Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

চুক্তি মানা হচ্ছে না, মন্ত্রীকে দাবি মোর্চার

গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) চুক্তি ঠিক মতো মানা হচ্ছে না বলে কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানালেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতারা। শনিবার রাতে শিলিগুড়ির একটি হোটেলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন মোর্চার আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৫ ০৩:৫৫
Share: Save:

গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) চুক্তি ঠিক মতো মানা হচ্ছে না বলে কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানালেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতারা। শনিবার রাতে শিলিগুড়ির একটি হোটেলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন মোর্চার আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। দলের সাধারণ সম্পাদক তথা জিটিএ সদস্য রোশন গিরির নেতৃত্বে দলটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর হাতে দু’টি দাবিপত্র তুলে দেয়। এর মধ্যে একটি মোর্চার তরফে চা পাহাড়ের চা বাগিচার উন্নয়ন সংক্রান্ত দাবিপত্র রয়েছে। তাতেই জিটিএ চুক্তি অনুসারে পাহাড়ের জন্য আলাদা চা নিলাম কেন্দ্র এখনই তৈরি করা হয়নি বলে জানানো হয়। তেমনিই চুক্তির পর পাঁচ বছর হতে চললেও শ্রম দফতরও জিটিএ-কে হস্তান্তর করা হয়নি বলে মোচার্র তরফে অভিযোগ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, চা নিলাম কেন্দ্র তৈরির বিষয়টি টি বোর্ডের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের বিষয়, তেমনিই শ্রম দফতর হস্তান্তর রাজ্য সরকারের এক্তিয়ারভুক্ত। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কাছে বিভিন্ন দাবির সঙ্গেই এই দুটি বিষয়ও সামনে মোর্চা নেতারা পাহাড়ে জিটিএ চালাতে গিয়ে তাঁদের কী অবস্থার মধ্যে পড়তে হচ্ছে তা প্রকাশ্যে আনতে চেয়েছেন বলেই মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা অনেকেই জানিয়েছেন। তাঁরা জানান, শুধু রাজ্য সরকার নয়, কেন্দ্রীয় সরকারও অনেক ক্ষেত্রেই জিটিএ দিকে ঠিকঠাক নজর যে দিচ্ছে না তা এর থেকে বোঝাই যাচ্ছে। চলতি মাসেই শিলিগুড়ি এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পাহাড়ের জন্য কেন্দ্র বরাদ্দ দিচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেছিলেন।

মোচার্র সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, ‘‘পাহাড়ের চা বাগিচা এবং তার শ্রমিক কর্মীদের বর্তমান অবস্থার কথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। জিটিএ চুক্তি অনুসারে চা নিলাম কেন্দ্র এখনও তৈরি হয়নি। চুক্তি মাফিক শ্রম দফতর হস্তান্তর হয়নি। উত্তরবঙ্গের বন্ধ বাগান খোলার কথা জানিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি।’’

শনিবার রাতে মাটিগাড়ার একটি হোটেলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সফরকে ঘিরে নৈশভোজের আয়োজন করেন দার্জিলিঙের সাংসদ সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। সেখানেই সাংসদের ২৫ বছর সংসদীয় রাজনীতির পূর্তি উপলক্ষ্যে একটি অনুষ্ঠানও হয়। রাতে মোর্চা নেতারা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। মোর্চার তরফে চা বাগান কেন্দ্রীক বিভিন্ন দাবি মন্ত্রীকে জানানো হয়। সেই সঙ্গে জিটিএ তরফে আরেকটি দাবিপত্র দিয়ে পাহাড়ের উন্নয়নের জন্য চা গবেষণা কেন্দ্র, রাস্তা, সেতু, জলবিদ্যুত প্রকল্প, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ ভিত্তিক কমপ্লেক্স, আইটিআই-সহ একাধিক প্রকল্প গড়ে তুলতে ৬০০ একর জমির প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা তথা দার্জিলিঙের সাংসদ বলেন, ‘‘মোর্চা নেতারা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সঙ্গে দেখা করে নানা দাবিদাওয়ার কথা বলেছেন। মন্ত্রী সবই মন দিয়ে শুনেছেন। এরমধ্যে পাহাড়ের চা নিলাম কেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিষয়গুলি দেখবেন বলে জানিয়েছেন।’’ আর রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব শুধু বলেছেন, ‘‘দফতর হস্তান্তর পুরোটাই প্রক্রিয়াগত বিষয়। আর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক মাঝেমধ্যেই হচ্ছে। সেখানে ফের আলোচনা হবে।’’

মোর্চা নেতার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কাছে দেখা করে সবচেয়ে বেশি যে দাবি দাবির কথা তুলছেন তা হল চা বাগানের নূন্যতম মজুরি চুক্তির কথা। ইতিমধ্যে বাগান শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথমঞ্চ ওই দাবি তুলেছেন। রাজ্য সরকার তা ঠিক করা হবে মেনে নিয়েই এ বছর মজুরি চুক্তি করেছে। যৌথ মঞ্চের মধ্যে মোর্চার শ্রমিক সংগঠনও রয়েছে। রোশন গিরি জানান, বর্তমান পরিস্থিতি, বাজার দর সব মিলিয়ে যা অবস্থায় তাতে শ্রমিকদের কম করে দিনে ৩২২ টা মজুরি হওয়া প্রয়োজন। সেই সঙ্গে বাগানের অন্য কর্মীদেরও মজুরির পর্যালোচনা দরকার। কেন্দ্রীয় সরকার এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। এ ছাড়া জমির পাট্টা যথাযথ আবাসন, জ্বালানি, রেশন, পোশাক, স্বাস্থ্যের ব্যবস্থা করার কথাও বলা হয়েছে।

মোর্চা নেতারা জানিয়েছেন, রাজ্যের চা বাগিচা শিল্প মূলত উত্তরবঙ্গকে ঘিরেই। আর দার্জিলিং চা বিশ্ববিখ্যাত। তাই এই শিল্পের সমস্যা, সম্ভাবনা-সহ নানা বিষয় দেখভাল করতে শৈলশহর এবং ডুয়ার্সে টি বোর্ডের একটি দফতর প্রয়োজন। দীর্ঘদিনের এই দাবি এখনও কেন্দ্রীয় সরকার দেখেনি। আরও দরকার পাহাড়ের জন্য একটি প্রভিডেন্ট ফ্যান্ড দফতর। চা বাগিচা শ্রমিকেরা শিলিগুড়ি সব সময় গিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে সমস্যার তো পড়েনই, তাঁদের ভাষাগত সমস্যাও হয়। দলের সভাপতি তথা জিটিএ চিফ বিমল গুরুঙ্গের সঙ্গে আলোচনা করেই বিষয়গুলি কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে জানানো হয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE