প্রণব মুখোপাধ্যায়
তিনি সরকারি কর্মী। কন্যাশ্রী প্রকল্পের আধিকারিক। ‘আসি যাই মাইনে পাই, কাজ করলে ওভারটাইম চাই’-প্রচলিত এই ধারনার বাইরে বেরিয়ে কাজ করেন হাসনাবাদ ব্লকের কন্যাশ্রী প্রকল্পের ‘ডেটা ম্যানেজার’ প্রণব মুখোপাধ্যায়। কোনও নাবালিকার বিয়ে দেওয়া হচ্ছে, এ খবর পেলেই ছুটে যান। কখনও জোটে অপমান। কখনও গলাধাক্কা। তবু নাবালিকা ও তার পরিবারকে কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধা বোঝাতে পিছপা হন না প্রণব। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেলে সাফল্য। প্রকল্পের সুবিধা পেয়ে নাবালিকা ফের স্কুলে গেলেই শান্তি পান তিনি। ভোলেন সব অপমান।
প্রণব শোনাচ্ছিলেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। চিমটার কাছারি এলাকার বাসিন্দা বছর ষোলোর মেয়েটি তখন দশম শ্রেণির ছাত্রী। প্রণবের কাছে খবর আসে সে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করেছে। তার বাড়ির লোক বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। প্রণবের কথায়, ‘‘ওই মেয়েটির বাড়িতে গেলে সেখানকার মানুষ আমার উপর চড়াও হয়। মারতে আসে। ভয়ে, আতঙ্কে দৌড়ে পালাই। পরে প্রশাসনের সহযোগিতায় ফিরে গিয়ে কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর সুবিধার কথা বোঝাই। সব শুনে সাবালিকা না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার।’’ সে দিনের সেই মেয়েটি এখন দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। কন্যাশ্রীর আর্থিক সুবিধা পেয়ে খুশি সে। তার কথায়, ‘‘সে দিন যদি হাসনাবাদ ব্লক অফিসের কন্যাশ্রী প্রকল্পের আধিকারিক বাড়িতে এসে বিয়ে না আটকাতেন, তা হলে বড় ক্ষতি হয়ে যেত। আমি পড়াশোনা করে শিক্ষিকা হয়ে গ্রামের গরিব পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চাই। তাদের বলতে চাই, মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দেবেন না।’’ প্রণবের সহকর্মীরা জানান, নাবালিকা বিয়ের খবর পেলে নিজেকে সামলে রাখতে পারেন না হাসনাবাদ ব্লকের প্রকল্পের এই ‘ডেটা ম্যানেজার’। কন্যাশ্রী প্রকল্পের সুবিধা ওই পরিবার পর্যন্ত পৌঁছে দিতে না পারলে তাঁর শান্তি নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রশাসনের সহায়তায় কাজ উদ্ধার হয়। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থারও সাহায্য নেন প্রণব।
ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, প্রণবের উৎসাহ ও সক্রিয়তায় গত আড়াই বছরে হাসনাবাদ ব্লকে ১০৭ জন নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। হাসনাবাদ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি এসকেন্দার গাজি বলেন, ‘‘হাসনাবাদে কন্যাশ্রী প্রকল্পের আধিকারিকেরা সরকারের প্রকল্পকে সাফল্য দিয়েছে। আমরাও এখন গ্রামে মাইকিং ও লিফলেট বিলি করে এই প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধার কথা তুলে ধরছি।’’
মাইকিং হচ্ছে। লিফলেট বিলি হচ্ছে। পাশাপাশি চলছে, নাবালিকা বিয়েও। তবে এ সবের মাঝে দাঁড়িয়ে রয়েছেন প্রণবের মতো কিছু কাজ পাগল সরকারি কর্মী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy