প্রতীকী ছবি।
কেন্দ্রীয় শাসক দলের নেতা হোন বা রাজ্যের নেতা-মন্ত্রী, তাঁদের অনেকেই এখন কমান্ডো বাহিনীর ঘেরাটোপে। রক্ষীদের কারও হাতে ইজ়রায়েলি অ্যাসল্ট রাইফেল তো কারও কোমরে গোঁজা পিস্তল। তৃণমূল বা বিজেপি যে দলেরই হোন, এটা যেন এখন ওজনদার ‘জননেতাদের’ চিনে নেওয়ার সহজ উপায়। নেতাদের নিরাপত্তায় খরচ হচ্ছে বিপুল পরিমাণ টাকাও। রাজ্য এবং কেন্দ্র, দুই সরকারের ক্ষেত্রেই এটা ঘটনা। তবে রাজ্যের তালিকা দীর্ঘ হওয়ায় খরচও অনেক গুণ বেশি।
সম্প্রতি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যেতে চাওয়া এক নেতা নির্দিষ্ট ‘স্কেলের’ নিরাপত্তার শর্ত রেখেছেন। আবার তৃণমূলের এক যুব নেতার জেলা সফরে অন্তত ২০০০ পুলিশ মোতায়েন করতে হচ্ছে রাজ্যকে। কলকাতা থেকে গন্তব্য পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে দাঁড়িয়ে থাকছে পুলিশ। কালভার্ট-সেতুও পাহারা দিচ্ছেন তাঁরা। যা কেবল মুখ্যমন্ত্রীর তুল্য পদাধিকারীর প্রাপ্য।
নবান্নের খবর, নিরাপত্তা নিয়ে ‘জাতে ওঠার’ প্রতিযোগিতার জেরে এখন রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের প্রায় ২৫০ নেতা-নেত্রীকে ‘স্টেট প্রোটেক্টি’ ঘোষণা করেছে সিকিওরিটি ডিরেক্টরেট। এর বাইরে আরও শ’খানেক মাঝারি-ছোট নেতা আছেন, যাঁরা ‘ম্যানেজ’ করে এক-দু’জন দেহরক্ষী নিয়ে ঘোরেন বলে নিরাপত্তা কর্তাদের একাংশ দাবি করেছেন।
দিল্লির শাসক বিজেপিরও ২০ জন নেতা-নেত্রীকে বিরাট মাপের নিরাপত্তা নিয়ে ঘুরতে দেখা যাচ্ছে। এঁদের নিরাপত্তা দিতে চেয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক নবান্নে সুপারিশ করেছিল। যা মানেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে বিজেপি নেতাদের সিআরপি বা সিআইএসএফের নিরাপত্তারক্ষী বরাদ্দ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। রাজ্যের মধ্যেই এমন কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে ঘুরে বেড়ানো নেতা-নেত্রী আগে কখনও দেখেনি বাংলা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানাচ্ছে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে জ়েড ক্যাটিগরি নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে। দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিংহ, মুকুল রায়, অর্জুন সিংহ, নিশীথ প্রামাণিক, ভারতী ঘোষ, সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া, সৌমিত্র খান-দের দেওয়া হয়েছে ওয়াই ক্যাটিগরি নিরাপত্তা। এঁদের উপরে অবশ্য হামলার ঘটনাও ঘটেছে। এ ছাড়া বিজেপির বাকি ১২ জন নেতা পান এক্স ক্যাটিগরি নিরাপত্তা।
ভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুন সিংহ ছিলেন রাজ্যের জ়েড ক্যাটিগরির নিরাপত্তা প্রাপক। কিন্তু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার দিনই তাঁর নিরাপত্তা তুলে নিয়েছিল রাজ্য। আবার এমনও অনেককে এখন কেন্দ্র নিরাপত্তা দিয়েছে, যাঁরা রাজ্যের বিচারে নিরাপত্তা পাওয়ার ‘যোগ্যই’ নন। যেমন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়া মুকুল ঘনিষ্ঠ শঙ্কুদেব পণ্ডা।
নবান্নের সিকিওরিটি ডিরেক্টরেটের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘রাজ্য নিরাপত্তা পর্যালোচনা কমিটির বৈঠকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নিরাপত্তা বাড়ানো বা কমানোর সিদ্ধান্ত হয়। শুধুমাত্র ঝুঁকির কথা ভেবেই নিরাপত্তা দেওয়া হয়। রাজনৈতিক রং দেখা হয় না।’’ রাজ্য নিরাপত্তা পর্যালোচনা কমিটির এক সদস্য বলেন,‘‘বিজেপি নেতাদের জন্য সিআইএসএফ বা কেন্দ্রীয় শিল্প নিরাপত্তা বাহিনীর জওয়ান মোতায়েন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। দিল্লি নিরাপত্তা দিচ্ছে বলেই আমরা নিরাপত্তা তুলে নিয়েছি।’’
তবে শুধু বিজেপি নেতাদের নয়, গত ১ মার্চ নবান্নে নিরাপত্তা পর্যালোচনা কমিটির বৈঠকে অনুব্রত মণ্ডলের ছায়াসঙ্গী তথা তৃণমূল নেতা অভিজিৎ সিংহ (রানা) এবং যুব তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক বিনয় মিশ্রকে ওয়াই ক্যাটিগরির নিরাপত্তা দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিনিধি হয়ে বিনয় বাঁকুড়া-পুরুলিয়া যাতায়াত করেন বলে তৃণমূলেরই একাংশের দাবি। তাঁদের দু’জনকেই ‘স্টেট প্রোটেক্টি লিস্ট’-এ নথিভুক্ত করার প্রস্তাব রাজ্য নিরাপত্তা পর্যালোচনা কমিটি খারিজ করে দিয়েছে। উভয়ের ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে, যদি মনে করে, জেলা পুলিশ তাঁদের নিরাপত্তা দিতে পারে।
সাগরের কপিল মুনি আশ্রমের মহন্ত জ্ঞানদাসকে জ়েড ক্যাটিগরির নিরাপত্তা দিয়েছে রাজ্য। নমঃশূদ্র ওয়েলফেয়ার বোর্ডের কর্তা মুকুল বৈরাগ্য পেয়েছেন ওয়াই ক্যাটিগরির নিরাপত্তা। মন্ত্রী নির্মল মাজি, সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং তৃণমূল নেত্রী মৌসম নুরের নিরাপত্তা এক্স থেকে বেড়ে হয়েছে ওয়াই ক্যাটিগরি।
নিরাপত্তা পর্যালোচনা কমিটি সূত্রের খবর, ২০১৮-তে রাজ্যে ‘সরকারি ভিআইপি’ ছিলেন ২৩২ জন। ২০১৯-এ সংখ্যাটা ২৪৫। বাম আমলে এই তালিকায় ছিলেন শ’খানেকের কিছু বেশি ব্যক্তি। যাঁদের অধিকাংশই মন্ত্রী, কনসাল জেনারেল, বিচারপতি, সিনিয়র আমলা এবং মাওবাদী এলাকার জনপ্রতিনিধি। স্বরাষ্ট্র কর্তারা জানাচ্ছেন, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে রাজ্যের এক জন ভিআইপি’র নিরাপত্তা দিতে গড়ে খরচ হত ৮ লক্ষ ৯৪ হাজার টাকা। এ বছর তা বেড়ে হয়েছে ৯ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকা। স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর, ভিআইপি-দের নিরাপত্তা খাতে ২০১৮-তে সব মিলিয়ে রাজ্যের খরচ ছিল ২০ কোটি ৭৩ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা। ২০১৯ সালে তা-ই হয়েছে ২৩ কোটি ৮৬ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা।
এ বার ২০১৮-এর তালিকা থেকে ১২ জনের নাম বাদ গিয়েছে, নতুন ১৫ জনের নাম যুক্ত হয়েছে এবং ৫ জনের নিরাপত্তার অদলবদল হয়েছে। নতুন জ়েড ক্যাটিগরি পেয়েছেন চার মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, স্বপন দেবনাথ, রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ও সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী। বিধায়ক সওকত মোল্লার নিরাপত্তাও বেড়েছে। আর বেশ কয়েকটি জেলার যুব তৃণমূলের সভাপতিরা পেয়েছেন পুলিশি নিরাপত্তা। তবে জ়েড প্লাস হিসেবে এ বারও রয়েছেন কেবলমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। জ়েড প্লাস সাধারণত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদেরই প্রাপ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy