ্ঠানে রাজ্যপালের মুখে মুখ্যমন্ত্রীর স্তুতি শুনে টুইটারে শুভেন্দু লিখেছিলেন, ‘‘রাজ্যপালের ভাষণ শুনে মনে হচ্ছিল, যেন উনি রাজ্য বিধানসভায় বাজেট অধিবেশন শুরুর আগে যে ঔপচারিক বক্তৃতা দেবেন, তারই মহড়া দিলেন।’’

তৃণমূলের মুখপত্রে সেই রাজ্যপালকেই ‘বিজেপির ক্যাডার’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শাসক শিবিরের মুখপাত্র থেকে বিধায়করা আনন্দ বোসকে ‘বিজেপির রাজ্যপাল’ বলে সরাসরি কটাক্ষ করছেন। দিনহাটায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকের উপর ‘হামলা’র ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্যপালের বিবৃতি নিয়ে ঘোরতর অসন্তুষ্ট তৃণমূল। সরাসরিই রাজ্যপালকে আক্রমণ করেছেন দলের নেতা তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ।

এই পরিস্থিতিতে তাঁর পথ কেমন হবে? মঙ্গলবার রাজভবনে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর সঙ্গে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে প্রশ্নের জবাবে তিনটি ইংরেজি শব্দ উচ্চারণ করেছেন আনন্দ। নিশীথের গাড়িতে হামলার পরে বিজেপি বাংলায় যে ৩৫৫ ধারা জারির দাবি তুলেছে, তা নিয়েই বা তাঁর অভিমত কী? উত্তরে রাজ্যপাল নতুন একটি সংখ্যার উল্লেখ করেছেন।

মঙ্গলবার রাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে সমস্যার সমাধানে রাজভবনে গিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য। ঘণ্টা দু’য়েক বৈঠকের পরে রাজ্যপালকে নিয়ে তিনি যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সেখানে ব্রাত্য বলেন, ‘‘আমি বলছি অতীতের পুনরাবৃত্তি হবে না। সম্ভাবনা নেই। রাজ্যপাল রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। আর স্যর (রাজ্যপাল) জানেন, ইলেক্টেড হেড অফ দ্য স্টেট হলেন মুখ্যমন্ত্রী।’’ অর্থাৎ, রাজ্যপাল জানেন, মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের নির্বাচিত প্রধান।

রাজ্যপাল নিজে কী বললেন? প্রশ্ন করা হয়েছিল বর্তমান সরকারের সঙ্গে রাজ্য পরিচালনা নিয়ে তিনি কোন পথে চলবেন। জবাবে আনন্দ তিনটি ইংরেজি শব্দবন্ধ ব্যবহার করেছেন। ‘চেকস অ্যান্ড ব্যালান্সেস’, ‘মিড কোর্স কারেকশন’ এবং ‘ইমপ্রুভমেন্ট’। তিনি বলেন, ‘‘দেয়ার শুড বি কনস্ট্রাকটিভ কো-অপারেশন। দেয়ার উইল বি চেকস অ্যান্ড ব্যালান্সেস, মিড কোর্স কারেকশন অ্যান্ড ইমপ্রুভমেন্ট।’’ অর্থাৎ, রাজ্যপালের মতে, সরকার চলবে গঠনমূলক সহযোগিতার ভিত্তিতে। তার মধ্যে কিছু টান থাকবে। কিছু ঢিল থাকবে। দু’য়েরই একটা ভারসাম্য থাকবে। মধ্যে মধ্যে সংশোধনও হবে। এবং সেই পদ্ধতিতে উন্নতি হবে।

রাজ্যপাল যা বলেছেন, তা একেবারেই কেতাবি ভাষা। তবে অনেকের মতে, এর থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার যে, আনন্দ ভারসাম্য রেখেই চলতে চান। তবে পাশাপাশি তিনি নজরদারির কথাও বলেছেন। রবিবারেই রাজভবনের বিবৃতিতে বলা ছিল, কোনও কিছু দেখে রাজভবন নির্বাক দর্শক হয়ে থাকবে না। অর্থাৎ, ‘চেক্‌স অ্যান্ড ব্যালান্সেস’ থাকবে। পাশাপাশিই তিনি বলেছেন, তাঁর কাছে রাজ্যপাল ও সরকারের অর্থাৎ রাজভবন ও নবান্নের ‘আদর্শ’ সম্পর্ক কেমন, তার জবাবেই আনন্দ বলেছেন ‘গঠনমূলক সহযোগিতা’-র কথা। এই বক্তব্যও কেতাবি এবং রাজনৈতিক দিক দিয়ে ‘ঠিকঠাক’।

মঙ্গলবার সাংবাদিক বৈঠকের একেবারে শেষে রাজ্যপালের কাছে প্রশ্ন গিয়েছিল শুভেন্দু তথা বিজেপির তরফে রাজ্যে সংবিধানের ৩৫৫ ধারা জারির দাবি প্রসঙ্গে। রাজ্যে কি ৩৫৫ ধারা জারির মতো পরিস্থিতি রয়েছে? উত্তরে রাজ্যপালের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘‘ওয়ান স্টেপ অ্যাহেড অফ থ্রি-ফিফ্‌টি-ফোর।’’ অর্থাৎ, ৩৫৪-র থেকে এক কদম এগিয়ে। এই মন্তব্যের অর্থ নিয়েও জল্পনা তৈরি হয়েছে। অনেকে বলছেন, রাজ্যপাল বলতে চেয়েছেন রাজ্যে ৩৫৫ ধারা জারির কাছাকাছি পরিস্থিতি রয়েছে। আবার অন্য একাংশের মতে, রাজ্যপাল বলতে চেয়েছেন সংখ্যাতত্ত্বে ৩৫৫ হল ৩৫৪-র পরের একটা সংখ্যা। রাজ্যপালকে অবশ্য এ সব প্রশ্ন করার অবকাশ পাওয়া যায়নি। ততক্ষণে সাংবাদিক বৈঠক শেষ হয়ে গিয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

CV Ananda Bose Nabanna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy