Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

আশঙ্কা বাড়িয়ে মাওবাদী পোস্টার বারিকুলে

বেলপাহাড়ির পরে বারিকুল। কিষেণজিকে ‘হত্যার প্রতিবাদে’ ফের মাওবাদী পোস্টার মিলল জঙ্গলমহলে। বেলপাহাড়িতে ছিল তাড়াহুড়োর ছাপ। বারিকুলের ক্ষেত্রে মাওবাদীদের প্রস্তুতি ও স্থানীয়দের সমর্থনের ছাপ বেশ স্পষ্ট। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার মাওবাদী শীর্ষনেতা কিষেণজিকে ‘হত্যা’ করেছে বলে সপ্তাহখানেক আগে বেলপাহাড়ির এক সভায় মন্তব্য করেছিলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

বারিকুল থানার শুশুনিয়া গ্রামে মাওবাদীদের পোস্টার। ছবি: উমাকান্ত ধর।

বারিকুল থানার শুশুনিয়া গ্রামে মাওবাদীদের পোস্টার। ছবি: উমাকান্ত ধর।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বারিকুল শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৫ ০৩:০৬
Share: Save:

বেলপাহাড়ির পরে বারিকুল। কিষেণজিকে ‘হত্যার প্রতিবাদে’ ফের মাওবাদী পোস্টার মিলল জঙ্গলমহলে। বেলপাহাড়িতে ছিল তাড়াহুড়োর ছাপ। বারিকুলের ক্ষেত্রে মাওবাদীদের প্রস্তুতি ও স্থানীয়দের সমর্থনের ছাপ বেশ স্পষ্ট।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার মাওবাদী শীর্ষনেতা কিষেণজিকে ‘হত্যা’ করেছে বলে সপ্তাহখানেক আগে বেলপাহাড়ির এক সভায় মন্তব্য করেছিলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যা নিয়ে জোর রাজনৈতিক তরজা চলেছে গত ক’দিন। কিন্তু সে দিনের ওই সভার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সভাস্থল থেকে ১২-১৫ কিলোমিটার দূরে কয়েকটি গ্রামের রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল মাওবাদীদের পোস্টার। সাদা কাগজে আলতা দিয়ে তড়িঘড়ি লেখা। রবিবার সকালে দেখা যায় বারিকুলের বিভিন্ন গ্রামের দেওয়ালে, গাছে সাঁটা রয়েছে পোস্টার। রয়েছে কিছু ব্যানারও। তার চেয়েও যেটি লক্ষ্যণীয়, পোস্টার সাঁটা হয়েছে বাঁকুড়ার বারিকুল থানা, মন্ডলডিহা ফাঁড়ির পাশেই। এ ছাড়াও পোস্টার পাওয়া গিয়েছে শুশুনিয়া, রসপাল, ভেলাবাঁধি, সুতান, মাজগেড়িয়া, ঝিলিমিলি-সহ কয়েকটি গ্রামে। পোস্টারগুলি সিপিআই-মাওবাদীর নামে লেখা। বক্তব্য, ‘কিষেণজি অমর রহে’ এবং ‘কিষেণজিকে হত্যার প্রতিবাদে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন’।

শুশুনিয়া গ্রামের চৌরাস্তার পাশে একটি গাছে জড়ানো লাল শালুর উপর সাদা কালিতে লেখা পোস্টারে আবার ডাক দেওয়া হয়েছে, ‘২৮ জুলাই থেকে ৩ অগস্ট ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে শহিদ সপ্তাহ পালন করুন’। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পোস্টারগুলি ছিঁড়ে ফেলে। পশ্চিম মেদিনীপুরে বেলপাহাড়ির শিমুলপাল এলাকার গ্রামগুলিতে যে সব পোস্টার মিলেছিল, তাতেও শহিদ সপ্তাহ পালনের ডাক দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি, কিষেণজিকে ‘ভুয়ো সংঘর্ষে হত্যা’ করার অভিযোগ তোলা হয়েছিল।

কিছু দিন ধরেই কেন্দ্রীয় ও রাজ্যের গোয়েন্দা-কর্তারা বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে ফের মাওবাদী তৎপরতা শুরু হয়েছে। পোস্টারে শুধু নয়, মাওবাদীদের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় স্থানীয় সমস্যায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, আড়ালে থেকে তাঁদের সংগঠিত করার মতো ঘটনায়। সাম্প্রতিক তেমন কিছু ঘটনা গোয়েন্দাদের নজরে এসেছে এ রাজ্যে। সাধারণ ভাবে মাওবাদী সংগঠনের সদস্যরা স্থানীয় ভাবে কাজ করলেও দায়িত্বে থাকেন কোনও পলিটব্যুরো স্তরের নেতা বা নেত্রী। এক সময় যেমন ছিলেন কিষেণজি। রাজ্য পুলিশকে যেটা ভাবাচ্ছে তা হল, এতগুলি গ্রামে এক রাতে পোস্টার দিতে গেলে স্থানীয় স্তরে সমর্থনের প্রয়োজন হয়। সেটা চিন্তার। তার চেয়েও বড় প্রশ্ন, এ সবের ছক কষে দিচ্ছেন কে? সে ব্যাপারে এখনও অন্ধকারে পুলিশ।

প্রাক-লালগড় আন্দোলন পর্বে জঙ্গলমহলের যে-সব জায়গা মাওবাদী নাশকতার মানচিত্রে উপরের দিকে ছিল, বারিকুল তার অন্যতম। ২০০৬ সালে মাওবাদীদের ‘বুবি ট্র্যাপ’ বুঝতে না পেরে বারিকুল থানার ওসি প্রবাল সেনগুপ্ত বিস্ফোরণে নিহত হন। ২০০৫ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে বারিকুল থানা এলাকায় খুন হন সিপিএমের এক ডজনেরও বেশি নেতা কর্মী ও তাঁদের আত্মীয়। খুন হয়েছেন পুলিশকর্মীও। তাই বিধানসভা ভোটের বছরখানেক আগে বারিকুলে এই পোস্টার-ব্যানার উদ্ধারকে তাই হাল্কা ভাবে নিচ্ছে না পুলিশ-প্রশাসন ও শাসক দলের একাংশ। বারিকুলের এক-দু’টি পোস্টার সাঁটা হয়েছে তৃণমূলের দেওয়াল লিখন ও তাদের প্রতীক চিহ্নের উপরে। রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘বারিকুলের ওই তল্লাটে মাওবাদীদের প্রতি সহানুভূতিশীলরাই ওই পোস্টার দিয়েছে। বাইরে থেকে এসে কারও পক্ষে এমনটা করা সম্ভব নয়। তারা কারা, সেটা চিহ্নিত করাই এখন চ্যালেঞ্জ।’’

বাঁকুড়ার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার অনুপ জায়সবালের মোবাইলে এ দিন দুপুরে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। তবে, জেলা গোয়েন্দা দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতেই মাওবাদীদের লিঙ্কম্যানরা এই কাজ করে থাকতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগের।’’ ২০১১ সালে রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। বাঁকুড়ার জঙ্গলমহলে গত চার বছরে কেউ খুন হননি। মাওবাদীদের পোস্টার, ব্যানারও দেখা যায়নি। কিন্তু, এ দিনের ঘটনায় জঙ্গলমহলের এক তৃণমূল নেতার স্বীকারোক্তি, “শনিবার রাতে যে ভাবে একযোগে এতগুলি পোস্টার-ব্যানার সাঁটা হয়েছে তাতে স্পষ্ট, গ্রামে গ্রামে নতুন করে সংগঠন গড়ছে মাওবাদীরা। এটাই চিন্তার।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE